বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: প্রাসঙ্গিক ভাবনা-৩
অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান হালচাল এবং নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন
[PRESENT SITUATION OF EXISTING PRIVATE UNIVERSITIES AND SANCTIONING OF NEW !!]
[PRESENT SITUATION OF EXISTING PRIVATE UNIVERSITIES AND SANCTIONING OF NEW !!]
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণীত হয় ১৯৯২ সালে।
দেশে বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৪-৫৬টি। প্রকৃতপক্ষে কেউই
সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারছেনা। কারো হিসাবই কারো সাথে মিলছেনা। ইউজিছি! এক
এক সময় এক এক ধরনের তথ্য দিচ্ছে। সে যাহোক, তথ্যানুযায়ী সরকার ১৯৯২ সালে
২টি, ১৯৯৩ সালে ৩টি, ১৯৯৪ তে ১টি, ১৯৯৫ সালে ৩টি, ১৯৯৬ তে ৪টি, ২০০০ সালে
১টি, ২০০১ সালে ৭টি, ২০০২ সালে ১১টি (জানুয়ারিতে ৩টি, মে মাসে ১টি, আগস্টে
২টি, সেপ্টেম্বরে ১টি, অক্টোবরে ১টি, নভেম্বরে ১টি এবং ডিসেম্বরে ২টি)
২০০৩ সালে ১৫ টি (ফেব্রুয়ারিতে ৩টি, এপ্রিলে ৪টি, মে মাসে ২টি, জুলাইতে
২টি, আগস্টে ৩টি এবং নভেম্বরে ১টি), ২০০৪ সালে ১টি, ২০০৫ সালে ১টি এবং ২০০৬
সালের অক্টোবরে ২টি এবং সর্বমোট ৫১টি। অনুমোদনের এ হাল-হকিকত দেখে বোঝা
যায় যে, মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি কি উদ্দেশ্যে এত তারাহুরো করে এসকল
বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমোদন দিয়েছে। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নাকি
গার্মেন্টসের উপরে, মার্কেটের ভিতরে, হোটেলের ভিতরে আবার দোকানের উপরে।
অনুমোদন দেয়ার সময় কি দেখে অনুমোদন দিয়েছিল? নাকি হুশ হারিয়ে ফেলেছিল?
দেখেনি যে, এটা গার্মেন্টসের উপরে, না মার্কেটের উপরে, না দোকানের উপরে, না
হোটেলের ভিতরে? যেখানে সরকার ১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শুধু অনুমোদন দিতেই
৫-১০ বছর সময় পার করে দেয়, সেখানে ২০০২ সালে এক বছরে ১১ টি এবং ২০০৩ সালে
১৫টি অর্থ্যাৎ বছরে ১১ থেকে ১৫ টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়া শুধু দেশের
নয় বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ঘটনা নয় কি? শুধু তাই নয়, যেখানে ১টি কোর্স
অনুমোদন নিতেই বছর পার হয়ে যায়, সেখানে বছরে ১১-১৫টি আস্ত বিশ্ববিদ্যালয়
অনুমোদন দেয়া কতটা সুস্থ মসস্তস্কের কাজ হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
উপরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৯২-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক অনুমতি পেয়েছে ৪৫-৪৮টি (বাতিল ৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ)। অবশিষ্টগুলো ১৯৯৬-২০০১ সালের মধ্যে সাময়িক অনুমতি লাভ করে । প্রায় দুই দশক ধরে সাময়িক অনুমতি নিয়ে এখনও কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাায়ী অনুমোদনের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি, যা অত্যন্ত লজ্জাস্কর। বর্তমান সময় ধরা হলোনা এজন্যে যে, এ সময়ে এখনো পর্যন্ত কোন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়া হয়নি। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার নামে চলছে শুধুমাত্র শিক্ষাবাণিজ্য। একমাত্র অর্থ উপার্জনই এদের মূল উদ্দেশ্য। কেবলমাত্র এ কারণেই মানসমপন্ন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা বঞ্চিত হচ্ছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হালহকিকত: ১৯৯২ এর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন (সংশোধিত ১৯৯৮) অনুযায়ী পাঁচ বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যামপাসে যাওয়ার শর্ত মেনে যে সব বিশ্ববিদ্যালয় সাময়িক অনুমতি পেয়েছিলো তাদের বর্তমান অবস্থা হচ্ছে এরকম:
আটটি বিশ্ববিদ্যালয়কে শর্ত পূরণ করার জন্য প্রথম ক্যাটাগরি হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে, সেগুলো হলো-নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজি চট্টগ্রাম, আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলোজি, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলোজি।
দ্বিতীয় ক্যাটাগরির (যারা স্থায়ী ক্যামপাসের জন্য জমি কিনেছে এবং অবকাঠামো নির্মাণাধীন এমন বিশ্ববিদ্যালয়) পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটি।
তৃতীয় ক্যাটাগরির (যারা জমি কিনেছে কিন্ত অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করেনি) নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, দি ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলোজি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
চতুর্থ ক্যাটাগরির (নিজস্ব ভবন থাকলেও আইনানুযায়ী তা নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে নয়) বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি সিলেট, নর্দান ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
স্থায়ী ক্যামপাসের জন্য কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি এরকম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাখা হয়েছে পঞ্চম ক্যাটাগরিতে। এগুলো হচ্ছে দারুল (দারুন) ইহসান ইউনিভার্সিটি, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি।
ইতোমধ্যেই উপরে বর্ণিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনোটি সর্বোচ্চ ১৮ বছর এবং কোন কোনটি সর্বনিম্ন ৫-৬ বছর অতিক্রম করলেও হাতে গোনা দু’একটি বাদে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ই স্থায়ী ক্যামপাসে যেতে পারেনি বা যাওয়ার চেষ্টাও করেনি। যার ফলে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রেড এলার্টের অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। আর যারা স্থায়ী অবকাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থানান্তর করেছে, তারাও ১৬-১৭ বছর পার করে তারপরে গিয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনটিই প্রতিষ্ঠাকালীন নিজস্ব ভুমিতে বা স্থাপনায় অনুমোদন গ্রহণ করেনি। উপরন্ত তারা আরো ১৫ বছর সময় চেয়েছে। তাদের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে, ১৫ বছরেও নিজস্ব ক্যামপাসে যেতে পারেননি, আরো ১৫ বছর সময় দিলেও যে যেতে পারবেন-এর গ্যারান্টি কি? এ ১৫ বছরে নিজস্ব ক্যামপাসে যাওয়ার জন্য আপনাদের কাছে কোন টাকা-পয়সা না থাকলে, সামনের ১৫ বছরেওতো কোন টাকা-পয়সা থাকবেনা। যদি বলেন পারবেন, তাহলে কিভাবে? ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে জাতিকে শঙ্কামুক্ত করুন।
দেশে মানসমপন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা নেই বললেই চলে। যেখানে লেখাপড়া না করেই সার্টিফিকেট পাওয়ার সুযোগ থাকে, সেখানে মানেরতো কোন প্রশ্নই আসেনা। মানুষ স্বভাবজাতভাবেই খারাপ কাজের দিকে অতি তারাতারি ধাবিত হয়। ফলে নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় সম্পন্ন মানবসমপদ তৈরি হওয়ার মাত্রা বেড়েছে, যা সর্বত্রই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে করে একদিকে উচ্চশিক্ষার যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি সরকারের ভাবমূর্তিও বিনষ্ট হচ্ছে, সর্বোপরি জাতি একটা সুশিক্ষিত জনসম্পদ লাভে ব্যর্থ হচ্ছে । অবৈধ কারখানায় তালা লাগানো সম্ভব হলে সরকারি নির্দেশনা এবং প্রচলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন না মেনে অবৈধভাবে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় ও তাদের আউটার ক্যামপাস, কেন্দ্র বাতিল করত: এসব সার্টিফিকেট বিক্রির কারখানায় বা দোকানে তালা লাগানো কেন সম্ভব হচ্ছেনা? যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এটা জনদাবী।
জানা যায়, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের মূল ক্যাম্পাস ও কমপ্লেক্সসহ তাদের আউটার ক্যাম্পাস ও কেন্দ্রে সরকার ও ইউজিসির কাছ থেকে প্রোগ্রাম/কোর্স/বিষয় অনুমোদন না নিয়েই ১০-১২টি করে কোর্সে অবৈধভাবে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করছে এবং অবৈধভাবে সনদ দিচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার ও ইউজিসির কোন মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হয়না। এ ধরনের সরকার, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী-কর্মকর্তা দিয়ে দেশের উন্নতি আশা করা যায়? ১৯৯২ সালের আইন, ১৯৯৮ সালের সংশোধিত আইন এবং বর্তমান সরকারের আমলে পাশকৃত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০! দেখে দেশের সব সরকারেরই রাজনৈতিক পুণুর্বাসনের কথা প্রথমেই মনে আসে। এসব সরকার দেশের উন্নতি চায় কিনা, সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে। এসব রাজনৈতিক সরকার চায় শিক্ষাকে ব্যবসায়ে পরিণত করে দিয়ে ঐসব শিক্ষা সনদ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে নিজেদেরকে রাজনীতিতে আরো কয়েকদিন টিকে থাকতে। তারা টিকে থাকতে গিয়ে দেশের কী হাল করছে তা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ইউজিসিতে প্রেরিত মিথা ও জালিয়াতির তথ্য উপাত্ত দেখে সহজেই অনুমান করা যেতে পারে।
স্থায়ী ক্যামপাস: প্রতিষ্ঠাকালে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের নিজস্ব স্থাপনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করতে সক্ষম হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অধিকাংশই মার্কেটের ভিতরে, গার্মেন্টসের উপরে, হোটেলের ভিতরে তাদের ক্যামপাস চালু করেছে। ইউজিসি কি দেখে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনদানের সুপারিশ করেছে (ইউজিসির কাজ নাকি শুধু অনুমোদনপূর্ব পরিদর্শন প্রতিবেদন সুপারিশসহ মন্ত্রণালয়ে পেশ করা), আর সরকার কিভাবে অনুমোদন দিয়েছে তা বোধগম্য হচ্ছেনা। অনুমোদন দেয়া-নেয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় এবং মন্ত্রণালয়-ইউজিসির মধ্যে একরকম বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কারন সরকার ও ইউজিসি এসব বাণিজ্যিক ভবন, হোটেল থেকে ক্যাম্পাস স্থানান্তরের জন্য বারবার তাগিদ দেয়া সত্বেও আজও পর্যন্ত কোন বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। আর ইউজিসি বা সরকারও অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। কিন্তু কেন? কেন সরকার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেনা? রহস্যটা কী? রহস্যটা হচ্ছে বাণিজ্যিক, লেনদেন। আর এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতারা এতটাই বেহায়া, বেলাজ এবং বেশরম যে, তারা মান-ইজ্জতসহ ক্যাম্পাসগুলো দ্রুত স্থানান্তরতো দূরের কথা, আরো জাকিয়ে বসে বানিজ্য করে যাচ্ছে। সরকারের কাছে আরো বানিজ্যের সময় চেয়ে বিভিন্ন দাবী দাওয়া দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক। এমনিতেই ২০১০ সালের যে আইন করা হয়েছে, তা একটা সুসভ্য জাতির উচ্চশিক্ষার জন্য লজ্জাস্কর, তার উপর আবার সেটাকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে যে, এটা শিক্ষাবান্ধব আইন হয়নি। আবার সংবাদ সম্মেলন করে এপিইউবি অভিযোগ করছে যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধে নীলনকশার বাস্তবায়ন চলছে। আসলে এদেরকে (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদেরকে) কী ধরনের বিশেষণে বিশেষিত করা যাবে, তা বিজ্ঞজনের উপরই ছেড়ে দেয়া হলো। আর এদের পক্ষ নিয়ে কিছু কুশীল, অধ্যাপক, শিক্ষাবিদরা যেসব লেখা লিখেছে, তা কি করে যে তারা লিখলেন, তাই মাথায় আসছেনা। এ বিষয়ে ১ম পর্বে ২ জন সু(কু)শীলের লেখার উপর আলোকপাত করা হয়েছে, তাই আর বেশি লিখে পাঠকদের বিরক্তির উদ্রেক করতে চাইনা।
