Breaking News

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: প্রাসঙ্গিক ভাবনা-৪

পরিসংখ্যান এবং পর্যালোচনা
এ বছর ২০১১ সালে ১০টি শিক্ষা বোর্ডে মোট ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৮২৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৫ লাখ ৭৪ হাজার ২৬১ জন গত বছর (২০১০ সাল) দেশে ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৭ লাখ ১৮ হাজার ৮৪ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে পরীক্ষায় পাস করে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৩৬৯ জন ১০টি বোর্ডে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৭৬৯ জন, যা গতবারের চেয়ে ১০ হাজার ৭৬৫ জন বেশি গতবার পেয়েছিল ২৯ হাজার ৪ জন সে যাহোক, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে অনার্স প্রথমবর্ষ ভর্তির জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ হাজার আসনের বিপরিতে ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয় জিপিএ-৫ পাওয়া ৩৯ হাজার ৭৬৯ জন + ৪ থেকে ৫ এর নীচে গ্রেড পাওয়া ২ লাখ ৩ হাজার ৯ জন + গত বছর পাস করা কিন্তু দ্বিতীয়বারের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ নেয়ার জন্য অপেক্ষমান আরো প্রায় ১ লাখ শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৩.৫ লাখ শিক্ষার্থী 




পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এবং তাদের আসন সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্নরকমের তথ্য ছাপা হয়েছে
যেমন-দৈনিক মানবজমিনের হিসাব অনুযায়ী দেশের উন্মুক্ত ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিয়ে ২৯ টি (ইউজিসির রিপোর্ট অনুযায়ী ৩১টি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ হাজার (কোন জায়গায় লিখেছে ২৯ টিতে আবার কোন জায়গায় লিখেছে ৩১টিতে ২৭ হাজার!); দৈনিক যুগান্তরের হিসাব অনুযায়ী ৩১টিতে ৩৬ হাজার ৮৮৬ টি আসন, প্রথম আলো মন্ত্রণালয়ের উদৃতি দিয়ে জানিয়েছে ৪০ হাজার দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবরানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়! ৪০ হাজার আসন আছে কোন কোন পত্রিকায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৯টি, কোন কোন পত্রিকায় এসেছে ৩১টি, কোনটিতে ৩২টি, কোনটিতে ২৯টি, আবার ইউজিসির ওয়েবসাইটে পাওয়া গেছে ৩১টি কোন কোন পত্রিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা লিখেছে ৫ হাজার, আবার কোন কোনটিতে আসছে ৫.৫ হাজার দৈনিক জনকন্ঠের ৩০ জুলাইয়ের প্রতিবেদনে আসছে ৬ হাজার পাক্ষিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বর্ষ ৩০, সংখ্যা ৬ এর প্রতিবেদনে ২৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৬ হাজার ৮৮৬ টি আসন উল্লেখ আছে

তথ্যের এই যে গড়মিল, এ থেকে জাতি মুক্তি পাবে কবে? তথ্যের এ গড়মিলের কারণে জাতি উচ্চশিক্ষার সঠিক পরিসংখ্যান জানতে পারবেনা
ফলে জাতি অন্ধকারে থাকবে যে, আমাদের দেশে ঠিক কতজন উচ্চশিক্ষিত জনবল আছে, তন্মধ্যে কত জন বেকার আমরা কয়েকদিন আগের পত্র-পত্রিকায় এও প্রত্যক্ষ করছি, দেশে যে আদমশুমারী হয়েছে সেখানেও তথ্যের গড়মিল নিয়ে এন্তার লেখালেখি হয়েছেআমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হচ্ছে, কবে আদমশুমারী হলো, আর আমাকে কে গননা করলো, তা আমি নিজেই জানিনা এরকম অনেকেই অভিযোগ করছে যে, তারা এ আদমশুমারীর কথাই শোনেইনি

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যার সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য দিয়েছে দৈনিক জনকন্ঠ গত ৩০ জুলাই ২০১১ তারিখের প্রতিবেদনে এবং পাক্ষিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বর্ষ ৩০, সংখ্যা ৬ এর প্রতিবেদনে। তাদের প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা যথাক্রমে (দৈনিক জনকন্ঠ লিখেছে) ৮০ হাজার এবং পাক্ষিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস লিখেছে পৌনে ২ লাখ! যেখানে সরকার ও ইউজিসি দাবী করছে ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজার (ইউজিসির দাবী অনুযায়ী বছরে ৫০ হাজারের মত শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়)। সেখানে এ পত্রিকা দু’টি ৮০ হাজার এবং পৌনে ২ লাখ আসনের তথ্য পেল কোথা থেকে? কাদের পক্ষ নিয়ে এ পত্রিকা দু’টি শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ইউজিসি, মন্ত্রণালয় তথা জাতিকে বিভ্রান্ত করছে? তাদের প্রতিবেদনে কোন রেফারেন্সও উল্লেখ করা হয়নি। এ পত্রিকা দু’টির প্রতিবেদনে আসন সংখ্যার যে তথ্য দেয়া হয়েছে, তার সাথে অপরাপর পত্রিকার প্রতিবেদনের কোন সামঞ্জস্য নেই।

কথা হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার আসন সংখ্যা নির্ধারণ করা আছে কি? এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী গেলেই ভর্তি করা হয়ে থাকে। সরকার একদিকে বলছে ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা ৬০ হাজারের কিছু বেশি, অন্যদিকে বলছে বছরে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তাহলে কী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যার চেয়েও কম শিক্ষার্থী ভর্তি করে? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এতটাই ভাল হয়ে গেছে? বাহ সাবাশ! দেশে শিক্ষার্থী ভর্তির আকাল পড়ে গেল তাহলে?

দৈনিক জনকন্ঠের ৩০ তারিখের প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা ৪০ হাজার এবং বলা হয়েছে যে, দেশের সরকারি-বেসরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ৬.৫ লাখ আসন রয়েছে। আসন সংখ্যার কোন সমস্যা নেই। তাহলেতো তাদের হিসাবে দেশে উচ্চশিক্ষার্থীদের কোন আসন সংকটই নেই! প্রকৃতপক্ষে তাদের এ প্রতিবেদন প্রমাণ করে তারা কোন একটা উদ্দেশ্য নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে এবং শিক্ষার্থী, অভিভাবক তথা জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। সবাই জানে আসনের স্বল্পতা থাকলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে পাস কোর্সে কোন আসন ছাড়াই ভর্তি করে থাকে। আসন স্বল্পতার কারনে এক একটি শ্রেণীকক্ষে গাদাগাদী করে শিক্ষার্থীরা পাঠগ্রহণ করে তাদের শিক্ষাজীবন চালিয়ে নেয়। ৩ জনের রাধা ভাতে ৫ জন খেলে তাদের সমূহ ক্ষিধে মিটানো সম্ভব হলেও তাদের সবার পেট কী ভরবে? ঘাটতিতো থেকেই যাবে, তাই নয় কী? তাই বলে আসন স্বল্পতার বিষয়টিকে অস্বীকার করার কোন উপায় আছে? যদি ৫ লাখ ৭৪ হাজার ২৬১ জনের বিপরিতে ৬.৫ লাখ আসন থাকে তাহলে আর নতুন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের আপাতত: কোন প্রয়োজন আছে কী? কিন্তুসরকারতো প্রায় প্রতিনিয়তই তাদের রাজনৈতিক কারনে হোক,আর আসন স্বল্পতার কারনে হোক,নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন দিয়েই চলছেএ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে আগামী কিছু দিনের মধ্যে কমপক্ষে ১৫-২০ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় আছে

যাহোক, আসন সংখ্যার হিসাবে দেখা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ হাজার, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ হাজার, মেডিক্যাল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ হাজার ১১০টি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনার্স কলেজগুলোয় প্রথম বর্ষে আসনসংখ্যা প্রায় দুই লাখ আর ডিগ্রি কলেজগুলোয় পাস কোর্সে রয়েছে দেড় লাখের মতো আসন (২৮ জুলাই ২০১১ এর দৈনিক মানবজমিনের হিসাব অনুযায়ী এ সংখ্যা যথাক্রমে ১.৩৫ লাখ এবং ৭০ হাজার)। ফাজিলেও রয়েছে আরও বেশ কিছু আসন। এর বাইরে কিছু মাদ্রাসায় সম্মান কোর্স চালু করা হয়েছে। এতসব মিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা দাড়ায় প্রায় ৪.৩০ লাখ থেকে ৪.৪০ লাখ। এ বছর পাশ করেছে ৫ লাখ ৭৪ হাজার ২৬১ জন এবং গত বছরের অপেক্ষমান প্রায় ১ লাখসহ প্রায় ৭ লাখ। এ হিসাবে প্রায় ১.৫ লাখ থেকে ২ লাখ শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা লাভ বলতে গেলে হয় অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, নয়তো আসন সংখ্যার কোন বালাই না থাকাতে জমিজমা বিক্রি করে কাড়িকাড়ি টাকা নিয়ে তাদের গন্তব্য হবে ঐসব সার্টিফিকেটের দোকানদারদের (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে) কাছে। এ হিসাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে কম করে হলেও ২ থেকে ২.৫ লাখ। অথচ সরকারি হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে ভর্তি হয় মাত্র হাজার পঞ্চাশেক। এ ছাড়াও প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী বিদেশে চলে যায় উচ্চশিক্ষার জন্য। তাহলে হিসাবটা কোথায় গিয়ে দাড়ালো?

