বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: প্রাসঙ্গিক ভাবনা-৫
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন একটি পর্যালোচনা
[AN OBSERVATION OF ANNUAL REPORT OF PRIVATE UNIVERSITIES]
২০১০ সাল দেশে ১০টি শিক্ষা
বোর্ডের অধীন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৭ লাখ ১৮ হাজার ৮৪ জন শিক্ষার্থীর
মধ্যে পরীক্ষায় পাস করে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৩৬৯ জন। পাসের হার ৭৪
দশমিক ২৮ ভাগ। এ বছর ২০১১ সালে ১০টি শিক্ষা বোর্ডে মোট ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৮২৮ জন পরীক্ষার্থীর
মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৫ লাখ ৭৪ হাজার ২৬১ জন। পাশের হারে তেমন
কোন পরিবর্তন না হলেও জিপিএ-৫.০ পেয়েছে ৩৯ হাজার ৭৬৯ জন, যা ২০১০ সালের চেয়ে ১০ হাজার ৭৬৫ জন বেশি। ২০১০ সালে পেয়েছিল
২৯ হাজার ৪ জন। সে যাহোক, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে
অনার্স প্রথমবর্ষ ভর্তির জন্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ হাজার আসনের বিপরিতে
ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হবে জিপিএ-৫.০ পাওয়া ৩৯ হাজার ৭৬৯ জন + জিপিএ ৪.০-৫.০ এর মধ্যের
২ লাখ ৩ হাজার ৯ জন + ২০১০ সালে পাস করা কিন্তু দ্বিতীয়বারের মতো ভালোমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ
নেয়ার জন্য অপেক্ষমান আরো প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৩.৫ লাখ শিক্ষার্থী।
এবারে (২০১১ সালে) এইচএসসি
পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পাশাপাশি উত্তীর্ণদের ভর্তির বিষয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে
প্রায় সবগুলো পত্রিকাই। তাদের প্রতিবেদনের আলোকে আসন সংখ্যার হিসাবে দেখা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ হাজার, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০-৬০ হাজার, মেডিক্যাল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ হাজার ১১০টি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের
অধীন অনার্স কলেজগুলোয় প্রথম বর্ষে আসনসংখ্যা প্রায় দুই লাখ আর ডিগ্রি কলেজগুলোয় পাস
কোর্সে রয়েছে দেড় লাখের মতো আসন (২৮ জুলাই ২০১১ এর দৈনিক মানবজমিনের হিসাব অনুযায়ী
এ সংখ্যা যথাক্রমে ১.৩৫ লাখ এবং ৭০ হাজার)। ফাজিলেও রয়েছে আরও বেশ কিছু আসন। এর বাইরেও কোন
কোন মাদ্রাসায় সম্মান কোর্স চালু করা হয়েছে। এতসব মিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা দাড়ায় প্রায় ৪ লক্ষ
৩০ থেকে ৪০ হাজার। ২০১১ সালে এইচএসসি পাশ করেছে ৫ লাখ ৭৪ হাজার ২৬১ জন এবং গত বছরের ভর্তির জন্যে
অপেক্ষমান আছে প্রায় ১ লাখ। সব মিলিয়ে আবেদনকারী শিক্ষার্থী প্রায় ৭ লাখ। এ হিসাবে প্রায়
১.৫০ লাখ থেকে ২ লাখ শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা লাভ বলতে গেলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ার কথা। কিন্তু এ ধরনের কোন সমস্যা কখনো হয়নি এবং হবেও না। তাহলে বাকী শিক্ষার্থীরা
যায় কোথায়? উত্তর হচ্ছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন
সংখ্যার কোন বালাই না থাকাতে জমিজমা বিক্রি করে কাড়িকাড়ি টাকা নিয়ে তাদের গন্তব্য হবে
ঐসব সার্টিফিকেটের দোকানদারদের কাছে। এ হিসাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে কম করে হলেও
২ থেকে ২.৫ লাখ। অথচ ইউজিসির স্বীকরোক্তি অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর ৫০ হাজারের
মত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকে (তাদের ভাষ্য অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আসন
আছে ৬০ হাজারের কিছু বেশি)। অথচ ইউজিসির ২০১০ সালের প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
আসন সংখ্যা অনার্সের জন্য ১১৪৫৭২ এবং মাস্টার্স এর জন্য ৫১৬৬৭ মোট ১৬৬১৭৯টি উল্লেখ
করা হয়েছে, যা তাদের ঘোষণার থেকে প্রায়
তিনগুণ বেশি। তথ্যের এতবড় বিভ্রাট! তাহলে হিসাবটা কোথায় গিয়ে দাড়ালো? ইউজিসির যদি তথ্য বিভ্রাট হয় এরকম, তাহলে সনদ ব্যবসায়ীদেরতো পোয়াবারো হবেই।
সরকার, ইউজিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সাথে
সাক্ষাতকারে দাবী করে আসছে যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে
বছরে মাত্র প্রায় ৫০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়। প্রকৃতপক্ষে ৫১/৫৪টি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করে, এর সঠিক কোন হিসেব মঞ্জুরি কমিশনের কাছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