বেসরকারি বিশ্ববিদালয় প্রতিষ্ঠার পর কোনো কোনোটি সর্বোচ্চ ১৮ বছর এবং কোন কোনটি সর্বনিম্ন ৫-৬ বছর অতিক্রম করলেও হাতে গোনা দু’একটি বাদে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি বা যাওয়ার চেষ্টা করেনি। যারা গিয়েছে, তারা ১৬-১৭ বছর পার করে গিয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এ অর্ধশত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনটিই প্রতিষ্ঠাকালীন নিজস্ব ভুমিতে বা স্থাপনায় অনুমোদন নেয়নি এবং বর্তমানেও তাদের নিজস্ব কোন ক্যাম্পাসও নেই। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং কোন কোনটি প্রয়োজনের তুলনায় অল্প কিছু জমি কিনে বসে আছে। আবার টাকা পয়সা থাকলেও জমি পাওয়া যাচ্ছেনা ধুয়ো তুলে কেউ জমিই কিনেনি। আবার কেউ কেউ জমি কেনার মত টাকা নেই দাবী করে বসে আছে, যা ইদানিংকালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে লেখালেখিতে স্পষ্ট।
সরকারি আইন অনুযায়ী ৫ একর জায়গার অতিরিক্ত জমি যারা কিনেছে, তাদেরকে অচিরেই অতিরিক্ত জমি বিক্রি করে জরুরী ভিত্তিতে ক্যাম্পাস নির্মান করতে হবে। কিছু কিছু সুশীল (কুশীল) বলে বেড়াচ্ছে যে, ‘যারা ১৮ বছরে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে তাদের সবাই ব্যাপক ঋণ সুবিধা ভোগ করেছে। অথচ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ৯(৩) ধারায় এ সুবিধাও বঞ্চিত করা হয়েছে। আবার ভর্তি বন্ধের মাধ্যমে তাদের আয়েরও ব্যাপক সংকোচন নিশ্চিত করা হচ্ছে। ঋণ ও আয় বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যয়বহুল ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে বলা কি বাস্তবসঙ্গত প্রস্তাব?-হ্যা এটা যুক্তিসংগত ও বাস্তবসঙ্গত প্রস্তাব। কারন ঋণ নিয়ে কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে বলে কেউ কোনকালে শুনেনি। আর তাদের আয় বন্ধ করা হলো কোথায়? তারাতো সুদীর্ঘ ২ দশক ধরে তাদের বানিজ্যের বেশাতিতো চালিয়েই আসছে। তাদের যদি আয়ই না থাকে, তাহলে তারা আলীশান বা ফেরাউন মার্কা বাড়ি নির্মান করে বসবাস করছে কী করে?
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যারা এ ১৮ বছর সময়ের ভিতরে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি, তারা ১৮০০ বছরেও পারবেনা। আসলে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ার এটা একটা অশালীন অযুহাত মাত্র। ১৫ বছরেও নিজস্ব ক্যাম্পাসে যারা যেতে পারেনি, তাদেরকে আরো ১৫ বছর সময় দিলে যে যেতে পারবে, তার স্বপক্ষে নতুন কোন ব্যাখ্যা দিক, নতুবা তাদের যাত্রা এখানেই থামিয়েই দেয়া উত্তম। ভর্তি বন্ধ করে সমসংখ্যক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চালু করলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। সুশীল-কুশীল কারো এজন্য চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। সবাই ব্যবসার চিন্তাটাই করে, কেউ কেউ দালালীও করে ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে। ছাত্র-ছাত্রী তথা এ দেশের ভবিষ্যতের কথা কেউ চিন্তা করেনা। দেশ যে আগামীতে মেধাহীন নেতৃত্বের ভাড়ে ন্যুজ হয়ে পড়ার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, সেদিকে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। এর ফল কি হবে ভেবে দেখার সময় কী এখনো হয়নি? আর দালালদেরকে বলবো, দালালী করা থেকে বিরত থাকুন।
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা মারফত জানা গিয়েছে যে, কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজস্ব স্থায়ী স্থাপনায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে। কেউ কেউ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছে। কেউ কেউ জমি কিনেছে (এতদিন জমি কিনেনি কেন? ঠেকায় পড়লে কুকুরেও সাঁকো পার হয় বলে একটা প্রবাদের কথা মনে পড়ে গেল)। আবার কেউ কেউ সবকিছু থাকার পরও সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা তাদের মতই চলছে। এরকমই একটা ঘটনা ঘটেছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে। এ বিশ্ববিদ্যালয়টির নামে নাকি আশুলিয়াতে ১৬ একর জমি আছে। তথাপি সরকার কর্তৃক রেড এলার্ট জারি করার পরও এ বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি সেখানে কোন স্থাপনা নির্মানের উদ্যোগ না নিয়ে উত্তরাস্থ তার নিজস্ব বাসভবনের (বাড়ি নং ১৪, সড়ক নং ২৮, সেক্টর নং ৭) ছাদে (রাজউকের অনুমোদন নেয়া হয়েছে কী?) একটি টিনশেড ফ্লোর নির্মান করে সেই একটি মাত্র ফ্লোরে পুরাতন মেইন ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের ৪টি ফ্লোরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে গাদাগাদি করে ধারণ করা হয়েছে। শুক্র ও শনিবারে দূরশিক্ষণ প্রোগ্রামের ক্লাশে যেমন এক একটি কক্ষে প্রায় একশত এর মত ছাত্র-ছাত্রী ধারন করা হয়, তেমনি এ একই ফর্মূলা প্রয়োগ করা হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেলায়ও। এ টিনশেডটি নির্মান করতে নাকি ব্যয় করা হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি! টাকা। আর এর নির্মান কাজটি করা হয়েছে ভিসির নিজস্ব প্রতিষ্ঠান কান্ডারী গ্রুপের মাধ্যমে। সূত্রমতে এ ফ্লোরটির সার্বিক ব্যয় ১৫-২০ লক্ষ টাকা বেশি হবেনা। অর্থ্যাৎ বাকী টাকা আত্মসাত!
অনুমোদিত ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা: স্বত:সিদ্ধ অনুযায়ী কেবলমাত্র অনুমোদিত ক্যাম্পাসেই অনুমোদিত প্রোগ্রাম/কোর্স এবং ইনস্টিটিউট পরিচালনা, শিক্ষার্থী ভর্তি করা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিয়মানুযায়ী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন ক্যাম্পাস ব্যতিত একই শহরে কিংবা ঐ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মধ্যে বা আশেপাশে একাধিক ভবন থাকলেও ঐ সব ভবনে বা কমপ্লেক্সে বা ক্যাম্পাসে চলমান কোন কোর্স বা বিভাগ থাকেনা। অর্থ্যাত একই কোর্স একাধিক ভবনে বা কমপ্লেক্সে পরিচালনা করা যায়না। আমরা এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অপরাপর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকিয়ে দেখতে পারি। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন কমপ্লেক্স বা ভবন থাকলেও ঐসব ভবন বা কমপ্লেক্সে অন্য কোন ভবন বা ক্যাম্পাসে পরিচালিত কোন কোর্স/বিষয়/প্রোগ্রাম পড়ানো হয়না। যেমন: কলা ভবনে যেসব ফ্যাকাল্টি, বিভাগ ও বিষয় আছে, ঐ একই ফ্যাকাল্টি, বিভাগ ও বিষয় কার্জন হল, শহীদুল্লাহ হল কিংবা সায়েন্স এনেক্স-এ নেই। অন্যান্য ফ্যাকাল্টি, বিভাগ ও বিষয়ের ক্ষেত্রেও এর কোন ব্যতিক্রম নেই। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধুমাত্র সনদ বানিজ্যধারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। তাদের মধ্যে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪-৫টি করে ক্যাম্পাস/আউটার ক্যাম্পাস/কমপ্লেক্স এবং ১৫-৫০টি করে আঞ্চলিক দূরশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের মূল ক্যাম্পাসের প্রায় সকল বিষয়ই ঐসব ক্যাম্পাস/আউটার ক্যাম্পাস/কমপ্লেক্স এবং আঞ্চলিক দূরশিক্ষণ কেন্দ্রে চালু করে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করে শিক্ষার নামে সনদ বিক্রি করেছে। এসব শিক্ষার্থীর হিসাব ইউজিসি কিংবা সরকারের নিকট গোপন করা হয়েছে। যেমন-এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উত্তরাস্থ মেইন ক্যাম্পাসের ৪টি ভবনে ২৩টি প্রোগ্রাম/কোর্স/বিষয় চালু আছে। এ ২৩টি প্রোগ্রাম/কোর্স/বিষয়ের মধ্যে ৯৯% প্রোগ্রাম/কোর্স/বিষয়ই আবার তাদের ধানমন্ডি, মতিঝিল ক্যাম্পাস, রাজশাহী, খুলনা আউটার ক্যাম্পাস এবং ঢাকার বাহিরে ১৬টি জেলা শহরে ১৬টি আঞ্চলিক দূরশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিচালিত হয়ে আসছে। কেবলমাত্র ব্যবসায় প্রশাসন, কমিপউটার সায়েন্স ও ইংরেজি বিষয় ব্যতিত সব কোর্সই ১৬টি দূরশিক্ষণ আঞ্চলিক কেন্দ্রে পরিচালিত হয়েছে। আউটার ক্যাম্পাস ও কেন্দ্র বন্ধ হলেও ঢাকাস্থ সকল ভবনেই এ কার্যক্রম চলছে।
আউটার ক্যাম্পাস ও দূরশিক্ষন কেন্দ্র: অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরই আউটার ক্যাম্পাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দেশের আনাচে-কানাচে। দেশ টিভির তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব থেকে জানা যায়, বর্তমানে ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশের বিভিন্ন শহরে ৪৪টি আউটার ক্যাম্পাস রয়েছে। এ সংবাদ প্রচারের কয়েকমাস পরেই আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির উত্তরায় আরো একটি নতুন ক্যাম্পাস চালু করেছে, তাই এ সংখ্যা ৪৪ এর পরিবর্তে ৪৫টি হবে, যদিও এটা সঠিক হিসাব নয়, কারন দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির কতগুলো আউটার ক্যাম্পাস আছে তা আল্লাহ ছাড়া তারা নিজেরাও বলতে পারবেনা। যাহোক, তন্মধ্যে দারুল ইহসানের ২৯টি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ৪টি, এশিয়ানের ২টি, নর্দানের ২টি, রয়্যাল ইউনিভার্সিটির ২টি, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজির ২টি, শান্তমারিয়ামের ১টি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ২টি (যদিও আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস সংখ্যা গোটা দশেক বলে জানা গেছে) এবং সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ১টি আউটার ক্যাম্পাস রয়েছে। সরকার কর্তৃক ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সকল আউটার ক্যাম্পাসে ভর্তি বন্ধ ঘোষণা করার পরও কোন কোন ইউনিভার্সিটি তাদের আউটার ক্যাম্পাসে ২০০৮ সালের পুরোটাই ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করেছে বলে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের এ বলে আশ্বস্ত করেছে যে, তাঁদের আউটার ক্যাম্পাস অতিশীঘ্র পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপলাভ করতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও তাদের কথা বিশ্বাস করে দেধারছে ভর্তি হচ্ছে ।