এবার ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে শুধু বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫.০ পেয়েছে ২০ হাজার ৪০২ জন শিক্ষার্থী। এইচএসসি পাসের পর বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদেরকে সরকারি মেডিকেল কলেজ কিংবা বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিতে দেখা যায়। সেক্ষেত্রে দেশে বিদ্যমান সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোয় আসন আছে ২ হাজার ১১০টি, আর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে (বুয়েট, ডুয়েট, রুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, এসইউএসটি, সিভিএএস, এনএসটি, এমভিএসটি ইত্যাদিতে) রয়েছে প্রায় আরো ৫ হাজার আসনসহ মোট ৭ হাজার ১১০ টি। এর পরও বিজ্ঞান বিভাগের অবশিষ্ট ১৫ হাজার শিক্ষার্থী সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের কোন না কোন বিভাগে ভর্তি হতে বাধ্য হবে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে । এ হিসাব থেকে সপষ্ট যে, জিপিএ-৫ পেয়েও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ অনেক শিক্ষার্থীই তাঁদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে বা বিষয়ে ভর্তি হতে পারবে বলে মনে হয়না। আবার সব মিলিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে প্রায় ৪০ হাজার, আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনও আছে ৪০ হাজার। তাহলে এদেরকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দিতে বাধা কোথায়? তাছাড়া শুধু কি বিজ্ঞান? মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ তাঁদের প্রত্যাশিত প্রতিষ্ঠানে আসনস্বল্পতার কারণে ভর্তি হতে পারবে না এটাও একপ্রকার চরম সত্য। ভালো ফল করেও ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে নিজেদের উপযুক্ততার প্রমাণ দিয়েই তবে শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সরকার, ইউজিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে দাবী করে আসছে যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বছরে মাত্র প্রায় ৫০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়। প্রকৃতপক্ষে ৫১/৫৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক কতোজন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে, এর সঠিক কোন হিসেব মঞ্জুরি কমিশন জানেনা এবং তাদের কাছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সঠিক প্রতিবেদন দেয়ওনা। তাই তাদের কাছে কোন সঠিক হিসাবও নেই। তাদের কাছে যে ক’জনার হিসাব দেয়া হয়, তারা সেটাকেই পুজি করে ঢাকঢোল পিটিয়ে বক্তব্য দিয়ে থাকে। এ ৫.৭৫ লাখের ভিতর থেকে যদি ৩ লাখ শিক্ষার্থীও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, তাহলে বাকী ২.৫ থেকে ২.৭৫ লাখ ছাত্র-ছাত্রী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এটা একটা হিসাব মাত্র। এর কিছুটা কম-বেশি হতে পারে, তাই বলে ৫১/৫৪ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র প্রায় ৫০ হাজার (গড়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজারেরও কম) শিক্ষার্থী ভর্তির তথ্য ঢাহা মিথ্যা কথা। এর প্রমাণ পরবর্তী পর্বগুলোতে দেয়া হবে। তার আগে তাদের ভর্তি বানিজ্যের বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

ভর্তি বানিজ্য: এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের পরপরই বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের ভর্তি কার্যক্রম শুরুর প্রাক্কালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থী সংগ্রহের জন্য (পণ্য বিপনন প্রক্রিয়ার ন্যায়) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মসজিদ-মার্কেটের প্রবেশপথে লিফলেট বিতরণ, পোস্টারিংসহ দেশব্যাপী নানা কায়দায় প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দেয়। এমনকি কেউ কেউ পত্র-পত্রিকায় এমনসব চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন পর্যন্ত প্রকাশ করে থাকে, যা হাস্যকর। নতুন পাস হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী আউটার ক্যাম্পাস ও দূরশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও (শুধু তাই নয়, এ ব্যাপারে কোন ধরনের বিজ্ঞাপন বা প্রচারণা পর্যন্ত করা যাবে না বলে সরকার কর্তৃক সতর্ক করে দেয়া হয়েছে) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের প্রভাবশালীদেরকে ম্যানেজের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের নামে দূরশিক্ষণ প্রোগ্রামে ভর্তি করে তাদের বানিজ্য ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে।

সরকারিভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার উভয়টিতে ২.৫ এর নীচের গ্রেডের (তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ) কোন ছাত্র-ছাত্রীকে ভর্তির উপর নিষেধাজ্ঞা জারীর পূর্বে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই যেভাবে পারছে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করছে। দেখা গেছে, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার উভয়টিতে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। অথচ এসব ছাত্র-ছাত্রীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়তো দূরের কথা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কোন কলেজে অর্নাসে ভর্তিরই যোগ্যতা রাখেনা এবং অনেকেই উত্তীর্ণ হতে পারেনা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বানিজ্যের কারনে তারা অনায়াসেই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে থাকে।

কোন কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ, এমবিএ এবং সিএসই বিভাগে নামকাওয়াস্তে একটা লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা নিয়ে থাকে। কিন্তু ভর্তি করে প্রায় সবাইকেই। উপরন্তু সেমিস্টারের মাঝখানে এমনকি পরীক্ষার পূর্বের দিনও ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করে থাকে। কারন পাশ করা বা সার্টিফিকেট পাওয়া এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সমস্যা নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যাক ডেট দিয়ে আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ভর্তির তারিখ উল্লেথ ছাড়াই ভর্তি করে থাকে, যাতে তদন্তে ধরা না পড়ে। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় সেমিস্টার শুরু হবার কিংবা সেমিস্টারের মাঝখানেও ভর্তির বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে।

এ প্রসঙ্গে নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির ভর্তি বাণিজ্যের বিষয়ে ০৫ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে বাংলাদেশ প্রতিদিনের একটি প্রতিবেদন এরকমনর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তিবাণিজ্য! দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে (এনএসইউ) ভর্তিতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছেপ্রতিটি সেমিস্টারে এক-তৃতীয়াংশ ছাত্রছাত্রীই লাখ লাখ টাকার লেনদেনে ভর্তি হচ্ছেনএ কারণে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মেধাবীরাতবে বাংলাদেশের সর্ববৃহত এ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তিবাণিজ্যে কোনো রাখঢাক নেইএনএসইউ পরিচালনা পরিষদ নিজেদের প্রার্থীদের বিশেষ বিবেচনায় ভর্তির সিদ্ধান্ত বোর্ডসভায় অনুমোদন করিয়ে নেয়তবে এর বাইরে চেয়ারম্যান,ভিসি ও ভিসির অনুপস্থিতির সুযোগে তার কার্যালয়ের কর্মচারী এবং গজিয়ে ওঠা দালালচক্র নানাভাবে ভর্তিবাণিজ্য করে যাচ্ছেবোর্ডের কিছু সদস্য অবশ্য ভর্তিবাণিজ্য ও কেনাকাটায় সংশ্লিষ্টতাকে পেশা হিসেবেই নিয়েছেনতবে অনেক বোর্ড সদস্যই ভর্তিবাণিজ্যে জড়িত ননভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) হাফিজ জিএ সিদ্দিকী অকৃতকার্যদের ভর্তির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন,প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি বলে বোর্ডের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী তিনি ভর্তি করতে বাধ্যতিনি টেলিফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,এটা বন্ধের জন্য আমি চিঠি দিয়েছিএতে অবৈধ ভর্তি বন্ধ হয়েছে কি না জানতে চাইলে ভিসি বলেন,কখনো কমেছে,আবার বেড়েছেতবে বোর্ডের ওপর দায় চাপালেও ভিসি নিজেও অকৃতকার্যদের ভর্তি করেন বলে অভিযোগ আছে১৯ আগস্ট ভিসির কাছে এনএসইউ পরিচালনা পরিষদ সদস্যদের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী এদের শরসেমিস্টারে ভর্তির নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান আজিমউদ্দিনএতে মো. শাহজাহানের পাঁচ,মিসেস রেহানা রহমানের চার,রাগীব আলীর পাঁচ,এম এইচ খানের পাঁচ,মিসেস ইয়াসমিন কামালের পাঁচ,ইউসুফ এ হারুনের তিন,বেনজীর আহমেদের পাঁচ এবং এম এ কাশেমের পাঁচজনের নাম রয়েছেচেয়ারম্যান আজিমউদ্দিন ৩০ আগস্ট ৩৩ জনের আরেকটি তালিকা শর সেমিস্টারে ভর্তির জন্য পাঠানএ তালিকাটি বোর্ড সদস্যদের দেওয়া বলা হলেও নাম দেওয়া হয়নি৩১ আগস্ট আরেকটি তালিকা পাঠিয়ে তিনি বলেছেন,এটি বোর্ড সদস্য,মন্ত্রী,সংসদ সদস্য ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পাঠানোএখানে ৯২টি নাম পাওয়া গেছে৬ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান বিশেষ বিবেচনায় দুজনকে ভর্তির নির্দেশ দেনএকই দিন আরও ১২ জনকে এবং ভিসি একজনকে ভর্তির নির্দেশ দেন২১ সেপ্টেম্বর তিনি বিশেষ বিবেচনায় আরও চারজনকে ভর্তির নির্দেশ দেন১৩ সেপ্টেম্বর ছয়জন ও ১৫ সেপ্টেম্বর দুজনকে বিশেষ বিবেচনায় ভর্তির নির্দেশ দেওয়া হয়এর বাইরে শরসেমিস্টারে বোর্ড সদস্য এম এ হাশেমের পাঁচ ও বেনজীর আহমদের দুজন ছাড়াও আওয়ামী লীগ এবং মহাজোটের শরিক কয়েকটি দলের প্রভাবশালী কয়েকজন সংসদ সদস্যের তদবিরেও কয়েকজন অকৃতকার্যকে ভর্তি করা হয়েছেসূত্রে জানা যায়,২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত ১৮৬তম বোর্ডসভার সিদ্ধান্তের উল্লেখ করে চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল ভিসির কাছে সামার ২০০৯ সেমিস্টারে ইশিতা জাহান মীমকে ভর্তির জন্য পাঠানওই সেমিস্টারে এম এ আউয়াল দুই,ইফতেখারুল আলম দুই,এস এম কামালউদ্দিন এক,ইয়াসমিন কামাল দুই,রাগীব আলী তিন,রেহানা রহমান দুই,বেনজীর আহমেদ তিন,আবুল কাশেম এক,এম এ হাশেম দুই,মো. আবুল কালাম দুই,মো. শাহজাহান দুই,এম এ কাশেম এক,আজিমউদ্দিন আহমদ দুই ও ইউসুফ এ হারুন দুজন অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি করিয়েছেনএনএসইউ চেয়ারম্যান গত বছরের ২৫ মে ভিসিকে এক স্মারকে জানান,২১৭ তম বোর্ডসভায় বোর্ড সদস্য,এমপি ও গণমান্য ব্যক্তিদের সুপারিশকৃত কতিপয় বিশেষ কেস অনুমোদন করা হয়েছেতালিকা সংযুক্ত করা হলেও সংখ্যা বলা হয়নিভিসি রেজিস্ট্রারকে ভর্তি করার নির্দেশ দেনএ তালিকায় ৪৫ জনের নাম ছিলভিসি অফিসের ক্লার্ক মোশাররফের রেফারেন্সেও তাফসিন আহমদ নামে একজনকে ভর্তি করা হয়েছেঅনুসন্ধানে জানা যায়,সমপ্রতি জুনিয়র অফিসার হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত মোশাররফসহ তার কয়েকজন স্টাফই অনুপস্থিত ভিসির কাজকর্ম চালানসূত্রগুলো জানায়,ভিসি একেএম হক নামে এক ছাত্রকে তার প্রার্থী হিসেবে ২০০৯ সালের ৩ মে,২৭ মে তাফসিন আহমদকে এবং ৩১ মে নূরজাহান তুলি নামে আরেক ছাত্রীকে নিজের প্রার্থী বলে ভর্তির নির্দেশ দেন

', এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রী:দেশের শীর্যস্থানীয় একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, একটি প্রতিষ্ঠান গত ১০ বছর ধরে একটি অফিস খুলে শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে এমফিল এবং পিএইচডি ডিগ্রি বিক্রির কাজ করে যাচ্ছে। আমলা, আইনজীবি, এনজিও কর্মকর্তা এবং ব্যাংকাররা সম্মান, প্রতিপত্তি এবং পদোন্নতির আশায় ঘরে বসেই মাত্র ৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এ ডিগ্রীগুলো কিন্‌ছে। ইউজিসি ভাষ্যমতে, এ প্রতিষ্ঠানটির নাকি কোন বৈধ অনুমোদন নেই, ক্যাম্পাস নেই, শিক্ষক নেই। ইউজিসির নাকের ডগায় বসে তারা এমফিল, পিএইচডি’র মত উচ্চতর ডিগ্রী বিক্রি করে যাচ্ছে অথচ তাদের নাকি কিছুই করনীয় নেই। আসলে সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ! বাংলাদেশের জনগনই হচ্ছে সবচেয়ে বড় অভাগা যে, তাদেরকে টাকা দিয়ে সনদ কিনে কাজ চালাতে হচ্ছে।

আন্ডারগ্রাজুয়েট ও পোস্টগ্রাজুয়েট ডিগ্রী অর্জনের পর কঠোর অধ্যাবসায়, অনুশীলন এবং গবেষণার মাধ্যমে ২ বছরের এমফিল এবং একজন অভিজ্ঞ অধ্যাপকের অধীনে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করতে হয়। কোন কোন সময় বা ক্ষেত্রে ৩ বছরের কোর্স শেষ করতে ৪-৫ বছর পর্যন্ত লেগে যায়। দেশের পুরাতন কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হাতে গোনা কয়েকটি বিভাগের অধীন এ ডিগ্রী প্রদানের ব্যবস্থা থাকলেও নতুন কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়ে এখনও এমফিল বা পিএইচডি কোর্স চালু নেই। তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা যখন এমনই, তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ধরনের ডিগ্রী প্রদান করে কিভাবে? আর এর গ্রহণযোগ্যতাই বা কি?

ইদানিং আরো একটি বিদেশী ইউনিভার্সিটির শাখার হদিস দিয়েছে দৈনিক মানবজমিন গত ৩১ জুলাই ও ৩ আগস্ট ২০১১ তারিখের সংবাদের মাধ্যমে। ঐ সংবাদে জানা যায়, চ্যান্সেরি একাডেমি অব ইংলিশ ল,র অধ্যক্ষ খাজা ইকবাল নামের জনৈক ব্যক্তি উইলিয়ামসবার্গ নামে একটি ইউনিভার্সিটি চালু করে সনদ বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। গত ২৩ জুলাই ২০১১ তারিখে রাজধানীর ম্যারিওট সেন্টারে সমাবর্তনের মাধ্যমে ২৬ জনকে সনদও দিয়েছে। ব্রিটিশ ল’ ডিগ্রির ভূয়া ইউনিভার্সিটি শিরোনামে গত ৩১ জুলাই একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করে দৈনিক মানবজমিন। এ থেকে আবারো প্রমাণিত হল যে, সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। এখানে এ ধরনের প্রতারণা দেখার কেউ নেই। আসলে ইউজিছি!র মত প্রতিষ্ঠান থাকলে এদেশে এ ধরনের ডিগ্রীর আকাল পড়ার কোন কথা নয়। কারন তারা শুধু এটুকুই বলার জন্য আছে যে, এসব প্রতিষ্ঠানের কোন বৈধ অনুমোদন নেই। এর বেশি কিছু বলার বা করার কোন দায়িত্ব তাদের নেই।

বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী এসব শিক্ষা ব্যবসায়ী তথা সার্টিফিকেট বিক্রির দোকানদারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু বিলম্ব হলেতো আগামী প্রজন্মকে এসব দোকানদারদের থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। কারন তারা এখন সংঘবদ্ধ। এরা কালো টাকার মালিক। এদের সমিতি আছে। তারা সরকারকে হুমকি দেয়। আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে কিংবা সরকার বা ইউজিসিকে প্রভাবিত (ম্যানেজ) করে, কিংবা জনগনকে ধোকা দিয়ে কিংবা সরকারের ঢিলেমি এবং ইউজিসির বুস্ট খাওয়ার কারনে এখন থেকে তারা যাতে কোনভাবেই সনদ বিক্রির সুযোগ না পায় সেজন্য সচেতন হতে হবে ছাত্র ও তাদের অভিভাবকদের। তারা যেন যাচাই-বাছাই করে ভর্তি হয় ও ডিগ্রী অর্জন করে। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সনদ কেনার মত অপবাদ যেন তাদেরকে নিতে না হয়।

টিউশন ফি: ১৩.০৭.২০১০ ইং তারিখের দৈনিক জনকন্ঠ, সংগ্রাম ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবরানুযায়ী বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এসোসিয়েশনের (এপিইউবি) মহাসচিব অধ্যাপক ড. এম আলীমুলা মিয়ার নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে গেলে রাষ্ট্রপতি মো: জিল্লুর রহমান দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিতে কম বেতন নেয়ার পাশাপাশি গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে একটি আধুনিক ও সময়োপযোগী পাঠ্যসূচি প্রণয়নের মাধ্যমে গবেষণাকর্মে আরো বেশি জোর দেয়ার ওপর বেসরকারি বশ্বিবিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবশ্যই ছাত্র ও শিক্ষকদের সবরকম সুবিধা ও আধুনিক অবকাঠামোগত সুবিধা দিতে হবে। এছাড়াও রাষ্ট্রপতি সারা দেশের গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের অধিক উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে রাজধানীর বাইরে আরো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বারোপ করেছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে তার সর্বাত্মক সহায়তা ও সহযোগিতার ব্যাপারে প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেন।

রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সর্বাত্মক সহায়তা ও সহযোগিতার ব্যাপারে আশ্বস্ত করার পরও প্রত্যেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোন রকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছেমত টিউশন ফি নির্ধারন/বৃদ্ধি করে থাকলেও সেসাথে লেখাপড়ার মান বৃদ্ধির কোন চিন্তাই মাথায় আনছেনা। শিক্ষার্থীদের কী হলো না হলো, কী পেল না পেল-সে হিসাবের দরকার নেই তাদের। তাদের শুধু টাকা আর টাকা চাই। কিভাবে টাকা কামানো যায়-এটাই তাদের একমাত্র চিন্তা। ফি বাড়ালেও সে হিসাবে কিন্ত ছাত্র-ছাত্রী প্রতি (মাথাপিছু) বার্ষিক ব্যয় বাড়ছেনা। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের বছরের চেয়ে শিক্ষার্থী প্রতি (মাথাপিছু) বার্ষিক ব্যয় কমও দেখা গেছে। অর্থ্যাৎ বাড়তি টাকাটা কেবলই তাদের পকেটে চলে যাচ্ছে। টিউশন ফি বাড়ালেও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়াচ্ছেনা। টিউশন ফি বৃদ্ধি তখনই করা প্রয়োজন, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ বৃদ্ধি পায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ বৃদ্ধি পায় তখনই, যখন দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে সব জিনিসের দাম বেড়ে যায়। দাম বেড়ে গেলে শুধুই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই ভুক্তভোগীতে পরিণত হয়না, দেশের সকল নাগরিকেরই ব্যয় বৃদ্ধি পায়। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও বেতন বৃদ্ধি অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাড়ায়। কিন্তু তারা শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির কথা মুখেও আনেনা।

এপিইউবি এর অন্যতম নেতা এবং দ্য ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরীর বক্তব্য হচ্ছে, সরকার থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনো অর্থ বা অনুদান পায় না। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন ব্যয়, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নব্যয় শিক্ষার্থীদের দেয়া অর্থ থেকেই নির্বাহ করা হয়। তাই সর্বোচ্চ সদিচ্ছা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সব ক্ষেত্রে শিক্ষাব্যয় কমাতে পারে না। হাস্যকর! টিউশন ফির অর্ধেক টাকা লোপাট করে এরা, আবার অনুদান! আরে, এরা অনুদান পেলেতো সবটাই গ্রাস করবে। এতো গেল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হালচাল।

বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ফি’র পরিমানের কথা শুনলে কলিজা শুকিয়ে যাবার উপক্রম হবে। রিপোর্ট পড়লে মনে হবে এসব কলেজ ফিরাউনদের দ্বারা স্থাপিত এবং এসব কলেজে যাদের ছেলে-মেয়েরা অধ্যয়ন করবে, তারাও নিশ্চয়ই আরেক ফিরাউন। আর এত টাকা দিয়ে পড়াশোনা করে এসব ফিরাউন বাদশাদের সন্তানেরা যে দেশের মানুষের সেবার পরিবর্তে নিজেদেরকেও ফিরাউনরূপে প্রতিষ্ঠিত করবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এদের কাছ থেকে এ দেশের গরীব মানুষের সেবা পাওয়া দুরাশা মাত্র। যাহোক, দৈনিক সমকালের ০১.১১.২০১১ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের উপর দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে। ঐ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির নামে গলাকাটা ফি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি নিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতানোর তোড়জোড় চলছে। নিয়মনীতি না থাকায় বিভিন্ন কলেজ কর্তৃপক্ষ যে যার ইচ্ছামতো টাকার অঙ্ক হাঁকছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চলতি বছর ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১১’ নামে যে সংশোধিত নিয়মনীতি প্রণয়ন করেছে তাতে ভর্তি ফি নির্ধারণ সংক্রান্ত নির্দেশনা নেই। এদিকে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির শেষ তারিখ (৩১ অক্টোবর) অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আবেদনের শেষ তারিখ নির্ধারণ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এটি শিক্ষার্থীদের চাপে ফেলে বেশি টাকা আদায়ের অপকৌশল। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, সারাদেশে অনুমোদিত ৪৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং ১৩টি ডেন্টাল কলেজ রয়েছে। অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. শাহ আবদুল লতিফ সমকালকে বলেন, বেসরকারি কলেজগুলোর ভর্তির আবেদন গ্রহণের শেষ তারিখ এত কম দেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। তারা আরেকটু ধীরে-সুস্থে কাজটি করতে পারত।

বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, কলেজভেদে শিক্ষার্থীপ্রতি ১২ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ভর্তি ফি চাওয়া হচ্ছে। তার ওপর ভ্যাট, হোস্টেলে সিট ভাড়া, মাসিক বেতন এসব তো রয়েছেই। কোনো কোনো কলেজে সেশন ফি’র নামেও মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা হয়। রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। শিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজে - ভর্তি ফি ১৬ লাখ ৭২ হাজার, হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজে - ভর্তি ফি ১৫ লাখ, ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজে ১৩ লাখ, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজে ১৩ লাখ ছয় হাজার, এনাম মেডিকেল কলেজে ১৪ লাখ, নর্দার্ন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে সাড়ে ১২ লাখ, আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজে ১১ লাখ ৯৮ হাজার, উত্তরা উইমেন্স মেডিকেল কলেজে ১৩ লাখ ২৫ হাজার, সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজে ১৪ লাখ এবং কমিউনিটি মেডিকেল কলেজে ১১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ভর্তি ফি নির্ধারণের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, কলেজগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দালালচক্র বিনা রসিদে কয়েক লাখ টাকা (হিডেন চার্জ) বাড়তি আদায় করে। এই টাকার ভাগ কলেজ কর্তৃপক্ষও পায়। অবশ্য ঢাকার বাইরে অবস্থিত বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি ফি তুলনামূলক কম। অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় বিষয়ে জেড এইচ শিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবু শামীম সমকালকে বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়ানোর উন্নত মান, বিশাল ক্যামপাস, অত্যাধুনিক ল্যাব ও আবাসন সুবিধা অনুপাতে ফি নির্ধারণ করতে হয়। শুধু মাত্র ভর্তি ফি যদি হয় ১১ থেকে ১৫ লাখ টাকা, তাহলে ডাক্তার হতে তাদের মোট কত টাকা খরচ হবে??????????????????????? সব মিলিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেলে পড়াতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয় বলা হলেও এটা কোন সঠিক হিসাব নয়।

একাধিক ভর্তিচ্ছুর অভিভাবক জানান, এককালীন এতগুলো টাকা জোগাড় করতে তাদের গলদঘর্ম অবস্থা। কিস্তিতে ফি পরিশোধের সুযোগ নেই। কলেজ কর্তৃপক্ষ একটু মানবিক হলে অভিভাবকদের পক্ষে অর্থ পরিশোধ করা সহজ হতো। প্রাইভেট মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কলেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন সমকালকে বলেন, বেসরকারি মেডিকেলে পড়ার খরচ একটু বেশি। এ ক্ষেত্রে আসলে কিছু করার নেই। ব্যয় এত বেশি যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কম টাকা নিলে মান বজায় রাখা সম্ভব নয়।

সরকার একাধিকবার ফি নির্ধারণের পদক্ষেপ নিলেও উদ্যোক্তাদের বাধায় সেটি সম্ভব হয়নি।  অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ফি নির্ধারণ করতে চাইলে কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয় মালিকরা, যা অনৈতিক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সিফায়েত উল্লাহ সমকালকে বলেন, ফি নিয়ে নৈরাজ্যের বিষয়টি খুব দুঃখজনক। মানবিক হতে বারবার তাগাদা দিলেও উদ্যোক্তারা তা মানছেন না। এ ধরনের মানসিকতা ক্ষতিকর। আহ! টাকার কি যে ঘ্রাণ তা বোধহয় এসব ফিরাউনরা ছাড়া আর কেউ বেশি জানেনা।

ছাত্র-ছাত্রীদের মাথাপিছু ব্যয়:বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমুহের মধ্যে ক্যাম্পাস মোডে আন্ডারগ্রাজুয়েট কোর্সের জন্য সেমিস্টার প্রতি টিউশন ফি সর্বনিম্ন ১৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬০-৭০ হাজার টাকা এবং পোস্ট গ্রাজুয়েটদের বেলায় সর্বনিম্ন ২০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকার মত। এতে করে একজন ছাত্র-ছাত্রীকে বছরে টিউশন ফি পরিশোধ করতে হয়ে সর্বনিম্ন ৪৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১.৫-২.০ লাখ টাকা। কিন্তু তারা একজন ছাত্রের প্রতি মাথাপিছু বছরে ব্যয় করে সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১.২০ লাখ টাকা। বাকী টাকা কোথায় যায়?

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯২ সালে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন বিষয়ে র্গ্যাজুয়েট কোর্স সমপন্ন করতে শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় হতো গড়ে ৩ লাখ টাকা। বর্তমানেও গড় ব্যয় প্রায় একই। এটা কী করে সম্ভব? এ রকম তথ্য কোথা থেকে আসলো? ১৯৯২ আর ২০১০ বা ২০১১ সাল কী এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে? প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে কয়েকবার করে টিউশন ফি বৃদ্ধি করেছে। এমন কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই, যারা টিউশিন ফি বৃদ্ধি করেনি। অথচ সরকার এবং ইউজিসি বলছে বর্তমানেও গড় ব্যয় প্রায় একই। তাহলে টিউশন ফি বৃদ্ধির আবশ্যকতা কি ছিল? আর এ বর্ধিত অংকের টাকা কোথায় গেল? তাদের (ইউজিসির) সর্বশেষ ঘোষিত তথ্য মতে, ২০০৯ সালে সর্বোচ্চ ব্যয় ছিল ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে মাথাপিছু বছরে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮১৩ টাকা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ছিল যথাক্রমে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা এবং চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (ইউএসটিসি) ১ লাখ ৬ হাজার ১৭৬ টাকা। বছরে যদি এ পরিমান টাকা ব্যয় হয়, তাহলে ৪ বছরের আন্ডারগ্রাজুয়েট কোর্স সমপন্ন করতে কত টাকা প্রয়োজন হয়? গড়ে প্রায় ৬.৫-৭.০ লক্ষ টাকা। আর সবচেয়ে কম শিক্ষা ব্যয় ছিল এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের মাত্র ১৩ হাজার ১৪ টাকা। গত এক দশকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তিনগুণ বাড়লেও এ সময়ে শিক্ষার্থী বেড়েছে কয়েকগুণ।

শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশের ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কমপক্ষে ২২ টি বিশ্ববিদ্যালয় নিছক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করেছেন অনেকে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই চলছে মালিক পক্ষের একচ্ছত্র আধিপত্য। অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগের শেষ নাই। সেগুলোতে নেই পাঠদানের উপযুক্ত পরিবেশ, অবকাঠামো, নেই যোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষা উপকরণ। অথচ বিভিন্ন বাহানায় তারা টিউশন ফি বৃদ্ধি করেই চলছে।

স্কলারশিপ: বর্তমানে বিবিএ, এমবিএ, কমিপউটার সায়েন্স, ইংরেজি, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচারসহ চাহিদার তুঙ্গে বিষয়গুলোতে পড়তে চার বছরে একজন শিক্ষার্থীকে ইউনিভার্সিটি ভেদে সোয়া দুই লাখ টাকা থেকে আট লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা কেবল উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ শতাংশ দরিদ্র ও গরিব শিক্ষার্থী পড়ানোর বিধান থাকলেও বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই এ কাজটি করছে না। সবচেয়ে মজার ব্যপার হলো, বাংলাদেশের বেসরকরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নাকি আবার স্কলারশীপও দেয়! বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশীপের সংজ্ঞা হচ্ছে, টিউশন ফি বা বেতন মওকুফ। এ পদ্ধতিকে যে স্কলারশীপ বলে সেটা জানা গেল বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে।

পাঠাগার: কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সার্কুলারে বা প্রতিবেদনে লক্ষাধিক বই সমৃদ্ধ পাঠাগার আছে বলে দাবী করে থাকে। কিন্তু গুণে দেখলে কমপক্ষে ২৫%-৫০% কম পাওয়া যাবে। আবার জার্নাল, ম্যাগাজিনকেও এ তালিকায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়। দেখা যায়, ভর্তিকৃত এবং উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সঠিক সংখ্যা ২৫-৫০% গোপন করা হয়, আর অবকাঠামো, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি, শিক্ষক সংখ্যা ইত্যাদি প্রতিবেদনে ২৫-৫০% বাড়িয়ে বলা হয়। পাঠাগার বা লাইব্রেরিতে প্রত্যেকটি কোর্সের ১০/২০/৫০/১০০ কপি বই থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু এক একটি সেমিস্টারে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এক একটি কোর্সে ভর্তি করা হয় কয়েকশো থেকে কয়েক হাজার পর্যন্ত শিক্ষার্থী। এতে করে ছাত্র-ছাত্রীরা লাইব্রেরী থেকে পর্যাপ্ত বই পাচ্ছেনা। পাঠাগারে পর্যাপ্ত বই না থাকায় শিক্ষকরা তাদেরকে যা পড়ায় তারই একটি করে সেট বা প্রেসি আকারে ফটোকপি করে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে বিক্রি করে। এতে করে শিক্ষকরা প্রতি সেমিস্টারে বেতনের অতিরিক্ত হাজার হাজার টাকা আয় করে থাকে। অনেক শিক্ষক আছেন, তারা কখনো বেতনই তোলেন না ব্যাংক থেকে। উপরি আয় দিয়েই তাদের সংসার চলে যায়, উদ্বৃত্তও থাকে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় যে কটি প্রশ্ন করা হবে, তার থেকে ২-৪টি বেশি প্রশ্নের উপর পুরো সেমিস্টারে আলোকপাত করা হয়, প্রেসি দেয়া হয়। যে শিক্ষক পাঠদান করে, সেই শিক্ষকই আবার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ, খাতা মূল্যায়ন, গ্রেডিং প্রদান করে থাকে। কাজেই ভাল রেজাল্টের নিশ্চয়তার জন্য আর কি চাই? পাঠদান বা পাঠ গ্রহণেরইবা প্রয়োজন কী?