কখনোই দেয়না। তাই তাদের কাছে কোন সঠিক হিসাবও নেই। তাদের কাছে যে কয়েকজনের হিসাব দেয়া হয়, তারা সেটাকেই পুজি করে তাদের কাজকারবার, ঢাকঢোল পিটিয়ে বক্তব্য দিয়ে থাকে। এইচএসসি উত্তীর্ণ ৫.৭৫ লাখের ভিতর থেকে যদি ৩ লাখ শিক্ষার্থীও জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, তাহলে বাকী ২
থেকে ২.৫ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে । এটা একটা হিসাব
মাত্র। এর কিছুটা কম-বেশি হতে পারে, তাই বলে ৫১/৫৪ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র প্রায় ৫০ হাজার (গড়ে প্রতিটি
বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজারেরও কম আর প্রতি কোর্সে বা বিষয়ে ৫০ জনেরও কম!) শিক্ষার্থী ভর্তির
তথ্য ঢাহা মিথ্যা কথা। এর প্রমাণ হিসেবে নীচের প্রতিবেদনটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ
করা যেতে পারে।
ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন
অনুযায়ী ২০০৬-২০১০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমুহে কতজন শিক্ষার্থী
ভর্তি হয়েছে এবং অধ্যয়ন করছে তার একটা হিসাব এখানে তুলে ধরা হলো:
যেহেতু ২০০৬ সালে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের
অনুমোদন হয়েছে, তাই ঐ ২টি বাদ দিলে ২০০৬
সালে (ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী) ৪৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট শিক্ষার্থী
ছিল ১২৪২৬৭ জন (গড়ে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫৩৬ জন এবং প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারে
১১৭৮ জন)। ঐ বছরে মাত্র ১৪৭১৪ (গড়ে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০০ জন, প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারে ১০০) জনকে ডিগ্রী
প্রদান করা হয়। সেলুকাস!!
২০০৭ সালে ৫১টি বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৭০৪১০ জন ছাত্র-ছাত্রী দেখানো হয়েছে (গড়ে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে
৩৩৪১ জন, প্রতি সেমিস্টারে ১১১৩ জন)। ঐ বছরে আবার উত্তীর্ণ
হয়েছে মাত্র ২৫৮০১ জন (গড়ে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০৫ জন, প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারে ১৬৮)। নতুন ভতি হয়েছে
৬০৫৮৭ জন (গড় প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১৮৭ প্রতি সেমিস্টারে ৩৯৫ জন)। এ বছরে পাশের হার ২০০৬ সালের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন
বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা ইউনিভার্সিটি প্রথম বছরেই শিক্ষার্থী ভর্তি
করেছে ১২৮৪ জন। অথচ অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আয়ুষ্কাল
১০-১২ বছর অতিক্রান্ত হলেও তাদের শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যার কোন উন্নতি বা বৃদ্ধি ঘটেনি। ২০০৬
থেকে ২০০৭ সালের মোট শিক্ষার্থীর গড়ও কমে গেছে, যা ২০০৬ সালে
ছিল ৩৫৩৬ এবং ২০০৭ সালে ৩৩৪১ জন।
২০০৮ সালে মোট ১৮২৬৪১ জন
ছাত্র-ছাত্রী দেখানো হয়েছে (গড়ে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫৮২ জন, প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারে ১১৯৪ জন)। ঐ বছরে উত্তীর্ণ
হয়েছে মাত্র ৩২৭০১ জন (গড়ে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৪১ জন প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারে ২১৩)। নতুন ভর্তি হয়েছে
৩৮০৩২ (গড় প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৪৫, প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারে ২৪৮ জন), যেখানে ২০০৭ সালে ভর্তি হয়েছিল ৬০৫৮৭। এটাও
কি বিশ্বাসযোগ্য। প্রতি বছর এইচএসসি পাশের সংখ্যা প্রায় এক তৃতীয়াংশ
হারে বৃদ্ধি পায়, আর
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে যায়।
২০০৯ সালে মোট ২০০৯৩৯ জন
ছাত্র-ছাত্রী দেখানো হয়েছে (গড়ে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৯৪০ জন, প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারে ১৩১৩ জন)। ঐ বছরে উত্তীর্ণ
হয়েছে মাত্র ২৯৪৪৮ জন (গড়ে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৭৭ জন, প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারে ১৯২)। নতুন ভর্তি হয়েছে
৫০৩৬৯ (গড় প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৮৭, প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারে ৩২৯ জন)। এ
বছরে আগের বছরের তুলনায় উত্তীর্ণের হার কমেছে। ২০০৮
সালে উত্তীর্ণ হয়েছিল ৩৮০৩২ আর ২০০৯ সালে নেমে গেছে ২৯৪৪৮-তে। শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পায়
অথচ উত্তীর্ণের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়না। কত ভাল ইউনিভার্সিটি!