সরকার কর্তৃক ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সকল আউটার ক্যাম্পাসে ভর্তি বন্ধ করা হলে, যারা অনার্স কোর্সের ছাত্র-ছাত্রী তাদের কোর্স এ বছরের ডিসেম্বরেই শেষ হবার কথা, কিন্ত কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কোর্স শেষ করতে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময় প্রয়োজন হবে বলে ইউজিসিকে জানিয়েছে। কারন ঐ একটাই, তারা ২০০৮ সালের পুরোটাই ও ২০০৯ সালের ২/১ টি সেমিস্টারেও অবৈধভাবে ভর্তি করেছে এবং এসব অবৈধ ছাত্র-ছাত্রীদের কোর্স শেষ হতে ২০১২ সালের পুরোটাই লাগবে। এশিয়ানের রাজশাহী ও খুলনা আউটার ক্যাম্পাসে ২০০৮ সালের পুরোটাই ও ২০০৯ সালের ২/১ টি সেমিস্টারেও অবৈধভাবে ভর্তি করেছে বলে জানা গেছে। তবে তাদের ১৬টি আঞ্চলিক কেন্দ্রেও সবগুলোতে ২০০৮ সাল থেকে ভর্তি বন্ধ আছে। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় আবার ট্রান্সফারের মাধ্যমে তাদের আউটার ক্যামপাস ও দূরশিক্ষণ কেন্দ্রের এসব অবৈধ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তাদের মূল ক্যাম্পাসে নিয়ে আসছে, যাতে কেউ বুঝতে না পারে। আর দূরশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যাতো অগুনিত। খোদ ঢাকা শহরের অলিগলিতেই দারুল ইহসানের রয়েছে কমপক্ষে গোটা পঞ্চাশেক সাইনবোর্ড। যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গাবতলী কোন যায়গায় নেই তাদের দোকান? বাকীগুলোর মধ্যে অধিকাংশেরই ২-৪-৫টি করে এ ধরনের কেন্দ্র রয়েছে।
বলে ক্যামপাস প্রোগ্রাম কিন্ত চালাচ্ছে দূরশিক্ষণে: বর্তমানে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের দূরশিক্ষণ প্রোগ্রামগুলো ক্যাম্পাস মোডে পরিচালনা করছে দাবী করে ইউজিসি ও সরকারকে ধোকা দিচ্ছে। আসলে তারা প্রোগ্রামগুলো চালাচ্ছে দূরশিক্ষন মোডেই, কিন্তু বলে বেড়াচ্ছে ক্যাম্পাস মোডে। তাদের ক্যাম্পাস মোডের সংজ্ঞা হচ্ছে, আগে যেখানে শুধুমাত্র শুক্রবারে ক্লাশ হতো, এখন সেখানে শুক্র-শনি দুইদিন ক্লাশ নেয়া হয়। শুক্রবারের এই একদিনের পরিবর্তে শুক্র-শনি দুইদিন ক্লাশ নেয়াকেই তারা ক্যাম্পাস মোড বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। অথচ ক্যাম্পাস পদ্ধতিতে বিবিএ, এমবিএ, সিএসই এবং ইংরেজী বিষয়সমূহ সপ্তাহে ৫/৬ দিন পুরোদমে ক্লাশ অনুষ্ঠিত হয়৷ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল বিষয় ক্যাম্পাস মোডে পরিচালিত হচ্ছে সেসব কোর্স ব্যতিত অন্যান্য কোর্সসমূহের কাশরুটিন পরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যারা চাকুরীজীবি, তাদের ক্যাম্পাস মোডে পড়ার কোন সুযোগ নেই। যদি এসব কোর্স ক্যাম্পাস মোডের হয়, তাহলে চাকুরীজীবিদের সনদ আপনাআপনি বাতিল হয়ে যাবে। কারন চাকুরীজীবিদের ক্যাম্পাস মোডে পড়াশোনা করার সূযোগ নেই। হাজার হাজার টাকা খরচ করে, সময় ব্যয় করে, পরিশ্রম করে তাদের ফলাফল শুণ্য হয়ে যাবে। কারন যে সব বিষয়কে দূরশিক্ষণ মোড বলে তাদেরকে ভর্তি করা হয়েছে, ইউজিসিকে সেসব বিষয়গুলোকে বলা হচ্ছে ক্যাম্পাস মোড । তাই তাদের সনদের অবস্থা জানার জন্য আবার রীট করতে হতে পারে। আর আদালতের চৌকাঠ মারানো অর্থ হচ্ছে স্টে অর্ডার দিয়ে হিমাগারে পাঠানো।
অথচ ইউজিসি থেকে প্রোগ্রাম অনুমোদনের সময় যে সকল শর্তাদি জুড়ে দেয়া হয়, তা ছিল: (১) সিলেবাসে মৌলিক বা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে কমিশন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে, (২) বিষয়গুলো শুধুমাত্র অনুমোদিত ক্যাম্পাসে পরিচালনা করা যাবে, অন্য কোন ক্যাম্পাসে নয়-অথচ অননুমোদিত ক্যাম্পাসেও পরিচালিত হচ্ছে (৩) বিষয়গুলো ডিসট্যান্স লার্নিং মোডে পরিচালনা করা যাবে না-কিন্ত পরিচালনা করা হচ্ছে, (৪) ও লেভেল বা জিইডি ডিপ্লোমাধারীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা যাবে না-কিন্তু ভর্তির সময় কোন কিছু বাছ-বিচার করা হচ্ছেনা, (৫) প্রোগ্রামসমূহের জন্য সর্বোচ্চ আসন সংখ্যা নির্ধারণ করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে-আসন সংখ্যার কোন বালাই নেই।আসন সংখ্যা ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সংখ্যার উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করে, পূর্বে নির্ধারণ করা হয়না, (৬) প্রদত্ত তালিকানুযায়ী অনুমোদিত শিক্ষক নিয়োগের পর নিয়োগকৃত শিক্ষককে পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে পুণরায় বিমকের অনুমোদন নিতে হবে-বালাই ষাট, এসবের কোন ধার ধারেনা; (৭) ন্যুনতম ০৪ জন শিক্ষকের কম হলে শিক্ষক পুণ:নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত কোন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা যাবেনা-কিন্তু এসব বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে ভর্তি করছে দেধারছে; (৮) বিদেশী শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন দেখা দিলে বিমকের অনুমোদন/সুপারিশ নিয়ে সরকারের নির্দিষ্ট বিভাগ/দপ্তর থেকে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে বিমক অফিসে জমা দিতে হবে-দেশি শিক্ষককে বেতন দেয় ৮-১০ হাজার টাকা, আবার বিদেশী শিক্ষক! এবং (৯) অনুমোদিত অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে-উপায় নাই, নইলে এখানেও অনিয়ম না করে ছাড়তো না। কারন এ নিয়ম জারির পূর্বে প্রত্যেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভিন্ন ভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতির মাধ্যমে সনদ প্রদান করতো।
বিদ্যমান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যামপাসসমূহকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর নয়: নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদনকৃত ৭৫টির ভিতরে বিদ্যমান ৫১ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যে সকল বিশ্ববিদ্যালয় আউটার ক্যাম্পাস চালু করে সনদ বানিজ্য করছে, সেসকল আউটার ক্যাম্পাসকে বিভিন্ন নতুন নামে স্বতন্ত্র নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের চেষ্টায়ও আবেদন করা হয়েছে। এসকল সনদ ব্যবসায়ীদের আবেদনগুলো চিহ্নিত করে প্রথমেই সেগুলোকে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, তারা এখন বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তাদের ক্যাম্পস বিক্রি করেছে বলেও জানা গেছে। সেসাথে যে সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ইতোমধ্যেই সরকার, ইউজিসি হার্ডলাইনে তাদের ভর্তি বন্ধ করার এখনই উপযুক্ত সময়। নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের প্রারম্ভে সনদ ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া অত্যাবশ্যক।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ সংসদে পাস হবার পর দেশের সর্বত্র আউটার ক্যাম্পাস স্থাপনের পথ বন্ধ হয়ে গেলে এসব ক্যাম্পাসের প্রতিষ্ঠাতারা বর্তমান নতুন আইনের আলোকে আউটার ক্যাম্পাসগুলোর নাম বদল করে নতুন নামে নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন চেয়ে মন্ত্রণালয়েআবেদন করে । এ প্রক্রিয়ায়:
১. উচ্চ আদালতে রিট আবেদন এবং সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ নিয়ে রাজশাহী ও চট্টগ্রামে পরিচালিত ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস) এর শাখা দু’টিকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অনুমতি পাওয়ার আবেদন করেছে।
২. রীট করে আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ঢাকায় অবৈধভাবে চালু করা শাখাকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
৩. উচ্চশিক্ষায় নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ আবুল হোসেন কর্তৃক গাজীপুরের একটি শাখাকে খাজা মঈনুদ্দীন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নামে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। তাছাড়া রাজশাহীর বিনোদপুর এলাকার দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাসের সাইনবোর্ড নামিয়ে নতুন নাম গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের খুলনার আউটার ক্যাম্পাসকে ওয়েস্টার্ণ বিশ্ববিদ্যালয় (প্রস্তাবক সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক) নামকরণ করে নতুন নামে প্রস্তাব করা হয়েছে ।
৪. নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির রাজশাহী আউটার ক্যাম্পাসকে ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট এন্ড টেকনোলজি এবং খুলনাস্থ আউটার ক্যাম্পাসকে খানজাহান আলী বিশ্ববিদ্যালয় নামে নতুন করে প্রস্তাব করা হয়েছে।
৫. আহসানউলস্নাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজশাহী আউটার ক্যাম্পাসের নতুন নাম এখন প্রস্তাবিত আহসানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
৬. এশিয়ান ইউনিভার্সিটির রাজশাহী ক্যামপাসের নাম প্রথমে করা হয়েছিল দ্য ট্রুথ!!! ইউনিভার্সিটি এবং পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে করা হয়েছে কিংস ইউনিভার্সিটি (এ ক্যামপাসের বিষয়ে www.newsleaks24.blogspot.com ব্লগে একটা রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছিল এশিয়ানের রাজশাহী ক্যাম্পাস বিক্রি এবং দ্য কিংস ইউনিভার্সিটির আবেদন শিরোনামে) এবং খুলনা ক্যাম্পাসের নাম করা হয়েছে সুন্দরবন ইউনিভার্সিটি। ঐ ব্লগে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির উপর কম করে হলেও ৮-১০টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রতিবেদনগুলো প্রকাশের পর থেকেই www.newsleaks24.blogspot.com টিতে আর প্রবেশ করা যাচ্ছেনা। তাই অনুধাবন করা হচ্ছে, এশিয়ান ইউনিভার্সিটির তরফ থেকে ব্লগটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যাহোক, মন্ত্রণালয়ে সিল্ক সিটি নামে রাজশাহীতে আরো একটি নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের প্রস্তাাব করা হয়েছে। প্রস্তাাবিত এ ইউনিভার্সিটির কোন সাইনবোর্ড রাজশাহীর কোথাও নজরে পড়েনি। তবে ধারনা করা হচ্ছে এটি এশিয়ান ইউনিভার্সিটির রাজশাহী ক্যাম্পাসের নতুন নাম (কিংস ইউনিভার্সিটির পরিবর্তে সিল্ক সিটি ইউনিভার্সিটি) হতে পারে। যেহেতু প্রথমে দ্য ট্রুথ ইউনিভার্সিটি, পরে দ্য কিংস ইউনিভার্সিটি, তাই সিল্ক সিটিও সম্ভবত: রাজশাহী ক্যাম্পাসের তৃতীয় নামকরণ হতে পারে। কারন এ ক্যাম্পাসের বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। তাই এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকলকে ধোকা দিয়ে রাজশাহী ক্যাম্পাসকে ট্রুথ বা কিংস ইউনিভার্সিটি নয়, সিল্ক সিটি ইউনিভার্সিটি নামেই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়রূপে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