সার্টিফিকেট বাণিজ্য:ক্যামপাস মোডের বিবিএ, এমবিএ, ইংরেজী ও সিএসই বিভাগে ভর্তিকৃত কোন কোন ছাত্র-ছাত্রী তাদের কোর্স তারাতারি শেষ করার জন্য নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত কোর্স নিয়ে থাকে, আবার কোন কোন ছাত্র তাদের রিটেক ও রিপিট কোর্সসহ ৫-৬টি কোর্সও কোন কোন সেমিস্টারে নিয়ে থাকে। তাহলে এ ৫-৬টি বিষয়ে পড়ার জন্যে তারা প্রতি সেমিস্টারে নির্ধারিত বিষয়ের পড়াশোনা, এসাইনমেন্ট ইত্যাদিতে গড়ে সময় পাচ্ছে তিন মাসেরও কম। কারন ভর্তি হওয়ার পর পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সময় প্রয়োজন। তা তারা পাচ্ছে না। যাহোক, সেমিস্টারের চার মাস থেকে এক মাস গেলে বাকী তিন মাসে তাদের সিলেবাস শেষ করতে হয়। এ দুই অথবা তিন মাসে ৪-৬টি বিষয়ে পড়াশোনা করে অথবা মোটেই ক্লাশ না করে (কোন কোন ছাত্র-ছাত্রী আবার পরীক্ষার পূর্বের দিনও ভর্তি হয়) একজন ছাত্র/ছাত্রী কি করে এ বা এ+ গ্রেড পায়? পায়, কারন যে কয়টি প্রশ্ন পড়ায়, সে কয়টিই পরীক্ষার প্রশ্নে দেয়া হয়। কাজেই বাড়তি পড়ার কোন প্রয়োজনই হয়না। এতে করে একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে ঐসব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অর্জন করা কী সম্ভব? যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আমরা মেধাশূণ্য প্রশাসন পাবো না তো কী মেধাবী প্রশাসন পাবো? কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে, ‘পড়াশোনাই যদি করবেন, তাহলে এত টাকা দিবেন কেন? আপনাদের কিছুই করা লাগবে না। পরীক্ষার সময় বই দেখে লিখে দিয়ে যাবেন, বাকিটা আমরা ম্যানেজ করবো’।

পরীক্ষার হলে ধারনক্ষমতার দ্বিগুন বা তিনগুণ ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকে। ডেকোরেটর থেকে ভাড়ায় খাবার টেবিল ও চেয়ার এনে প্রতি টেবিলে ১০-১২ জন করে পরীক্ষার্থীকে গোল করে বসিয়ে যত্রতত্র পরীক্ষা নেয়া হয়। দেখলে মনে হবে, যেন বিয়ে বাড়িতে দাওয়াতী খাবার খাচ্ছে। এ অবস্থায় যদিও নকলের প্রয়োজন হয় না (কারন এক টেবিলে ১০-১২ জন করে বসার ফলে দেধারছে দেখাদেখি করে লিখছে), তথাপি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা এত ভাল ছাত্র-ছাত্রী যে এক টেবিলে ১০-১২জন বসার পরও তাদের নকলের প্রয়োজন হয়। নকল ধরতে গেলে শিক্ষকদেরকে মারধোর করে এবং বলে যে, ‘টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট নিতে আসছি, তুই (শিক্ষকদেরকে) নকলে বাঁধা দেবার কে? তোকে (শিক্ষকদেরকে) নকল ধরতে বলেছে কে? এসবই হচ্ছে বাস্তবতা। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক কর্তৃক ঐ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী ব্যবস্থাও গ্রহণ করা সম্ভব হয়না। কারন একদিকে শিক্ষার্থী কর্তৃক ভয়ভীতি প্রদর্শন, জীবননাশের হুমকী, অন্যদিকে চাকুরী হারাবার ভয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত আকারে অভিযোগ করে যে জবাব পাওয়া যায়, তাহলো ‘আপনারা (শিক্ষকদেরকে) সবই বুঝেন, তাই সবকিছু ম্যানেজ করে চলেন। তাদের (শিক্ষার্থীদের) টাকায় বিশ্ববিদ্যালয় চলে, তাই চোখ-নাক-মুখ বুঝে সহ্য করেন, নয়তো পাততারী গুটান’। পরীক্ষায় শিক্ষক ঘাটতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা (এ সংখ্যা খুবই কম) ও কর্মচারী (তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী) দ্বারা পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হয়। পরীক্ষার হলে যাদের পানি সরবরাহের কথা, তারাও ........।

অহরহ প্রশ্নপত্র ও পরীক্ষার খাতা ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে চলে যায়। যে শিক্ষক পাঠদান করে, সেই শিক্ষকই আবার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ, খাতা মূল্যায়ন, গ্রেডিং প্রদান করে থাকে। ফলে যেসব ছাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলে পাশ করাই দায় হতো, তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়। দেখা যায়, তাদের এসএসসি ও এইচএসসিতে তৃতীয় বিভাগ অথবা কমপার্টমেন্টাল। অথচ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স, মাস্টার্সে ভর্তি হলে এ গ্রেড অথবা এ+ গ্রেড পায়। চাকুরীর ইন্টারভিউ বোর্ডে তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সে নিরুত্তর থাকে। তাছাড়া তাকে তার পঠিত বিষয়েও প্রশ্ন করা হলে তার কোন জবাব দিতে পারেনা। কারন সে লেখাপড়া করে পাশ করেনি, তাই জবাবও দেয়া সম্ভব হয়না। ফলে সে বিপাকে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তার নম্বর ফর্দ ও সনদ পত্রে গ্রেড কমিয়ে দেয়ার অনুরোধ করে বলে জানা যায়।

আরো জানা যায়, উত্তরায় অবস্থিত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা এত বেশি যে, তাদের একটি নিজস্ব ভবন এবং ৩টি ভাড়া করা ভবনেও স্থান সংকুলান না হওয়ায় উত্তরার আজমপুরস্থ নবাব হাবিবুল্লাহ স্কুল এন্ড কলেজকে শুক্র ও শনিবারের জন্য ভাড়া নিয়ে ক্লাশ ও পরীক্ষার কাজে ব্যবহার করে আসছে। সে সুবাদে ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষকে দুরশিক্ষণ বিভাগের খন্ডকালীন সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। বিষয়টি আমাদের অর্থনীতি নামক একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ময়মনসিংহ কেন্দ্রের দূর্ণীতির ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বরাবর ঐ কেন্দ্রের ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ অভিযোগ করেছেন যে, ময়মনসিংহ শাখায় ভাল ফলাফল প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে শিক্ষকরা যে গ্রেড সীট জমা দেয়, সেই গ্রেড আবার কো-অর্ডিনেটর কর্তৃক পরিবর্তন করে উচ্চতর গ্রেড দিয়ে ঢাকাস্থ মেইন ক্যাম্পাসে জমা দেয়া হয়। পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে উপস্থিতি দেখিয়ে পরীক্ষার গ্রেডশীট প্রদান করা হয়। দেশে-বিদেশে চাকুরীরত ও অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও মোটা অংকের টাকা নিয়ে পরীক্ষা ছাড়াই ফলাফল প্রদান ও সনদ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কেউ আবার পরীক্ষার সময় লন্ডনে অবস্থান করলেও তার কাছ থেকে টাকা খেয়ে ফলাফল প্রদান করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগে জানিয়েছেন। কিছু কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বলে দেওয়া হয় যে, পরীক্ষার প্রশ্ন যা-ই হোক না কেন, যে ৪/৫টি প্রশ্নের নোট দেয়া হয়েছে, তা-ই উত্তরপত্রে লিখে দিতে হবে। শিক্ষার্থীরাও তা-ই লিখে দেয়। প্রত্যেক পরীক্ষা স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় কোন রকম আসন ব্যবস্থা নির্ধারন থাকে না। সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত ফি ১০০+১০০ মোট ২০০ টাকা হলেও কো-অর্ডিনেটর কর্তৃক প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর নিকট থেকে ৭০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছিল। নিয়োগকৃত খন্ডকালীন শিক্ষকদের বেতন থেকে কমিশন বাবদ একটা অংশ কো-অর্ডিনেটর কেটে রাখেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরকে না জানিয়ে তাদের নিয়োগ দেখিয়ে টাকা নেয়া হয়, কিন্তু ক্লাশ করানো হয় কো-অর্ডিনেটরের ইচ্ছানুযায়ী অন্য শিক্ষক দিয়ে, যাতে সে ইচ্ছানুযায়ী বেতন দিতে পারে।

