Breaking News

চাণক্য কাহিনী


ইতিহাসে যে কজন প্রাচীন পণ্ডিত অমর হয়ে আছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন চাণক্য। এই উপমহাদেশ তো বটেই সারা বিশ্বে তাকে অন্যতম প্রাচীন এবং বাস্তববাদী পণ্ডিত মনে করা হয়। মহাকবি কালিদাস যুগেরও অনেক আগে আবির্ভূত এই পণ্ডিত তার সময়ে থেকেই ভবিষ্যৎ দেখতে পেরেছিলেন। লিখে গেছেন অমর সব তত্ত্বগাথা।
চাণক্যের ভালো থাকার সূত্র
সার্বিক প্রয়োজনে অনেক বিষয় নিয়েই লিখেছেন চাণক্য। কিন্তু মানুষ মাত্রই ভালো থাকতে চায়। ভালো থাকার জন্য চাণক্য কিছু উপায় বাতলে দিয়েছেন।
১) টাকা-পয়সার নিদারুণ সংকট থাকলে কাউকে কখনো বলতে নেই। কারণ এ সময় কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না, আবার কপট সাহায্যের আশ্বাস দেয়। কারণ তার মতে দরিদ্ররা সমাজে তেমন মর্যাদা পায় না। তাই তাদের নিজের সম্পদ নিজের কাছেই রাখা উচিত।
২) ব্যক্তিগত সমস্যা কখনো কাউকে বলতে নেই। যারা বলে তারা অন্যের কাছে নীচু ও বিরক্তিকর হিসেবে গৃহীত হয়, আড়ালে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। নিজের স্ত্রী সম্পর্কে কাউকে কিছু বলতে নেই। এসব বললে মানুষ মনে করে কিছু একটা অভিপ্রায় নিয়ে তা বলা হচ্ছে। যা পরবর্তীতে ভয়ঙ্কর ফল নিয়ে আসতে পারে। জ্ঞানী ব্যক্তির মতো মৃত্যু পর্যন্ত তা নিজের কাছে রেখে দেওয়া উচিত।
৩) যদি কখনো নীচপদস্থ ব্যক্তি দ্বারা অপমানের স্বীকার হওয়া যায়, তাহলে তা অন্যদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা না করাটাই ভালো। তাহলে মানুষ বক্তার সামনেই তাকে নিয়ে হাসি-তামাশা করতে পারে। ফলে তা মর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানতে পারে।
৪) আদর দেওয়ার অনেক দোষ, শাসন করার অনেক গুণ। তাই পুত্র ও শিষ্যকে শাসন করাই দরকার, আদর দেওয়া নয়। পাঁচ বছর বয়স অবধি পুত্রদের লালন করবে, ১০ বছর অবধি তাদের চালনা করবে, ১৬ বছরে পড়লে তাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করবে। পুত্রকে যারা পড়ান না, সেই পিতা-মাতা তার শত্রু। একটি চন্দ্রই অন্ধকার দূর করে, সব তারা মিলেও তা পারে না। তেমনি একটি গুণী পুত্র একশত মূর্খ পুত্রের চেয়ে ভালো।
‘চাণক্য নীতি দর্পণ’
১) যে রাজা শত্রুর গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন না এবং শুধু অভিযোগ করেন যে তার পিঠে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, তাকে সিংহাসনচ্যুত করা উচিত।
২) সব উদ্যোগ নির্ভর করে অর্থের ওপর। সে জন্য সবচেয়ে  বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত খাজাঞ্চিখানার দিকে। তহবিল তছরুপ বা অর্থ আত্মসাতের ৪০টি পদ্ধতি আছে। জিহবার ডগায় বিষ রেখে যেমন মধুর আস্বাদন করা সম্ভব নয়, তেমনি কোনো রাজকর্মচারীর পক্ষে রাজার রাজস্বের সামান্য পরিমাণ না খেয়ে ফেলার ঘটনা অসম্ভব ব্যাপার। জলের নিচে মাছের গতিবিধি যেমন জল পান করে বা পান না করেও বোঝা সম্ভব নয়, অনুরূপ রাজকর্মচারীর তহবিল তছরুপও দেখা অসম্ভব। আকাশের অতি উঁচুতেও পাখির উড্ডয়ন দেখা সম্ভব, কিন্তু রাজকর্মচারীর গোপন কার্যকলাপ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সমভাবে অসম্ভব।
৩) বিষ থেকে সুধা, নোংরা স্থান থেকে সোনা, নীচ কারও থেকে জ্ঞান এবং নিচু পরিবার থেকে শুভলক্ষণা স্ত্রী এসব গ্রহণ করা সংগত।
৪) মনের বাসনাকে দূরীভূত করা উচিত নয়। এই বাসনাগুলোকে গানের গুঞ্জনের মতো কাজে লাগানো উচিত।
৫) যারা পরিশ্রমী, তাদের জন্য কোনো কিছুই জয় করা অসাধ্য কিছু নয়। শিক্ষিত কোনো ব্যক্তির জন্য কোনো দেশই বিদেশ নয়। মিষ্টভাষীদের কোনো শত্রু নেই।
৬) বিরাট পশুপালের মাঝেও শাবক তার মাকে খুঁজে পায়। অনুরূপ যে কাজ করে অর্থ সব সময় তাকেই অনুসরণ করে।
৭) মন খাঁটি হলে পবিত্র স্থানে গমন অর্থহীন।

No comments