৭. এছাড়া ইলাক্স এর পরিচালকের প্রস্তাাবিত ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য কিংবা অনুকম্পার মাধ্যমে অনুমোদন লাভের জন্য), সোনাডাঙ্গা এলাকায় অক্সব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডুমুরিয়ার রঘুনাথপুরে অনুকূল সৎসঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়।
আউটার ক্যামপাসগুলো রাতারাতি কেন তাদের নাম বদল করার প্রতিযোগিতায় নামলো, আর এর পেছনে তাদের কী ধরনের মতলব কাজ করছে? সেদিকে সরকারকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। শুধু ঢাকা-ই নয়, রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রামসহ অন্যান্য শহরে অবস্থিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস ও আউটার ক্যাম্পাসের নাম পরিবর্তন করে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরের জন্য নতুন নামে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আবেদনপত্র জমা দিয়েছে, মঞ্জুরি কমিশনের টিম কর্তৃক ঐসব প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলোরই অবকাঠামো পরিদর্শন করা হয়ে গেছে। বাদ যায়নি কোনটাই। বাদ দিলে নজরানা এবং বুস্ট এর কি হবে? দেশের সার্বিক শিক্ষার মানের কথা মাথায় রেখে এসব শাখা ক্যাম্পাসকে কোনভাবেই আর স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে অনুমোদন দেয়া কোন ক্রমেই ঠিক হবেনা। সর্বনাশ যা হবার হয়েছে, বাকী সর্বনাশটা করলে পুরণ করতে লাগবে আরো ২শত বছর। এমনিতেই ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যাঙের ছাতার মত বেসরকারি স্কুল ও কলেজগুলোর শিক্ষা বাণিজ্যের কারনে আমরা ২০০ বছর পিছিয়ে গেছি।
পুরাতনদের শর্তপূরণ অন্যথায় বন্ধ: bdnews24.com এর সংবাদ অনুযায়ী ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ব্যর্থ হবে, তারা নতুন আর কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের চলমান কোর্স শেষ করতে হবে। এক্ষেত্রে এসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য বর্তমান সময় থেকে অতিরিক্ত আরো পাঁচ বছর সময় পাবে বলে জানানো হয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ শর্ত পূরণ করতে না পারা ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ সময়ের মধ্যে আরো ১০-১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় এ শর্ত পূরণ করতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেছেন, ১৯৯২ সালের আইন অনুযায়ী যারা এখনো স্থায়ী ক্যামপাসে যাওয়ার শর্ত পূরণ করতে পারেনি তাদেরকে এ সময়ের মধ্যেই ওই শর্ত পূরণ করতে হবে। অন্যথায় সর্বশেষ কার্যক্রম হিসাবে ঐসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পুরাতনদের কোর্স শেষ হবার সাথে সাথে বাতিল করা হবে।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, যে সকল বিশ্ববিদ্যালয় ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০১১ মধ্যে নিজস্ব স্থাপনায় যেতে পারবেনা, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখ থেকে বন্ধ করা হবে। মন্ত্রী মহোদয় এবং ইউজিসি চেয়ারম্যানের এ ঘোষণা রেডিও, টেলিভিশন কিংবা প্রিন্টিং মিডিয়ায় আসলেও এ নির্দেশনা লিখিত আকারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা যায়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পূর্ব থেকেই ২০১১ সনের ফল সেমিস্টারে (সেপ্টেম্বর সেশনে) ভর্তির বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে তাদের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে । সরকার কিংবা ইউজিসির এ ব্যাপারে কোন মনিটরিং কিংবা মাথাব্যথা আছে বলে মনে হচ্ছেনা। সরকারের দৃষ্ঠিতে ভাল-মন্দ উভয় ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ই এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রায় প্রতিদিনই প্রকাশ করে যাচ্ছে। প্রত্রিকার পাতা উল্টালেই তা পরিলতি হচ্ছে। একেকটা ইউনিভার্সিটি ১০-১৫ টি অখ্যাত, বিখ্যাত, কুখ্যাত পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপন দিয়েই যাচ্ছে।
বর্তমানে প্রিন্টিং মিডিয়াগুলোতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যে ধরনের লেখালেখি হচ্ছিল, তা ইদানিং আর দেখা যাচ্ছেনা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রিন্টিং মিডিয়াগুলোকে প্রতি মাসে ২/৪টা করে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে লেখালেখির পথ বন্ধ করে দিয়েছে। আজকাল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এসব বিজ্ঞাপন প্রদানের আড়ালে একটা মোটা অংকের টাকা বিনিময়ের মাধ্যমে পত্রিকাগুলোর মুখ বন্ধ করে দিচ্ছে। যেসব পত্রিকায় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে যেদিন লেখা বের হয়, ঠিক তারপরেই তাদের সাথে এ ধরনের একটা চুক্তি তৈরি করে নেয় আপোসে, যাতে তারা আর কোন লেখা তাদের বিরুদ্ধে ছাপতে না পারে। মন্ত্রণালয়গুলো তাদের নির্দেশনা লিখিত আকারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে না জানানোর ফলে তারা এটাকে সরকারের নিছক একটা স্ট্যান্টবাজি হিসেবেই ধরে নেয় যে, এ ধরনের বহু ঘোষণা এর পূর্বেও হয়েছে কিন্তু সরকার কোন কিছুই করতে পারেনি। কারন তাদের সমিতি আছে। টাকা আছে। সব ধরনের মুখ তারা বন্ধ করে দিতে পারে। কাজেই এগুলো ড্যাম কেয়ার করেই তারা তাদের সনদ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই সরকার আরো কিছুটা ছাড় দিয়ে এসব সনদ প্রদানকারী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফল বা সেপ্টেম্বর সেমিস্টারে ভর্তির বিষয়টি বিবেচনা করেছে। তাই সরকারকে এখনই পদক্ষেপ না নিলে, তারা সরকারি নির্দেশ অমান্য করে পরবর্তী বছরে অর্থ্যাৎ স্প্রিং সেমিস্টারেও ভর্তি করবে। আর একবার ভর্তি করলে তা বাতিল করার কোন ব্যবস্থাাই থাকবেনা। আর সরকার বাতিল ঘোষণা করলেও রীটতো আছেই।
নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন
ঢাকা মহানগরীতে ভাড়া করা বাড়িতে নতুন কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না দেওয়ার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। প্রস্তাবিত নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাাপনের জন্য যেসব আবেদন করা হয়েছিল, সেগুলোর পর্যালোচনা প্রতিবেদনে ইউজিসি এসব সুপারিশ করেছে। সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আবেদন বিবেচনায় রয়েছে, তাদের প্রকল্প প্রস্তাবনায় নিজস্ব ক্যাম্পাস থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। এ বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েই আবেদন বিবেচনা করা হবে বলে সুত্রটি জানিয়েছে।
সরকারও সারা দেশে নতুন বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের বিষয়ে ইতোমধ্যেই চিন্তাা-ভাবনা করছে। এ লক্ষ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ জাতীয় সংসদে পাস হবার পর নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মোট ৭৫টি আবেদন জমা পড়েছে। এগুলোর মধ্যে ৪২টি আবেদন যাচাই করে গত ২৫ এপ্রিল ২০১১ তারিখে এবং আরো ২২টি আবেদনের উপর প্রতিবেদন গত ০৮ আগস্ট ২০১১ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে বলে দৈনিক প্রথম আলোর ০৯.০৮.২০১১ ইং তারিখের সংবাদে জানা গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যাচাই-বাছাই হওয়া এ ৬৪টি আবেদনের মধ্য থেকে খুব শিগগিরই নতুন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় চালুর অনুমতি দেওয়া হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা ইউজিসির সদস্য আতফুল হাই শিবলী জানিয়েছেন, আবেদনকারীরা ন্যূনতম শর্ত মেনেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। অনুমোদন দেওয়ার আগে উদ্যোক্তাদের অবস্থান, বিশ্ববিদ্যালয় করার মতো তাদের অভিজ্ঞতা আছে কি না, তা বিবেচনায় আনার জন্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তিনি বলেছেন, নিজস্ব জমির ওপর অবকাঠামো না থাকলে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া যাবে না। সরকার এ সিদ্ধান্তে অটল থাকলে সরকারকে সাধুবাদ জানাবো । মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, যাচাই প্রতিবেদনগুলো নিয়ে তাঁরা শিগগির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলবেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও জানিয়েছেন, যাচাই প্রতিবেদনগুলোর মধ্য থেকে খুব শিগগির কিছু যোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হবে, যাতে এ বছরই শিক্ষার্থী ভর্তি করা যায়। কিন্তু আমরা দেখলাম ঘটেছে অষ্টরম্ভা
মাননীয় মন্ত্রীর কথার সূত্র ধরে বলতে হয়, যেহেতু ঢাকাতে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নিজস্ব স্থাপনা থাকাটা বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম শর্ত ও বিবেচনা। তাই ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় চালুর জন্য প্রাপ্ত আবেদনের মধ্যে যারা নিজস্ব স্থাপনার শর্তটি পূরণ করবে, কেবলমাত্র তাদের আবেদনকেই নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের প্রারম্ভে প্রাধান্য দিতে হবে। যেসব আবেদনকারী তাদের নিজস্ব স্থাপনায় বা স্থায়ী অবকাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় চালু করতে এখনই আগ্রহী বা ইচ্ছুক বলে আবেদনে উল্লেখ করেছেন, তাদের আবেদন প্রথমেই বিবেচনা করা দরকার। যদি তাদের অন্য কোন বিষয়ে কোন সমস্যা থাকেও তা ওভারকাম করার ব্যবস্থা করে তাদেরকেই প্রথমে অনুমোদন দেয়া প্রয়োজন। তারপরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী সর্বাধিক রিকোয়্যারমেন্ট পুরণকৃত আবেদনগুলো পর্যায়ক্রমে বিবেচনায় নেয়া।
সাবধান! প্রথম আলোর ঐ সংবাদে প্রকাশ, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উদ্যোক্তা (শিক্ষা ব্যবসায়ী) জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। তাই দ্রুত (তাদের তর সইছেনা, কারন এ ব্যবসাটি এখন জমজমাট আকার ধারণ করেছে) অনুমতি দেওয়া না হলে চলতি শিক্ষাবর্ষে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা সম্ভব হবে না (আর ভর্তি না হলে তাদের অর্থের ভান্ডারও পূর্ণ হবেনা)। এসব অতিআগ্রহীদের থেকে সাবধান থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। কারন এরা তাদের বক্তব্যে প্রমাণ করেছে যে, এইচএসসির রেজাল্ট হয়ে গেছে তাই তারাতারি অনুমোদন না দিলে ভর্তি করা যাবেনা। এখানেই তাদের বানিজ্যের বিষয়টি স্পষ্ট। কাজেই সাধু সাবধান।
উপরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৯২-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক অনুমতি পেয়েছে ৪৫-৪৮টি (বাতিল ৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ)। অবশিষ্টগুলো ১৯৯৬-২০০১ সালের মধ্যে সাময়িক অনুমতি লাভ করে । প্রায় দুই দশক ধরে সাময়িক অনুমতি নিয়ে এখনও কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাায়ী অনুমোদনের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি, যা অত্যন্ত লজ্জাস্কর। বর্তমান সময় ধরা হলোনা এজন্যে যে, এ সময়ে এখনো পর্যন্ত কোন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়া হয়নি। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার নামে চলছে শুধুমাত্র শিক্ষাবাণিজ্য। একমাত্র অর্থ উপার্জনই এদের মূল উদ্দেশ্য। কেবলমাত্র এ কারণেই মানসমপন্ন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা বঞ্চিত হচ্ছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হালহকিকত: ১৯৯২ এর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন (সংশোধিত ১৯৯৮) অনুযায়ী পাঁচ বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যামপাসে যাওয়ার শর্ত মেনে যে সব বিশ্ববিদ্যালয় সাময়িক অনুমতি পেয়েছিলো তাদের বর্তমান অবস্থা হচ্ছে এরকম:
আটটি বিশ্ববিদ্যালয়কে শর্ত পূরণ করার জন্য প্রথম ক্যাটাগরি হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে, সেগুলো হলো-নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজি চট্টগ্রাম, আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলোজি, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলোজি।
দ্বিতীয় ক্যাটাগরির (যারা স্থায়ী ক্যামপাসের জন্য জমি কিনেছে এবং অবকাঠামো নির্মাণাধীন এমন বিশ্ববিদ্যালয়) পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটি।
তৃতীয় ক্যাটাগরির (যারা জমি কিনেছে কিন্ত অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করেনি) নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, দি ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলোজি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
চতুর্থ ক্যাটাগরির (নিজস্ব ভবন থাকলেও আইনানুযায়ী তা নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে নয়) বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি সিলেট, নর্দান ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
স্থায়ী ক্যামপাসের জন্য কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি এরকম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাখা হয়েছে পঞ্চম ক্যাটাগরিতে। এগুলো হচ্ছে দারুল (দারুন) ইহসান ইউনিভার্সিটি, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি।
ইতোমধ্যেই উপরে বর্ণিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনোটি সর্বোচ্চ ১৮ বছর এবং কোন কোনটি সর্বনিম্ন ৫-৬ বছর অতিক্রম করলেও হাতে গোনা দু’একটি বাদে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ই স্থায়ী ক্যামপাসে যেতে পারেনি বা যাওয়ার চেষ্টাও করেনি। যার ফলে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রেড এলার্টের অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। আর যারা স্থায়ী অবকাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থানান্তর করেছে, তারাও ১৬-১৭ বছর পার করে তারপরে গিয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনটিই প্রতিষ্ঠাকালীন নিজস্ব ভুমিতে বা স্থাপনায় অনুমোদন গ্রহণ করেনি। উপরন্ত তারা আরো ১৫ বছর সময় চেয়েছে। তাদের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে, ১৫ বছরেও নিজস্ব ক্যামপাসে যেতে পারেননি, আরো ১৫ বছর সময় দিলেও যে যেতে পারবেন-এর গ্যারান্টি কি? এ ১৫ বছরে নিজস্ব ক্যামপাসে যাওয়ার জন্য আপনাদের কাছে কোন টাকা-পয়সা না থাকলে, সামনের ১৫ বছরেওতো কোন টাকা-পয়সা থাকবেনা। যদি বলেন পারবেন, তাহলে কিভাবে? ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে জাতিকে শঙ্কামুক্ত করুন।
দেশে মানসমপন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা নেই বললেই চলে। যেখানে লেখাপড়া না করেই সার্টিফিকেট পাওয়ার সুযোগ থাকে, সেখানে মানেরতো কোন প্রশ্নই আসেনা। মানুষ স্বভাবজাতভাবেই খারাপ কাজের দিকে অতি তারাতারি ধাবিত হয়। ফলে নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় সম্পন্ন মানবসমপদ তৈরি হওয়ার মাত্রা বেড়েছে, যা সর্বত্রই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে করে একদিকে উচ্চশিক্ষার যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি সরকারের ভাবমূর্তিও বিনষ্ট হচ্ছে, সর্বোপরি জাতি একটা সুশিক্ষিত জনসম্পদ লাভে ব্যর্থ হচ্ছে । অবৈধ কারখানায় তালা লাগানো সম্ভব হলে সরকারি নির্দেশনা এবং প্রচলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন না মেনে অবৈধভাবে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় ও তাদের আউটার ক্যামপাস, কেন্দ্র বাতিল করত: এসব সার্টিফিকেট বিক্রির কারখানায় বা দোকানে তালা লাগানো কেন সম্ভব হচ্ছেনা? যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এটা জনদাবী।
জানা যায়, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের মূল ক্যাম্পাস ও কমপ্লেক্সসহ তাদের আউটার ক্যাম্পাস ও কেন্দ্রে সরকার ও ইউজিসির কাছ থেকে প্রোগ্রাম/কোর্স/বিষয় অনুমোদন না নিয়েই ১০-১২টি করে কোর্সে অবৈধভাবে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করছে এবং অবৈধভাবে সনদ দিচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার ও ইউজিসির কোন মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হয়না। এ ধরনের সরকার, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী-কর্মকর্তা দিয়ে দেশের উন্নতি আশা করা যায়? ১৯৯২ সালের আইন, ১৯৯৮ সালের সংশোধিত আইন এবং বর্তমান সরকারের আমলে পাশকৃত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০! দেখে দেশের সব সরকারেরই রাজনৈতিক পুণুর্বাসনের কথা প্রথমেই মনে আসে। এসব সরকার দেশের উন্নতি চায় কিনা, সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে। এসব রাজনৈতিক সরকার চায় শিক্ষাকে ব্যবসায়ে পরিণত করে দিয়ে ঐসব শিক্ষা সনদ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে নিজেদেরকে রাজনীতিতে আরো কয়েকদিন টিকে থাকতে। তারা টিকে থাকতে গিয়ে দেশের কী হাল করছে তা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ইউজিসিতে প্রেরিত মিথা ও জালিয়াতির তথ্য উপাত্ত দেখে সহজেই অনুমান করা যেতে পারে।
স্থায়ী ক্যামপাস: প্রতিষ্ঠাকালে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের নিজস্ব স্থাপনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করতে সক্ষম হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অধিকাংশই মার্কেটের ভিতরে, গার্মেন্টসের উপরে, হোটেলের ভিতরে তাদের ক্যামপাস চালু করেছে। ইউজিসি কি দেখে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনদানের সুপারিশ করেছে (ইউজিসির কাজ নাকি শুধু অনুমোদনপূর্ব পরিদর্শন প্রতিবেদন সুপারিশসহ মন্ত্রণালয়ে পেশ করা), আর সরকার কিভাবে অনুমোদন দিয়েছে তা বোধগম্য হচ্ছেনা। অনুমোদন দেয়া-নেয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় এবং মন্ত্রণালয়-ইউজিসির মধ্যে একরকম বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কারন সরকার ও ইউজিসি এসব বাণিজ্যিক ভবন, হোটেল থেকে ক্যাম্পাস স্থানান্তরের জন্য বারবার তাগিদ দেয়া সত্বেও আজও পর্যন্ত কোন বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। আর ইউজিসি বা সরকারও অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। কিন্তু কেন? কেন সরকার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেনা? রহস্যটা কী? রহস্যটা হচ্ছে বাণিজ্যিক, লেনদেন। আর এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতারা এতটাই বেহায়া, বেলাজ এবং বেশরম যে, তারা মান-ইজ্জতসহ ক্যাম্পাসগুলো দ্রুত স্থানান্তরতো দূরের কথা, আরো জাকিয়ে বসে বানিজ্য করে যাচ্ছে। সরকারের কাছে আরো বানিজ্যের সময় চেয়ে বিভিন্ন দাবী দাওয়া দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক। এমনিতেই ২০১০ সালের যে আইন করা হয়েছে, তা একটা সুসভ্য জাতির উচ্চশিক্ষার জন্য লজ্জাস্কর, তার উপর আবার সেটাকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে যে, এটা শিক্ষাবান্ধব আইন হয়নি। আবার সংবাদ সম্মেলন করে এপিইউবি অভিযোগ করছে যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধে নীলনকশার বাস্তবায়ন চলছে। আসলে এদেরকে (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদেরকে) কী ধরনের বিশেষণে বিশেষিত করা যাবে, তা বিজ্ঞজনের উপরই ছেড়ে দেয়া হলো। আর এদের পক্ষ নিয়ে কিছু কুশীল, অধ্যাপক, শিক্ষাবিদরা যেসব লেখা লিখেছে, তা কি করে যে তারা লিখলেন, তাই মাথায় আসছেনা। এ বিষয়ে ১ম পর্বে ২ জন সু(কু)শীলের লেখার উপর আলোকপাত করা হয়েছে, তাই আর বেশি লিখে পাঠকদের বিরক্তির উদ্রেক করতে চাইনা।
বেসরকারি বিশ্ববিদালয় প্রতিষ্ঠার পর কোনো কোনোটি সর্বোচ্চ ১৮ বছর এবং কোন কোনটি সর্বনিম্ন ৫-৬ বছর অতিক্রম করলেও হাতে গোনা দু’একটি বাদে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি বা যাওয়ার চেষ্টা করেনি। যারা গিয়েছে, তারা ১৬-১৭ বছর পার করে গিয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এ অর্ধশত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনটিই প্রতিষ্ঠাকালীন নিজস্ব ভুমিতে বা স্থাপনায় অনুমোদন নেয়নি এবং বর্তমানেও তাদের নিজস্ব কোন ক্যাম্পাসও নেই। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং কোন কোনটি প্রয়োজনের তুলনায় অল্প কিছু জমি কিনে বসে আছে। আবার টাকা পয়সা থাকলেও জমি পাওয়া যাচ্ছেনা ধুয়ো তুলে কেউ জমিই কিনেনি। আবার কেউ কেউ জমি কেনার মত টাকা নেই দাবী করে বসে আছে, যা ইদানিংকালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে লেখালেখিতে স্পষ্ট।
সরকারি আইন অনুযায়ী ৫ একর জায়গার অতিরিক্ত জমি যারা কিনেছে, তাদেরকে অচিরেই অতিরিক্ত জমি বিক্রি করে জরুরী ভিত্তিতে ক্যাম্পাস নির্মান করতে হবে। কিছু কিছু সুশীল (কুশীল) বলে বেড়াচ্ছে যে, ‘যারা ১৮ বছরে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে তাদের সবাই ব্যাপক ঋণ সুবিধা ভোগ করেছে। অথচ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ৯(৩) ধারায় এ সুবিধাও বঞ্চিত করা হয়েছে। আবার ভর্তি বন্ধের মাধ্যমে তাদের আয়েরও ব্যাপক সংকোচন নিশ্চিত করা হচ্ছে। ঋণ ও আয় বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যয়বহুল ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে বলা কি বাস্তবসঙ্গত প্রস্তাব?-হ্যা এটা যুক্তিসংগত ও বাস্তবসঙ্গত প্রস্তাব। কারন ঋণ নিয়ে কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে বলে কেউ কোনকালে শুনেনি। আর তাদের আয় বন্ধ করা হলো কোথায়? তারাতো সুদীর্ঘ ২ দশক ধরে তাদের বানিজ্যের বেশাতিতো চালিয়েই আসছে। তাদের যদি আয়ই না থাকে, তাহলে তারা আলীশান বা ফেরাউন মার্কা বাড়ি নির্মান করে বসবাস করছে কী করে?