একটি ব্লগে উচ্চশিক্ষার ফেরিওয়ালা শিরোনামে একজন লিখেছেন, খুলনায় অবস্থিত একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক একটা কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিতেন। কোচিং থেকে তাকে দেওয়া হতো মাসে মাত্র ১৫শত টাকা। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনি কি আপানার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো বেতন পান না? উনার উত্তর ছিল, ভালো বেতন পাইলে কি আর এই কোচিংয়ে ১৫শ টাকার জন্য আসতাম? এরপর তাকে জিজ্ঞাস করা হয়েছিল, ভালো বেতন না দিলে তো ভালো শিক্ষক পাওয়া সম্ভব না। তার উত্তর ছিল, যেখানে কোন কিছু শেখানোরই দরকার নেই, সেখানে ভালো শিক্ষক দিয়ে কি করবেন? ঐ শিক্ষককে একদিন পরীক্ষার হল থেকে বহিস্কার করা হয় এজন্য যে, তিনি একজন ছাত্রকে বলেছিলেন বইটা টেবিলের উপর না রেখে ডেস্কের ভিতরে রেখে নকল করতে। অন্য এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মন্তব্য এমন ছিল, আমি এত কষ্ট করেও একটা প্রশ্ন লিখে দশের মধ্যে আট পাইনি (সে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করা) কিন্তু আমার আবাল ছাত্র-ছাত্রী যারা পাশ করারও যোগ্য না তাদেরকে দশের মধ্য সাড়ে নয় না দিলে আমার চাকরি থাকে না। ঐ শিক্ষক পরীক্ষার দু-একদিন আগেই প্রশ্ন দিয়ে দেন, যা সাধারণত: খুলনার সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের শিক্ষকরাই করে থাকেন। আর কোন উদাহরন দেয়ার প্রয়োজন আছে কী? তথাপি উদাহরন হিসাবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হলো।

০৫ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখের বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পাঠানো ফাউন্ডেশনের ১৫ মে-র এক গোপন মেমোতে শিক্ষার্থীদের ঘন ঘন গ্রেড পরিবর্তনসহ বেশ কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে। বিবিএর ছাত্র এম রেজাউল হকের (আইডি: ০৪৩ ১৬৫০৩০) গ্রেড তিনবার পরিবর্তন করা হয়েছে। ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ‘বি(-)’, ২২ ফেব্রুয়ারি তা বদল করে ‘বি(+)’ এবং ৩১ মার্চ পুনরায় বদল করে ‘বি’ করা হয়েছে। গ্রেড পরিবর্তনের সবগুলো শিটেই ফ্যাকাল্টি প্রধান ও ডিন হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ এবং বিবিএর চেয়ারম্যান/পরিচালক আবদুল হান্নান চৌধুরীর স্বাক্ষর রয়েছে। এ ছাড়া অস্বাভাবিকভাবে দীর্ঘ সময় আটকে রেখে ৩২ জন শিক্ষার্থীর গ্রেড প্রকাশ করা হয়। পরিচালনা পর্ষদের সভায় বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এ ছাড়া স্কুল অব বিজনেস দুর্নীতিবাজ চক্রের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে খ্যাতিমান শিক্ষকদের নানা কূটকৌশলে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ডের কোনো অধ্যাপকই এখানে নেই। বর্তমান পরিচালক পরিসংখ্যান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ফ্যাকাল্টি-প্রধান ও ডিন গোলাম মোহাম্মদ পড়েছেন অর্থনীতি নিয়ে। তাদের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ থাকলেও উপাচার্যের সমর্থনে তারা বহাল তবিয়তে। অর্থনীতির ৩২ শিক্ষার্থীর সামার ২০০৮ গ্রেডশিট ওই বছর ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত হালনাগাদ করা হলেও তা আটকে রেখে ১৪ মাস পর প্রকাশ করা হয়। এ ফ্যাকাল্টির প্রধানও গোলাম মোহাম্মদ। বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। বিশেষ করে ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এখানে সন্তানদের ভর্তি করাতে পারলে বর্তে যান। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হলো, ভর্তি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়েও প্রতি সেমিস্টারেই দেড় থেকে দুইশত শিক্ষার্থী অতিরিক্ত পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকায় এখানে ভর্তির সুযোগ পান। বিষয়টি প্রশাসন ও পরিচালনা পর্ষদের প্রভাবশালী সদস্যদের বৈধ আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে অভিযোগ উত্থাপিত হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব ক্যামপাস অন্য যে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বড় ও দৃষ্টিনন্দন। তবে ৩০০ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয়ে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নির্মাণকাজে জড়িত একজন কর্মকর্তা এমন দাবি করে বলেন, নিরপেক্ষ তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হবে। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে টাকার বিনিময়ে অবৈধ এডভাইজিং। নতুন সেমিস্টারে শিক্ষার্থীরা কোন কোর্স নেবে তা-ই এডভাইজিংয়ে ঠিক হয়। এ জন্য সময় নির্ধারিত থাকলেও পাসওয়ার্ড জাল করে পছন্দের শিক্ষকদের কোর্স পাইয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ইসরাত জাহানের তদন্তে শতাধিক অবৈধ ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে। তবে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টতা থাকায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগ: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল টাইম বা পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগের সময় কাকে কত কম বেতনে নিয়োগ দেয়া যায়, সেটাই মূখ্য বিষয়। অভিজ্ঞ শিক্ষক, বেশি বেতন এটাই চিরন্তন সত্য। কিন্তু এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম বেতন, অনভিজ্ঞ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অযোগ্যদেরকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। আজকাল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন কোনটির বেতন-ভাতার পরিমান সন্তোষজনক, কিন্তু অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েরই বেতনভাতার পরিমান এতটাই কম যে, এগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় না বলে কোন কোচিং সেন্টার কিংবা কেজি স্কুল বলা যেতে পারে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান এতটাই খারাপ যা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এরও কারন আছে। তাহলো বেকার সমস্যা। দেশে বর্তমানে বেকার সমস্যা এতটাই প্রকট যে, যে যেখানে যেভাবে পারছে ঢুকে পরছে। পেট বাচাতে হবে। পরিবার বাচাতে হবে। কারন লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে অভিভাবকরা একটা নিরাপদ ভবিষ্যত রচনা করার জন্যইতো ছেলেমেয়েদেরকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। কোন কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষক আছেন যাদেরকে কিন্ডারগার্টেনের মত ৫-৭ হাজার টাকা বেতন দিয়ে তাদেরকে বিভাগীয় প্রধান বানিয়ে দেয়া হয়। এসব শিক্ষকের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবার মত কোন যোগ্যতাই নেই। কারন তাদের অনার্সে প্রথম বিভাগ নেই, অথবা কোনটিতেই প্রথম বিভাগ নেই। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনও শিক্ষক আছেন, যারা অনার্স করেছেন বাংলায়, মাস্টার্স করেছেন ইংরেজিতে। কিন্তু তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে। নিয়মানুযায়ী অনার্সের মূল বিষয়ই শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হিসাবে মূল্যায়ন করার কথা থাকলেও কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্ন বেতনের বিষয়টি মাথায় রেখে অযোগ্যদেরকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের বারোটা বাজাচ্ছে। এসব অযোগ্যদেরকে দিয়ে মানসমপন্ন শিক্ষাসেবা আশা করা কি যুক্তিযুক্ত? এ বিষয়ে প্রতিবেদনের পর্ব-১ এ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক মান্নান সাহেবের লেখার উপর আলোচনা করা হয়েছে।

পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগের চুক্তিনামা: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশই এক সেমিস্টার, দুই সেমিস্টার বা এক বছরের জন্য সাময়িকভাবে, যা মেয়াদ শেষে কর্তৃপক্ষের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে নবায়নযোগ্য ও বেতন বৃদ্ধি করা হবে অথবা স্কেল প্রদান করা হবে এ আশ্বাস দিয়ে চুক্তিতে নিয়োগ করা হয়ে থাকে। চুক্তিতে এটাও উল্লেখ থাকে যে, এ সময়ের মধ্যে বা কোন সেমিস্টারের মাঝখানে চাকুরী ত্যাগ করা যাবেনা। চাকুরী ত্যাগ করতে চাইলে তাকে ক্ষতিপুরণ বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পরিশোধের বিনিময়ে চাকুরী ত্যাগ করা যাবে। আর এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সার্ভিস রুলস না থাকায় ৩-৪ পৃষ্ঠার এক একটি নিয়োগপত্র এবং সংযুক্তি হিসাবে আরো ৬ থেকে ৭ পৃষ্ঠার বিভিন্ন শর্তাবলী সম্পন্ন নির্দেশনা ও চুক্তিনামাসহ মোট ৮ থেকে ১০ পৃষ্ঠার একটি নিয়োগপত্র দেয়া হয়। কেউ কি কখনো ৮-১০ পৃষ্ঠার নিয়োগপত্রের কথা শুনেছেন? বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে ৩ থেকে ১০ পৃষ্ঠার নিয়োগপত্রের মাধ্যমে তাদেরকে দাসত্বের শৃংখলে বন্দী করা হয়। কিন্তু কেন প্রয়োজন এত বড় নিয়োগ পত্রের? কারন একটাই। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কোন সার্ভিস রুলস নেই। সার্ভিস রুলস থাকলে এসবের প্রয়োজন হয়না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্ভিস রুলস আছে কি নেই, সেটাতে ইউজিসি বা সরকারের কোন মাথাব্যাথা নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্ভিস রুলস এর প্রয়োজন হয়না। তাই এ বিশাল সাইজের নিয়োগপত্রই তাদের সার্ভিস রুলস। বেশিরভাগ শিক্ষকের চাকুরী নবায়ন বা বছর শেষে বেতন বৃদ্ধির সময় এলেই তাদেরকে বিভিন্নভাবে আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয়া হয় যে, তাদের আর প্রয়োজন নেই। তাই এসব শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছেন, নয়তো মুচলেকা দিয়ে অবহেলিতভাবে রয়ে যাচ্ছেন। নতুন শিক্ষকদের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন এক একটা ট্রেনিং সেন্টার । এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি জমায়। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবার কম বেতনে নিয়োগ দেয় নতুন শিক্ষক খোজে। এটা যেন একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয় ছাত্র-ছাত্রীদের। তারা কোনকালেই অভিজ্ঞ শিক্ষকের কাছ থেকে পাঠ গ্রহণ করতে পারেনা। তারা আবার নতুন শিক্ষক, নতুন করে পরিচয়, নতুন করে পড়ার স্টাইল ইত্যাদি রপ্ত করতে করতেই সেমিস্টার শেষ। এটাই হচ্ছে বাস্তব চিত্র।