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যারা এ ১৮ বছর সময়ের ভিতরে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি, তারা ১৮০০ বছরেও পারবেনা। আসলে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ার এটা একটা অশালীন অযুহাত মাত্র। ১৫ বছরেও নিজস্ব ক্যাম্পাসে যারা যেতে পারেনি, তাদেরকে আরো ১৫ বছর সময় দিলে যে যেতে পারবে, তার স্বপক্ষে নতুন কোন ব্যাখ্যা দিক, নতুবা তাদের যাত্রা এখানেই থামিয়েই দেয়া উত্তম। ভর্তি বন্ধ করে সমসংখ্যক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চালু করলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। সুশীল-কুশীল কারো এজন্য চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। সবাই ব্যবসার চিন্তাটাই করে, কেউ কেউ দালালীও করে ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে। ছাত্র-ছাত্রী তথা এ দেশের ভবিষ্যতের কথা কেউ চিন্তা করেনা। দেশ যে আগামীতে মেধাহীন নেতৃত্বের ভাড়ে ন্যুজ হয়ে পড়ার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, সেদিকে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। এর ফল কি হবে ভেবে দেখার সময় কী এখনো হয়নি? আর দালালদেরকে বলবো, দালালী করা থেকে বিরত থাকুন।
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা মারফত জানা গিয়েছে যে, কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজস্ব স্থায়ী স্থাপনায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে। কেউ কেউ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছে। কেউ কেউ জমি কিনেছে (এতদিন জমি কিনেনি কেন? ঠেকায় পড়লে কুকুরেও সাঁকো পার হয় বলে একটা প্রবাদের কথা মনে পড়ে গেল)। আবার কেউ কেউ সবকিছু থাকার পরও সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা তাদের মতই চলছে। এরকমই একটা ঘটনা ঘটেছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে। এ বিশ্ববিদ্যালয়টির নামে নাকি আশুলিয়াতে ১৬ একর জমি আছে। তথাপি সরকার কর্তৃক রেড এলার্ট জারি করার পরও এ বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি সেখানে কোন স্থাপনা নির্মানের উদ্যোগ না নিয়ে উত্তরাস্থ তার নিজস্ব বাসভবনের (বাড়ি নং ১৪, সড়ক নং ২৮, সেক্টর নং ৭) ছাদে (রাজউকের অনুমোদন নেয়া হয়েছে কী?) একটি টিনশেড ফ্লোর নির্মান করে সেই একটি মাত্র ফ্লোরে পুরাতন মেইন ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের ৪টি ফ্লোরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে গাদাগাদি করে ধারণ করা হয়েছে। শুক্র ও শনিবারে দূরশিক্ষণ প্রোগ্রামের ক্লাশে যেমন এক একটি কক্ষে প্রায় একশত এর মত ছাত্র-ছাত্রী ধারন করা হয়, তেমনি এ একই ফর্মূলা প্রয়োগ করা হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেলায়ও। এ টিনশেডটি নির্মান করতে নাকি ব্যয় করা হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি! টাকা। আর এর নির্মান কাজটি করা হয়েছে ভিসির নিজস্ব প্রতিষ্ঠান কান্ডারী গ্রুপের মাধ্যমে। সূত্রমতে এ ফ্লোরটির সার্বিক ব্যয় ১৫-২০ লক্ষ টাকা বেশি হবেনা। অর্থ্যাৎ বাকী টাকা আত্মসাত!
অনুমোদিত ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা: স্বত:সিদ্ধ অনুযায়ী কেবলমাত্র অনুমোদিত ক্যাম্পাসেই অনুমোদিত প্রোগ্রাম/কোর্স এবং ইনস্টিটিউট পরিচালনা, শিক্ষার্থী ভর্তি করা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিয়মানুযায়ী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন ক্যাম্পাস ব্যতিত একই শহরে কিংবা ঐ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মধ্যে বা আশেপাশে একাধিক ভবন থাকলেও ঐ সব ভবনে বা কমপ্লেক্সে বা ক্যাম্পাসে চলমান কোন কোর্স বা বিভাগ থাকেনা। অর্থ্যাত একই কোর্স একাধিক ভবনে বা কমপ্লেক্সে পরিচালনা করা যায়না। আমরা এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অপরাপর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকিয়ে দেখতে পারি। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন কমপ্লেক্স বা ভবন থাকলেও ঐসব ভবন বা কমপ্লেক্সে অন্য কোন ভবন বা ক্যাম্পাসে পরিচালিত কোন কোর্স/বিষয়/প্রোগ্রাম পড়ানো হয়না। যেমন: কলা ভবনে যেসব ফ্যাকাল্টি, বিভাগ ও বিষয় আছে, ঐ একই ফ্যাকাল্টি, বিভাগ ও বিষয় কার্জন হল, শহীদুল্লাহ হল কিংবা সায়েন্স এনেক্স-এ নেই। অন্যান্য ফ্যাকাল্টি, বিভাগ ও বিষয়ের ক্ষেত্রেও এর কোন ব্যতিক্রম নেই। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধুমাত্র সনদ বানিজ্যধারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। তাদের মধ্যে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪-৫টি করে ক্যাম্পাস/আউটার ক্যাম্পাস/কমপ্লেক্স এবং ১৫-৫০টি করে আঞ্চলিক দূরশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের মূল ক্যাম্পাসের প্রায় সকল বিষয়ই ঐসব ক্যাম্পাস/আউটার ক্যাম্পাস/কমপ্লেক্স এবং আঞ্চলিক দূরশিক্ষণ কেন্দ্রে চালু করে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করে শিক্ষার নামে সনদ বিক্রি করেছে। এসব শিক্ষার্থীর হিসাব ইউজিসি কিংবা সরকারের নিকট গোপন করা হয়েছে। যেমন-এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উত্তরাস্থ মেইন ক্যাম্পাসের ৪টি ভবনে ২৩টি প্রোগ্রাম/কোর্স/বিষয় চালু আছে। এ ২৩টি প্রোগ্রাম/কোর্স/বিষয়ের মধ্যে ৯৯% প্রোগ্রাম/কোর্স/বিষয়ই আবার তাদের ধানমন্ডি, মতিঝিল ক্যাম্পাস, রাজশাহী, খুলনা আউটার ক্যাম্পাস এবং ঢাকার বাহিরে ১৬টি জেলা শহরে ১৬টি আঞ্চলিক দূরশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিচালিত হয়ে আসছে। কেবলমাত্র ব্যবসায় প্রশাসন, কমিপউটার সায়েন্স ও ইংরেজি বিষয় ব্যতিত সব কোর্সই ১৬টি দূরশিক্ষণ আঞ্চলিক কেন্দ্রে পরিচালিত হয়েছে। আউটার ক্যাম্পাস ও কেন্দ্র বন্ধ হলেও ঢাকাস্থ সকল ভবনেই এ কার্যক্রম চলছে।
আউটার ক্যাম্পাস ও দূরশিক্ষন কেন্দ্র: অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরই আউটার ক্যাম্পাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দেশের আনাচে-কানাচে। দেশ টিভির তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব থেকে জানা যায়, বর্তমানে ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশের বিভিন্ন শহরে ৪৪টি আউটার ক্যাম্পাস রয়েছে। এ সংবাদ প্রচারের কয়েকমাস পরেই আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির উত্তরায় আরো একটি নতুন ক্যাম্পাস চালু করেছে, তাই এ সংখ্যা ৪৪ এর পরিবর্তে ৪৫টি হবে, যদিও এটা সঠিক হিসাব নয়, কারন দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির কতগুলো আউটার ক্যাম্পাস আছে তা আল্লাহ ছাড়া তারা নিজেরাও বলতে পারবেনা। যাহোক, তন্মধ্যে দারুল ইহসানের ২৯টি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ৪টি, এশিয়ানের ২টি, নর্দানের ২টি, রয়্যাল ইউনিভার্সিটির ২টি, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজির ২টি, শান্তমারিয়ামের ১টি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ২টি (যদিও আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস সংখ্যা গোটা দশেক বলে জানা গেছে) এবং সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ১টি আউটার ক্যাম্পাস রয়েছে। সরকার কর্তৃক ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সকল আউটার ক্যাম্পাসে ভর্তি বন্ধ ঘোষণা করার পরও কোন কোন ইউনিভার্সিটি তাদের আউটার ক্যাম্পাসে ২০০৮ সালের পুরোটাই ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করেছে বলে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের এ বলে আশ্বস্ত করেছে যে, তাঁদের আউটার ক্যাম্পাস অতিশীঘ্র পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপলাভ করতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও তাদের কথা বিশ্বাস করে দেধারছে ভর্তি হচ্ছে ।
সরকার কর্তৃক ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সকল আউটার ক্যাম্পাসে ভর্তি বন্ধ করা হলে, যারা অনার্স কোর্সের ছাত্র-ছাত্রী তাদের কোর্স এ বছরের ডিসেম্বরেই শেষ হবার কথা, কিন্ত কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কোর্স শেষ করতে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময় প্রয়োজন হবে বলে ইউজিসিকে জানিয়েছে। কারন ঐ একটাই, তারা ২০০৮ সালের পুরোটাই ও ২০০৯ সালের ২/১ টি সেমিস্টারেও অবৈধভাবে ভর্তি করেছে এবং এসব অবৈধ ছাত্র-ছাত্রীদের কোর্স শেষ হতে ২০১২ সালের পুরোটাই লাগবে। এশিয়ানের রাজশাহী ও খুলনা আউটার ক্যাম্পাসে ২০০৮ সালের পুরোটাই ও ২০০৯ সালের ২/১ টি সেমিস্টারেও অবৈধভাবে ভর্তি করেছে বলে জানা গেছে। তবে তাদের ১৬টি আঞ্চলিক কেন্দ্রেও সবগুলোতে ২০০৮ সাল থেকে ভর্তি বন্ধ আছে। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় আবার ট্রান্সফারের মাধ্যমে তাদের আউটার ক্যামপাস ও দূরশিক্ষণ কেন্দ্রের এসব অবৈধ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তাদের মূল ক্যাম্পাসে নিয়ে আসছে, যাতে কেউ বুঝতে না পারে। আর দূরশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যাতো অগুনিত। খোদ ঢাকা শহরের অলিগলিতেই দারুল ইহসানের রয়েছে কমপক্ষে গোটা পঞ্চাশেক সাইনবোর্ড। যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গাবতলী কোন যায়গায় নেই তাদের দোকান? বাকীগুলোর মধ্যে অধিকাংশেরই ২-৪-৫টি করে এ ধরনের কেন্দ্র রয়েছে।