পূর্ণকালীন শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি: কোন কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউর সময় প্রথমেই প্রশ্ন করে থাকেন, কত টাকা বেতন চান। ইন্টারভিউর প্রথম প্রশ্নটাই যদি হয় এরকম, তাহলে আর কি বলার আছে? যে প্রশ্নটি সবকিছুর শেষে আসার কথা, সেটাই যদি হয় প্রথম প্রশ্ন, তাহলে আর যোগ্য ও মানসমপন্ন মেধাবী শিক্ষকের আশা করা যায় কি? এমনিতে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কনসোলিডেটেড বেতনে নিয়োগ দিয়ে থাকে। অনেক শিক্ষক আছেন যাদেরকে কেজি স্কুলের মত ৫-৭ হাজার টাকা বেতন দিয়ে আবার তাদেরকে বিভাগীয় প্রধান বানিয়ে দেন, যাতে তারা অল্প বেতনে বড় পদ ভোগ করতে পারেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিকভাবে লাভবান হলেও যে সব শিক্ষার্থীর টাকায় তারা লাভবান হলেন, সেসব শিক্ষার্থীরা কি পেল? তাছাড়া, ৫ থেকে ৭ বা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় একজন শিক্ষকের পক্ষে বতর্মান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে কিভাবে জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব? কোন কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার একাধিক পে-স্কেল থাকে। দেখায় এক স্কেল আর প্রদান করে আরেক স্কেলে। যেখানে সরকার বাড়ী ভাড়া ভাতা দেয় সর্বোচ্চ ৬৫% সেখানে কোন কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেয় মাত্র ৪০-৪৫%। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন চাকুরী বিধিমালা নেই, আর্থিক বিধিমালা নেই এবং কেউ তৈরিও করেনা। আর প্রয়োজনও হয়না। কারন দেখারতো কেউ নেই। ইউজিসি আর মিনিস্ট্রিরও এ ব্যাপারে কোন মাথাব্যাথা নেই। মিনিস্ট্রি হচ্ছে সার্টিফিকেট বিক্রির লাইসেন্সদাতা। আর ইউজিসির দায়িত্ব হচ্ছে সার্টিফিকেটগুলো বিক্রি হচ্ছে কি না, তা দেখভাল করা। তাদের এটা দেখার দায়িত্ব নয় যে, ২০১১ সালে এসে এখনো কোন কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন বেতন হচ্ছে ১৪ শত টাকা এবং সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা। ইউজিসি এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। কারন তাদেরকে মাসোহারা দিয়ে তাদের নাকের ডগায়ই এসব অপকর্মগুলো করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছেতো ১৯৯২ সাল এবং ২০১১ সাল একই। তাদের কাছে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৯২ সালের শিক্ষার্থীপ্রতি গড় ব্যয় এবং বর্তমান গড় ব্যয়ও প্রায় একই। কাজেই ১৯৯২ সালে ১৪০০ টাকা বেতন দিলে ২০১১ সালে দিতে দোষেরতো কিছু নেই। যেহেতু ব্যয় প্রায় একই, তাই বেতনও একই থাকবে, এটাতে আশ্চর্য্য হবার কি আছে? জানা যায়, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৩ সালে সর্বনিম্ন বেতন স্কেলে মূল বেতন ছিল ২ হাজার টাকা আর ২০০৭ সালে এসে নতুন স্কেলে মূল বেতন করেছে ১৪০০ টাকা। সরকার ২০০৯ সালে নতুন পে-স্কেল প্রদান করলেও প্রায় ৩ বছর অতিক্রান্ত হবার পরও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশই তাদের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন এক টাকাও বৃদ্ধি করেনি। উপরন্তু কমিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে একটা সুত্র নিশ্চিত করেছে। এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মকচারীদের বেতনের শণৈ শণৈ উন্নতি! এভাবেই ঘটছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কতটা মানবেতর জীবন-যাপন করছে, তা দেখার কেউ নেই। ৫১টির মধ্যে অবশ্য হাতে গোনা ২/৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৯ সালে সরকার কর্তৃক নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করার পর তাদের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১৫ থেকে ৩০% পর্যন্ত বাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। তাও ১-২ বছর পরে। বাকীরা পারলে কমিয়েছে এবং এর প্রমাণ আছে।

ইউজিসি চেয়ারম্যানের দাবী, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার  অনুমোদনপত্র প্রদান করা হয়ে থাকে। মঞ্জুরী কমিশন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে (শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে) শুধুমাত্র সুপারিশ বা মতামত দিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করা’। দেশের কোথায় কোন্‌ স্থানে কোচিং সেন্টার গড়ে উঠলো, অননুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলো তা দেখার দায়িত্ব সরকারের তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের নয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন অধ্যাদেশের কোন ধারাতেই এই দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের উপর ন্যস্ত করা হয়নি। বিগত কোন সরকারই অবৈধভাবে স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা অন্ততপক্ষে জনসাধারণকে বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেছি-এখন উক্ত অবৈধ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ও পড়ালেখা করা না করা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকের ব্যাপার। (সূত্র: ৫৬ বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধ অত:পরঃ দৈনিক ইত্তেফাক, জুন ১১, ২০০৭)। প্রশ্ন হচ্ছে ইউজিসি শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করছে কি? যদি করেই থাকে, তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া নিয়ে এত প্রশ্ন উঠবে কেন? আসলে মিনিস্টি এবং ইউজিসির বড়বাবুরা উপর দিয়ে একটু হম্বিতম্বি করে, তলে তলে আবার নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে, আরও এক নতুন ক্যাম্পাস ও কমপ্লেক্সের ফিতা কাঁটতে যান। তারপরে আরও ছাত্র ভর্তি, আরও টাকা আরও..........., মিনিস্ট্রি এবং ইউজিসির বড়বাবুদের পকেট ভর্তি ইত্যাদি ইত্যাদি।

মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসিকে দেখায় একজন আর নিয়োগ দেয় আরেকজন:একটা সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, একটা বিশ্ববিদ্যালয় বিএসএস (অনার্স) এবং এমএসএস ইন সোশ্যাল ওয়েল ফেয়ার কোর্স দুটি অনুমোদনের জন্যে ইউজিসিতে প্রেরিত নিয়োজিতব্য শিক্ষকদের তালিকায় বিভাগীয় প্রধান হিসাবে ১ জন প্রফেসরের নামসহ ৪ জনের নাম প্রেরণ করা হয়েছিল। কোর্স দুটো অনুমোদন দেয়ার পর তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে শিক্ষকদের তালিকায় ঐ ৪ জনের কারো নামই পাওয়া যায়নি। ঐ একই বিশ্ববিদ্যালয় এরকম আরো কিছু প্রোগ্রাম বা কোর্স অনুমোদনের সময় শিক্ষক হিসাবে যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল, তাদের কাউকেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়নি। একইভাবে এমএসএস ইন ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট বিষয়েও একই ঘটনার পুনুরাবৃত্তি ঘটানো হয়েছে। এ বিষয়টি অনুমোদনের সময় প্রস্তাবিত শিক্ষকদের তালিকা থেকে যাকে ইউজিসি অনুপযুক্ত ঘোষণা করেছে, ঐ বিশ্ববিদ্যালয়টি কোর্স অনুমোদনের পর ঐ অযোগ্য ঘোষিত ব্যক্তিকেই প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। ঐ ব্যক্তির শিক্ষক হবার কোন যোগ্যতাই নাকি নাই-একটি সূত্র এরকমই দাবী করছে। প্রভাষক হিসাবে যোগদানের পূর্বে তিনি নাকি কোন একটা প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক পদে কর্মরত ছিলেন। তার কোন একাডেমিক অভিজ্ঞতাই নাই। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএসএস ইন ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের খন্ডকালীন শিক্ষকদের কেউই কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নয়, সবাই কোন এনজিও, সংস্থা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী। শিক্ষক নিয়োগের এ পদ্ধতির বিষয়টি অনুসন্ধান করে জানা গেল, ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রস্তাবিত বা নিয়োগকৃত সকল শিক্ষকদের কাছ থেকে নাকি Inability to Join as Lecturer বিষয় উল্লেখ করে I am sorry to inform you that due to my personal and family difficulties, I am not in a position to join your university as Lecturer in the Department of ....... though, I gave my consent to join the University by my letter dated ........ এরকম একটি কাগজে অগ্রীম সই নিয়ে রেখে এসব ব্যক্তিদেরকে অফার করে প্রস্তাাবনায় তাদের নাম অন্তর্ভূক্ত করে দেয়া হয় বা নিয়োগ দেয়া হয়, যাতে তাকে নিয়োগ না দিলেও বা নিয়োগের পর চাকুরী থেকে টার্মিনেট করা হলেও কোন আপত্তি উত্থাপন করতে না পারে। এসব শিক্ষকের কাছ থেকে নিশ্চয়তা নিয়েই তাদের নাম প্রস্তাব করা হয়, যাতে কোর্স অনুমোদনের পর তাদেরকে নিয়োগ না দেওয়া সত্বেও তাদের কারো তরফ থেকে কোন প্রতিবাদ বা উচ্চবাচ্চের খবর না পাওয়া যায়। অথবা কোর্স অনুমোদনের স্বার্থে শুধুমাত্র অফার করে তাদের নাম ব্যবহার করা হবে-এ মর্মে তাদের সাথে কোন আপোষ চুক্তি করা হয় বলে ধারনা করা হচ্ছে। তাই প্রস্তাাবনায় যাদের নাম থাকবে, তাদেরকে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স অনুমোদনের পর কমপক্ষে ২ থেকে ৩ বছর চাকুরী করার বাধ্যবাধকতার নির্দেশনা দিতে হবে সরকার বা ইউজিসি কর্তৃক। নতুবা নতুন কোর্স বা প্রোগ্রাম অনুমোদনের স্বার্থে এ ধরনের অনুশীলন চালাতেই থাকবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নামধারী সনদ ব্যবসায়ীরা। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা।

খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ:বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটা বড় অংশ হচ্ছে খন্ডকালীন শিক্ষক। যদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবী করে যে, তাদের ৭০-৮০ শতাংশ শিক্ষক পূর্ণকালীন। কথাটা ঢাহা মিথ্যা। আর খন্ডকালীন শিক্ষকদের একটা অংশ হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাদের মধ্যে কোন কোন শিক্ষক একেকটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩-৪টি করে কোর্সে পাঠদান করেন। এভাবে একেকজন শিক্ষক কমপক্ষে ৩-৪টি থেকে ৭-৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও পাঠদান করে থাকেন। এতে তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা ঠকছে। তারা না পারছে ঘর সামলাতে না পারছে পর সামলাতে। ফলে সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানের সাথে সাথে মেধাবীদের মেধা বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। লাভের মধ্যে যা হচ্ছে, তা হলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে সাথে এসব শিক্ষকরাও প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে রাতারাতি কেউ কেউ কোটিপতিও বনে গেছেন। অপর একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, উত্তরাস্থ ঐ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকার তিনটি স্থানে অবস্থিত ক্যাম্পাস এবং রাজশাহী ও খুলনায় দুটি আউটার ক্যাম্পাস (১৬টি আঞ্চলিক কেন্দ্র বাদে) মিলিয়ে ১০-১৫ সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পূর্ণকালীন শিক্ষক সংখ্যা মাত্র ১২০-১৩০ জন, যার আনুপাতিক হার হচ্ছে ১ জন শিক্ষক : ৯০-১০০ জন শিক্ষার্থী। আর তাদের খন্ডকালীন শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৭০০। দেখা যাচ্ছে, পূর্ণকালীন শিক্ষকের থেকে খন্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা ৫-৬ গুন বেশি। অথচ তাদের দাবী হচ্ছে, তাদের ৮০% শিক্ষক পূর্ণকালীন। এ বিশ্ববিদ্যালয়টির বিএড ও এমএড প্রোগ্রাম দুটির বিভাগীয় প্রধান একজন (তিনি না পূর্ণকালীন না খন্ডকালীন, হিজড়া টাইপের)। এর বিপরিতে খন্ডকালীন শিক্ষক আছেন কমপক্ষে ৩০-৪০ জন। একইভাবে সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার (বিএসএস ও এমএসএস), বাংলা (বিএ এবং এমএ), ইসলামিক হিস্ট্রি এন্ড সিভিলাইজেশন (বিএ ও এমএ), সোশিওলোজি এন্ড এনথ্রোপলোজি (বিএসএস ও এমএসএস) বিভাগসমুহের বিভাগীয় প্রধানও একজন করে (প্রভাষক কিংবা সহকারী অধ্যাপক) এবং পূর্ণকালীন শিক্ষক সংখ্যা ঐ ১ জনই৷ সরকারি নিদের্শনা অনুযায়ী প্রতিটি কোর্সের জন্য কমপক্ষে ৪ জন পূর্ণকালীন শিক্ষক থাকার বিধান থাকলেও এই একজন পূর্ণকালীন শিক্ষক দ্বারা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্সের সকল দায়িত্ব পালন করা কি সম্ভব? অথচ তারা নাকি ইউজিসিতে যে প্রতিবেদন পাঠায় সেখানে প্রত্যেক বিভাগে ৪ জন করে শিক্ষক দেখায়, যাদের মধ্যে ঐ একজন বাদে সবাই কাগুজে পূর্ণকালীন শিক্ষক। বাস্তবে খন্ডকালীন। এসব খন্ডকালীন-কাম-পূর্ণকালীন শিক্ষকদের বেতন মাসিক ৬ হাজার টাকারও নীচে। এ বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি সরকার ও ইউজিসিকে ধোকা দিতে সিদ্ধহস্ত বলে সকলেই জানে, অথচ তিনি ইসলাম নিয়েও ঘাটাঘাটি ও অনেক লেখালেখি করে থাকেন। এ বিষয়ে ইউজিসিরতো কোন করনীয় নেই বা কিছুই করার নেই। ইউজিসির অন্যতম কাজ হচ্ছে এসব প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রতিবেদনগুলো বেধে বালিশ বানিয়ে অফিসে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা। আরো জানা যায়, এ বিশ্ববিদ্যালয়টি কোনকালেই আউটার ক্যাম্পাস এবং দূরশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনা। অথচ তারা তাদের আউটার ক্যাম্পাস ও দূরশিক্ষণ কেন্দ্রে বছরে (৩টি সেমিস্টারে) কমপক্ষে ১০-১৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করে থাকে। এসব ছাত্র-ছাত্রী কি বৈধ না অবৈধ? ইউজিসি নাকি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে শুধুমাত্র ক্যাম্পাস মোডের ছাত্র-ছাত্রীদের হিসাব চেয়ে থাকে।

আবাসন ও পরিবহন:প্রায় অর্ধশত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই। নেই আবাসিক হল ও যাতায়াতের জন্য নিজস্ব যানবাহন ও পরিবহন সুবিধা। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১-২টা মাইক্রোবাস আছে। লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদেরকে কতটুকু সুযোগ সুবিধা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো দেয়? দেশের ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে (বাকীগুলো নাযায়েজ! তাই হিসাবে ধরা হয়নি)। এদের অধিকাংশই এসেছে মফস্বল বা গ্রামগঞ্জ থেকে। এদের মধ্যে স্বল্পসংখ্যক আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে বসবাস করলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদেরই আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আশেপাশে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিতে গড়ে উঠা কিছু ছাত্রাবাসই হচ্ছে তাদের ঠিকানা । বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল না থাকায় আবাসন ও যাতায়াত খাতে শিক্ষার্থীদের যেমন অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে, তেমনি নিরাপত্তা ঝুঁকিতেও থাকতে হচ্ছ তাদেরকে। এজন্যে এক একজন শিক্ষার্থীকে গুনতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা, যা ঐসব ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবকদেরকেই বহন করতে হচ্ছে।

শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা:বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে তেমন কোন প্রতিযোগিতা না থাকলেও প্রতিযোগিতা চলছে বিলাসিতার নানা উপকরণ দিয়ে অফিস এবং শ্রেণী কক্ষ সাজানোর। বিদেশী কাপড়ের পর্দা, সোফা, চেয়ার-টেবিল এবং মেঝের টাইলসের পেছনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়, ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার জন্য সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, গবেষণাগার, খেলার মাঠ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার পিছনে তার সিকিভাগও ব্যয় করছেনা। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আকৃষ্ট করতে শ্রেণী কক্ষে এয়ারকুলার বা এয়ারকন্ডিশনার লাগানোর ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকগণ যতটা আগ্রহী, ল্যাবরেটরীতে নিত্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের ক্ষেত্রে ততটা আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়না। এর ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীগণ বিলাসিতাপূর্ণ জীবনের স্বাদ পাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মানসমপন্ন শিক্ষা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। এতে করে তারা বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ার কারনে ভবিষ্যতে তাদের আয়ের সাথে সঙ্গতি না থাকলে অবৈধ উপায়ে, দূর্ণীতির মাধ্যমে আয়ের পথ প্রশস্ত করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের কোন সরকারি বা বেসরকারি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস ও শ্রেণীকক্ষ সুসজ্জিত ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলেও বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তা বহুলাংশে বিদ্যমান। টিউশন ফি বৃদ্ধির এটাও একটা কারন। আর এ বর্ধিত টিউশন ফি কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদেরই বহন করতে হয়, ফলে দেশের নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানদের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন প্রায় সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।

ইন্টারনেট ও ২০.০৬.২০১১ ইং তারিখের সমকাল পত্রিকার খবরে জানা যায়, গত মার্চে ভূমিকম্প ও সুনামিতে প্রায় ধ্বংসস্তপে পরিণত হয়েছিল জাপান। বর্তমানে দেশটি যখন ভূমিকম্প, সুনামি ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিপর্যয়ের ত্রিমুখী সংকটে আবর্তিত, তখন সংযম আর দেশপ্রেমের অনন্য নজির স্থাপন করল জাপানিরা। চলমান বিদ্যুৎ সংকটে দেশটির শিল্পখাতকে বাঁচাতে এই গরমের মধ্যেও ৪১টি রাজ্যে স্বপ্রণোদিত হয়েই এয়ারকন্ডিশনার (এসি) না চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন সে দেশের নাগরিকরা। বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় শুধুমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতে অচিরেই এয়ারকুলার বা এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহারের প্রতিযোগিতা বন্ধ করা প্রয়োজন। বিদ্যুতের অভাবে দেশে বর্তমানে প্রতিদিন সাধারণ জনগনের জীবন-যাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। জাপানি নাগরিকরা যেখানে স্বপ্রণোদিত হয়ে এয়ারকন্ডিশনার (এসি) না চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে আমরা কী পারিনা জাপানিদের দৃষ্টান্ত অনুকরণ করতে? উচ্চবিত্তরা এ পথে হাটবেননা তা জানি, তাই সরকারি-বেসরকারি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তুলে দিয়ে বিলাসিতা পরিহার করার জন্য সরকারি নির্দেশনা দেয়া এখনই প্রয়োজন। এতে করে বিদ্যুতের ঘাটতি অনেকটাই কমে যাবে, সে সাথে টিউশন ফিও কমলে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরাও নাভিশ্বাস অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে। জনগনেরও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে। সরকারও শান্তিতে থাকতে পারবে। কারন সরকারের সামনে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানই বর্তমান চ্যালেঞ্জ। আশা করি এ পদক্ষেপটি সরকার গ্রহণ করবে।

ইতোমধ্যেই গরমের দিনে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য অফিস আদালতে এয়ারকন্ডিশনার (এসি) বন্ধ রেখে সকলকে কোট, টাই, স্যুট পরিধান পরিহার করে সাধারন পোশাকে (প্যান্ট-শার্ট) অফিস করতে নির্দেশনা জারী করেছিল সরকার । কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। বাংলাদেশে সরকারি নির্দেশনা আর কানের কাছে মাছির ঘ্যানর ঘ্যানর একই কথা। কেউ আমলে নেয়না। এই যে, এত কথা বললাম, তার ফলাফল কী? সমাধান কী? কেউ কি জানাবেন?

ব্লগে মন্তব্য করুন অথবা মেইল করুন: sangsaptaka@rocketmail.com

No comments