বলে ক্যামপাস প্রোগ্রাম কিন্ত চালাচ্ছে দূরশিক্ষণে: বর্তমানে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের দূরশিক্ষণ প্রোগ্রামগুলো ক্যাম্পাস মোডে পরিচালনা করছে দাবী করে ইউজিসি ও সরকারকে ধোকা দিচ্ছে। আসলে তারা প্রোগ্রামগুলো চালাচ্ছে দূরশিক্ষন মোডেই, কিন্তু বলে বেড়াচ্ছে ক্যাম্পাস মোডে। তাদের ক্যাম্পাস মোডের সংজ্ঞা হচ্ছে, আগে যেখানে শুধুমাত্র শুক্রবারে ক্লাশ হতো, এখন সেখানে শুক্র-শনি দুইদিন ক্লাশ নেয়া হয়। শুক্রবারের এই একদিনের পরিবর্তে শুক্র-শনি দুইদিন ক্লাশ নেয়াকেই তারা ক্যাম্পাস মোড বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। অথচ ক্যাম্পাস পদ্ধতিতে বিবিএ, এমবিএ, সিএসই এবং ইংরেজী বিষয়সমূহ সপ্তাহে ৫/৬ দিন পুরোদমে ক্লাশ অনুষ্ঠিত হয়৷ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল বিষয় ক্যাম্পাস মোডে পরিচালিত হচ্ছে সেসব কোর্স ব্যতিত অন্যান্য কোর্সসমূহের কাশরুটিন পরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যারা চাকুরীজীবি, তাদের ক্যাম্পাস মোডে পড়ার কোন সুযোগ নেই। যদি এসব কোর্স ক্যাম্পাস মোডের হয়, তাহলে চাকুরীজীবিদের সনদ আপনাআপনি বাতিল হয়ে যাবে। কারন চাকুরীজীবিদের ক্যাম্পাস মোডে পড়াশোনা করার সূযোগ নেই। হাজার হাজার টাকা খরচ করে, সময় ব্যয় করে, পরিশ্রম করে তাদের ফলাফল শুণ্য হয়ে যাবে। কারন যে সব বিষয়কে দূরশিক্ষণ মোড বলে তাদেরকে ভর্তি করা হয়েছে, ইউজিসিকে সেসব বিষয়গুলোকে বলা হচ্ছে ক্যাম্পাস মোড । তাই তাদের সনদের অবস্থা জানার জন্য আবার রীট করতে হতে পারে। আর আদালতের চৌকাঠ মারানো অর্থ হচ্ছে স্টে অর্ডার দিয়ে হিমাগারে পাঠানো।
অথচ ইউজিসি থেকে প্রোগ্রাম অনুমোদনের সময় যে সকল শর্তাদি জুড়ে দেয়া হয়, তা ছিল: (১) সিলেবাসে মৌলিক বা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে কমিশন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে, (২) বিষয়গুলো শুধুমাত্র অনুমোদিত ক্যাম্পাসে পরিচালনা করা যাবে, অন্য কোন ক্যাম্পাসে নয়-অথচ অননুমোদিত ক্যাম্পাসেও পরিচালিত হচ্ছে (৩) বিষয়গুলো ডিসট্যান্স লার্নিং মোডে পরিচালনা করা যাবে না-কিন্ত পরিচালনা করা হচ্ছে, (৪) ও লেভেল বা জিইডি ডিপ্লোমাধারীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা যাবে না-কিন্তু ভর্তির সময় কোন কিছু বাছ-বিচার করা হচ্ছেনা, (৫) প্রোগ্রামসমূহের জন্য সর্বোচ্চ আসন সংখ্যা নির্ধারণ করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে-আসন সংখ্যার কোন বালাই নেই।আসন সংখ্যা ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সংখ্যার উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করে, পূর্বে নির্ধারণ করা হয়না, (৬) প্রদত্ত তালিকানুযায়ী অনুমোদিত শিক্ষক নিয়োগের পর নিয়োগকৃত শিক্ষককে পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে পুণরায় বিমকের অনুমোদন নিতে হবে-বালাই ষাট, এসবের কোন ধার ধারেনা; (৭) ন্যুনতম ০৪ জন শিক্ষকের কম হলে শিক্ষক পুণ:নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত কোন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা যাবেনা-কিন্তু এসব বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে ভর্তি করছে দেধারছে; (৮) বিদেশী শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন দেখা দিলে বিমকের অনুমোদন/সুপারিশ নিয়ে সরকারের নির্দিষ্ট বিভাগ/দপ্তর থেকে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে বিমক অফিসে জমা দিতে হবে-দেশি শিক্ষককে বেতন দেয় ৮-১০ হাজার টাকা, আবার বিদেশী শিক্ষক! এবং (৯) অনুমোদিত অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে-উপায় নাই, নইলে এখানেও অনিয়ম না করে ছাড়তো না। কারন এ নিয়ম জারির পূর্বে প্রত্যেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভিন্ন ভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতির মাধ্যমে সনদ প্রদান করতো।
বিদ্যমান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যামপাসসমূহকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর নয়: নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদনকৃত ৭৫টির ভিতরে বিদ্যমান ৫১ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যে সকল বিশ্ববিদ্যালয় আউটার ক্যাম্পাস চালু করে সনদ বানিজ্য করছে, সেসকল আউটার ক্যাম্পাসকে বিভিন্ন নতুন নামে স্বতন্ত্র নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের চেষ্টায়ও আবেদন করা হয়েছে। এসকল সনদ ব্যবসায়ীদের আবেদনগুলো চিহ্নিত করে প্রথমেই সেগুলোকে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, তারা এখন বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তাদের ক্যাম্পস বিক্রি করেছে বলেও জানা গেছে। সেসাথে যে সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ইতোমধ্যেই সরকার, ইউজিসি হার্ডলাইনে তাদের ভর্তি বন্ধ করার এখনই উপযুক্ত সময়। নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের প্রারম্ভে সনদ ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া অত্যাবশ্যক।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ সংসদে পাস হবার পর দেশের সর্বত্র আউটার ক্যাম্পাস স্থাপনের পথ বন্ধ হয়ে গেলে এসব ক্যাম্পাসের প্রতিষ্ঠাতারা বর্তমান নতুন আইনের আলোকে আউটার ক্যাম্পাসগুলোর নাম বদল করে নতুন নামে নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন চেয়ে মন্ত্রণালয়েআবেদন করে । এ প্রক্রিয়ায়:
১. উচ্চ আদালতে রিট আবেদন এবং সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ নিয়ে রাজশাহী ও চট্টগ্রামে পরিচালিত ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস) এর শাখা দু’টিকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অনুমতি পাওয়ার আবেদন করেছে।
২. রীট করে আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ঢাকায় অবৈধভাবে চালু করা শাখাকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
৩. উচ্চশিক্ষায় নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ আবুল হোসেন কর্তৃক গাজীপুরের একটি শাখাকে খাজা মঈনুদ্দীন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নামে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। তাছাড়া রাজশাহীর বিনোদপুর এলাকার দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাসের সাইনবোর্ড নামিয়ে নতুন নাম গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের খুলনার আউটার ক্যাম্পাসকে ওয়েস্টার্ণ বিশ্ববিদ্যালয় (প্রস্তাবক সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক) নামকরণ করে নতুন নামে প্রস্তাব করা হয়েছে ।
৪. নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির রাজশাহী আউটার ক্যাম্পাসকে ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট এন্ড টেকনোলজি এবং খুলনাস্থ আউটার ক্যাম্পাসকে খানজাহান আলী বিশ্ববিদ্যালয় নামে নতুন করে প্রস্তাব করা হয়েছে।
৫. আহসানউলস্নাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজশাহী আউটার ক্যাম্পাসের নতুন নাম এখন প্রস্তাবিত আহসানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
৬. এশিয়ান ইউনিভার্সিটির রাজশাহী ক্যামপাসের নাম প্রথমে করা হয়েছিল দ্য ট্রুথ!!! ইউনিভার্সিটি এবং পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে করা হয়েছে কিংস ইউনিভার্সিটি (এ ক্যামপাসের বিষয়ে www.newsleaks24.blogspot.com ব্লগে একটা রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছিল এশিয়ানের রাজশাহী ক্যাম্পাস বিক্রি এবং দ্য কিংস ইউনিভার্সিটির আবেদন শিরোনামে) এবং খুলনা ক্যাম্পাসের নাম করা হয়েছে সুন্দরবন ইউনিভার্সিটি। ঐ ব্লগে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির উপর কম করে হলেও ৮-১০টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রতিবেদনগুলো প্রকাশের পর থেকেই www.newsleaks24.blogspot.com টিতে আর প্রবেশ করা যাচ্ছেনা। তাই অনুধাবন করা হচ্ছে, এশিয়ান ইউনিভার্সিটির তরফ থেকে ব্লগটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যাহোক, মন্ত্রণালয়ে সিল্ক সিটি নামে রাজশাহীতে আরো একটি নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের প্রস্তাাব করা হয়েছে। প্রস্তাাবিত এ ইউনিভার্সিটির কোন সাইনবোর্ড রাজশাহীর কোথাও নজরে পড়েনি। তবে ধারনা করা হচ্ছে এটি এশিয়ান ইউনিভার্সিটির রাজশাহী ক্যাম্পাসের নতুন নাম (কিংস ইউনিভার্সিটির পরিবর্তে সিল্ক সিটি ইউনিভার্সিটি) হতে পারে। যেহেতু প্রথমে দ্য ট্রুথ ইউনিভার্সিটি, পরে দ্য কিংস ইউনিভার্সিটি, তাই সিল্ক সিটিও সম্ভবত: রাজশাহী ক্যাম্পাসের তৃতীয় নামকরণ হতে পারে। কারন এ ক্যাম্পাসের বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। তাই এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকলকে ধোকা দিয়ে রাজশাহী ক্যাম্পাসকে ট্রুথ বা কিংস ইউনিভার্সিটি নয়, সিল্ক সিটি ইউনিভার্সিটি নামেই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়রূপে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
৭. এছাড়া ইলাক্স এর পরিচালকের প্রস্তাাবিত ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য কিংবা অনুকম্পার মাধ্যমে অনুমোদন লাভের জন্য), সোনাডাঙ্গা এলাকায় অক্সব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডুমুরিয়ার রঘুনাথপুরে অনুকূল সৎসঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়।
আউটার ক্যামপাসগুলো রাতারাতি কেন তাদের নাম বদল করার প্রতিযোগিতায় নামলো, আর এর পেছনে তাদের কী ধরনের মতলব কাজ করছে? সেদিকে সরকারকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। শুধু ঢাকা-ই নয়, রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রামসহ অন্যান্য শহরে অবস্থিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস ও আউটার ক্যাম্পাসের নাম পরিবর্তন করে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরের জন্য নতুন নামে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আবেদনপত্র জমা দিয়েছে, মঞ্জুরি কমিশনের টিম কর্তৃক ঐসব প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলোরই অবকাঠামো পরিদর্শন করা হয়ে গেছে। বাদ যায়নি কোনটাই। বাদ দিলে নজরানা এবং বুস্ট এর কি হবে? দেশের সার্বিক শিক্ষার মানের কথা মাথায় রেখে এসব শাখা ক্যাম্পাসকে কোনভাবেই আর স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে অনুমোদন দেয়া কোন ক্রমেই ঠিক হবেনা। সর্বনাশ যা হবার হয়েছে, বাকী সর্বনাশটা করলে পুরণ করতে লাগবে আরো ২শত বছর। এমনিতেই ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যাঙের ছাতার মত বেসরকারি স্কুল ও কলেজগুলোর শিক্ষা বাণিজ্যের কারনে আমরা ২০০ বছর পিছিয়ে গেছি।
পুরাতনদের শর্তপূরণ অন্যথায় বন্ধ: bdnews24.com এর সংবাদ অনুযায়ী ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ব্যর্থ হবে, তারা নতুন আর কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের চলমান কোর্স শেষ করতে হবে। এক্ষেত্রে এসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য বর্তমান সময় থেকে অতিরিক্ত আরো পাঁচ বছর সময় পাবে বলে জানানো হয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ শর্ত পূরণ করতে না পারা ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ সময়ের মধ্যে আরো ১০-১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় এ শর্ত পূরণ করতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেছেন, ১৯৯২ সালের আইন অনুযায়ী যারা এখনো স্থায়ী ক্যামপাসে যাওয়ার শর্ত পূরণ করতে পারেনি তাদেরকে এ সময়ের মধ্যেই ওই শর্ত পূরণ করতে হবে। অন্যথায় সর্বশেষ কার্যক্রম হিসাবে ঐসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পুরাতনদের কোর্স শেষ হবার সাথে সাথে বাতিল করা হবে।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, যে সকল বিশ্ববিদ্যালয় ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০১১ মধ্যে নিজস্ব স্থাপনায় যেতে পারবেনা, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখ থেকে বন্ধ করা হবে। মন্ত্রী মহোদয় এবং ইউজিসি চেয়ারম্যানের এ ঘোষণা রেডিও, টেলিভিশন কিংবা প্রিন্টিং মিডিয়ায় আসলেও এ নির্দেশনা লিখিত আকারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা যায়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পূর্ব থেকেই ২০১১ সনের ফল সেমিস্টারে (সেপ্টেম্বর সেশনে) ভর্তির বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে তাদের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে । সরকার কিংবা ইউজিসির এ ব্যাপারে কোন মনিটরিং কিংবা মাথাব্যথা আছে বলে মনে হচ্ছেনা। সরকারের দৃষ্ঠিতে ভাল-মন্দ উভয় ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ই এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রায় প্রতিদিনই প্রকাশ করে যাচ্ছে। প্রত্রিকার পাতা উল্টালেই তা পরিলতি হচ্ছে। একেকটা ইউনিভার্সিটি ১০-১৫ টি অখ্যাত, বিখ্যাত, কুখ্যাত পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপন দিয়েই যাচ্ছে।
বর্তমানে প্রিন্টিং মিডিয়াগুলোতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যে ধরনের লেখালেখি হচ্ছিল, তা ইদানিং আর দেখা যাচ্ছেনা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রিন্টিং মিডিয়াগুলোকে প্রতি মাসে ২/৪টা করে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে লেখালেখির পথ বন্ধ করে দিয়েছে। আজকাল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এসব বিজ্ঞাপন প্রদানের আড়ালে একটা মোটা অংকের টাকা বিনিময়ের মাধ্যমে পত্রিকাগুলোর মুখ বন্ধ করে দিচ্ছে। যেসব পত্রিকায় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে যেদিন লেখা বের হয়, ঠিক তারপরেই তাদের সাথে এ ধরনের একটা চুক্তি তৈরি করে নেয় আপোসে, যাতে তারা আর কোন লেখা তাদের বিরুদ্ধে ছাপতে না পারে। মন্ত্রণালয়গুলো তাদের নির্দেশনা লিখিত আকারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে না জানানোর ফলে তারা এটাকে সরকারের নিছক একটা স্ট্যান্টবাজি হিসেবেই ধরে নেয় যে, এ ধরনের বহু ঘোষণা এর পূর্বেও হয়েছে কিন্তু সরকার কোন কিছুই করতে পারেনি। কারন তাদের সমিতি আছে। টাকা আছে। সব ধরনের মুখ তারা বন্ধ করে দিতে পারে। কাজেই এগুলো ড্যাম কেয়ার করেই তারা তাদের সনদ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই সরকার আরো কিছুটা ছাড় দিয়ে এসব সনদ প্রদানকারী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফল বা সেপ্টেম্বর সেমিস্টারে ভর্তির বিষয়টি বিবেচনা করেছে। তাই সরকারকে এখনই পদক্ষেপ না নিলে, তারা সরকারি নির্দেশ অমান্য করে পরবর্তী বছরে অর্থ্যাৎ স্প্রিং সেমিস্টারেও ভর্তি করবে। আর একবার ভর্তি করলে তা বাতিল করার কোন ব্যবস্থাাই থাকবেনা। আর সরকার বাতিল ঘোষণা করলেও রীটতো আছেই।
নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন
ঢাকা মহানগরীতে ভাড়া করা বাড়িতে নতুন কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না দেওয়ার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। প্রস্তাবিত নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাাপনের জন্য যেসব আবেদন করা হয়েছিল, সেগুলোর পর্যালোচনা প্রতিবেদনে ইউজিসি এসব সুপারিশ করেছে। সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আবেদন বিবেচনায় রয়েছে, তাদের প্রকল্প প্রস্তাবনায় নিজস্ব ক্যাম্পাস থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। এ বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েই আবেদন বিবেচনা করা হবে বলে সুত্রটি জানিয়েছে।
সরকারও সারা দেশে নতুন বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের বিষয়ে ইতোমধ্যেই চিন্তাা-ভাবনা করছে। এ লক্ষ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ জাতীয় সংসদে পাস হবার পর নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মোট ৭৫টি আবেদন জমা পড়েছে। এগুলোর মধ্যে ৪২টি আবেদন যাচাই করে গত ২৫ এপ্রিল ২০১১ তারিখে এবং আরো ২২টি আবেদনের উপর প্রতিবেদন গত ০৮ আগস্ট ২০১১ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে বলে দৈনিক প্রথম আলোর ০৯.০৮.২০১১ ইং তারিখের সংবাদে জানা গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যাচাই-বাছাই হওয়া এ ৬৪টি আবেদনের মধ্য থেকে খুব শিগগিরই নতুন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় চালুর অনুমতি দেওয়া হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা ইউজিসির সদস্য আতফুল হাই শিবলী জানিয়েছেন, আবেদনকারীরা ন্যূনতম শর্ত মেনেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। অনুমোদন দেওয়ার আগে উদ্যোক্তাদের অবস্থান, বিশ্ববিদ্যালয় করার মতো তাদের অভিজ্ঞতা আছে কি না, তা বিবেচনায় আনার জন্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তিনি বলেছেন, নিজস্ব জমির ওপর অবকাঠামো না থাকলে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া যাবে না। সরকার এ সিদ্ধান্তে অটল থাকলে সরকারকে সাধুবাদ জানাবো । মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, যাচাই প্রতিবেদনগুলো নিয়ে তাঁরা শিগগির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলবেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও জানিয়েছেন, যাচাই প্রতিবেদনগুলোর মধ্য থেকে খুব শিগগির কিছু যোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হবে, যাতে এ বছরই শিক্ষার্থী ভর্তি করা যায়। কিন্তু আমরা দেখলাম ঘটেছে অষ্টরম্ভা
মাননীয় মন্ত্রীর কথার সূত্র ধরে বলতে হয়, যেহেতু ঢাকাতে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নিজস্ব স্থাপনা থাকাটা বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম শর্ত ও বিবেচনা। তাই ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় চালুর জন্য প্রাপ্ত আবেদনের মধ্যে যারা নিজস্ব স্থাপনার শর্তটি পূরণ করবে, কেবলমাত্র তাদের আবেদনকেই নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের প্রারম্ভে প্রাধান্য দিতে হবে। যেসব আবেদনকারী তাদের নিজস্ব স্থাপনায় বা স্থায়ী অবকাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় চালু করতে এখনই আগ্রহী বা ইচ্ছুক বলে আবেদনে উল্লেখ করেছেন, তাদের আবেদন প্রথমেই বিবেচনা করা দরকার। যদি তাদের অন্য কোন বিষয়ে কোন সমস্যা থাকেও তা ওভারকাম করার ব্যবস্থা করে তাদেরকেই প্রথমে অনুমোদন দেয়া প্রয়োজন। তারপরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী সর্বাধিক রিকোয়্যারমেন্ট পুরণকৃত আবেদনগুলো পর্যায়ক্রমে বিবেচনায় নেয়া।
সাবধান! প্রথম আলোর ঐ সংবাদে প্রকাশ, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উদ্যোক্তা (শিক্ষা ব্যবসায়ী) জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। তাই দ্রুত (তাদের তর সইছেনা, কারন এ ব্যবসাটি এখন জমজমাট আকার ধারণ করেছে) অনুমতি দেওয়া না হলে চলতি শিক্ষাবর্ষে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা সম্ভব হবে না (আর ভর্তি না হলে তাদের অর্থের ভান্ডারও পূর্ণ হবেনা)। এসব অতিআগ্রহীদের থেকে সাবধান থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। কারন এরা তাদের বক্তব্যে প্রমাণ করেছে যে, এইচএসসির রেজাল্ট হয়ে গেছে তাই তারাতারি অনুমোদন না দিলে ভর্তি করা যাবেনা। এখানেই তাদের বানিজ্যের বিষয়টি স্পষ্ট। কাজেই সাধু সাবধান।
ব্লগে মন্তব্য করুন অথবা মেইল করুন: sangsaptaka@rocketmail.com
No comments
Post a Comment