২০১০ সালে মোট ২২০৭৫২ জন
ছাত্র-ছাত্রী দেখানো হয়েছে (গড়ে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৩২৮ জন, প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারে ১৪৪২ জন)। ঐ বছরে উত্তীর্ণ
হয়েছে মাত্র ৩৩৬২৬ জন (গড়ে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৫৯ জন, প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারে ২১৯)। নতুন ভর্তি হয়েছে
৪৯২৬১ (গড়ে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৬৬, প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারে ৩২১ জন)। ২০০৯
সালে নতুন ভর্তি হয়েছে ৫০৩৬৯ আর ২০১০ সালে ৪৯২৬১ জন। এ
বছরে আগের বছরের তুলনায় নতুন ভর্তি কমে গেছে কিন্তু উত্তীর্ণের হার বেড়ে গেছে! দেশে
এইচএসসি পাশের হারে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলেও এদের বাড়েনা। এরা
কত শুদ্ধ লোক!
যাহোক, বর্ণিত হিসাবে দেখা যায়, ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে গড়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন
ভর্তি হয়েছে যথাক্রমে ১১৮৭, ৭৪৫, ৯৮৭ ও ৯৬৬ জন করে এবং ডিগ্র প্রদান করা হয়েছে ২০০৬ থেকে ২০১০
সালের মধ্যে গড়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাক্রমে ৩০০, ৫০৫, ৬৪১, ৫৭৭ ও ৬৫৯ জনকে।
২০০৭ থেকে ২০১০ সালে প্রতিটি
বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে প্রতি বছরে যথাক্রমে ১১৮৭, ৭৪৫, ৯৮৭ ও ৯৬৬ জন
ভর্তির হিসাব পাওয়া গেল। এর গড় ৯৭১ হলেও ৭১ জন বাদ দিয়ে এ প্রতিবেদনে গড়ে ৯০০ ধরেও
যদি হিসাবটি কষা হয়, তাহলেও: ১৯৯২
সালে ২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ বছরে ভর্তি হয়েছে
মোট ৩২৪০০ জন। ১৯৯৩ সালে ৩ টিতে ১৭ বছরে ভর্তি হয়েছে মোট ৪৫৯০০ জন। ১৯৯৪ সালে ১টি
তে ১৬ বছরে ভর্তি হয়েছে মাট ১৪৪০০ জন। ১৯৯৫ সালে ৩ টিতে ১৫ বছরে ভর্তি হয়েছে মোট ৪০৫০০ শিক্ষার্থী। ১৯৯৬ সালে ৪ টিতে
১৪ বছরে ভর্তি হয়েছে মোট ৫০৪০০ জন শিক্ষার্থী। ২০০০ সালে ১ টিতে
১০ বছরে ভর্তি হয়েছে মোট ৯০০০ জন। ২০০১ সালে ৭ টিতে ৯ বছরে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে মোট ৫৬৭০০
জন। ২০০২ সালে ১১টিতে
৮ বছরে ৭৯২০০ জন। ২০০৩ সালে ১৫ টিতে ৭ বছরে ভর্তি হয়েছে মোট ৯৪৫০০ জন। ২০০৪ সালে ১ টিতে
ভর্তি হয়েছে ৬ বছরে মোট ৫৪০০ জন। ২০০৫ সালে ১ টিতে ৫ বছরে ৪৫০০ এবং ২০০৬ সালে ২ টিতে ৪ বছরে
৭২০০ জন শিক্ষার্থী। এ হিসেবে দেখা যায়, ১৯৯২-২০১০ সাল পর্যন্ত ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট
ভর্তি হয়েছে ৪৪০১০০ জন শিক্ষার্থী অর্থ্যাৎ প্রায় ৪.৫ লক্ষ। কিন্তু সরকার ও ইউজিসি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ যাবৎ (১৯৯২-২০১০ সাল
পর্যন্ত) অধ্যয়ন করেছে এবং করছে মিলিয়ে মাত্র ২ লক্ষ ১৫ হাজারের মত, আর বর্তমানে প্রতি
বছর প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে বলে দাবী করছে। কী সাংঘাতিক তথ্য!
প্রশ্ন হচ্ছে, বাতিল হওয়া একটি বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি (অবৈধ) ক্যামপাসে যদি বছরে ২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, তাহলে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২/৩টি ক্যামপাস+মূল ক্যামপাস মিলিয়ে
বছরে কমপক্ষে ৪/৫ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়াই স্বাভাবিক। তাহলে ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে
আমার হিসাব মতে ২-২.৫ লাখ শিক্ষার্থীই ভর্তি হচ্ছে এবং এটাই যুক্তিযুক্ত ও নির্মম
সত্য। তাই বছরে ৫০ হাজার
শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার তথ্যটি একেবারেই অসংলগ্ন।
এবারে আসা যাক উত্তীর্ণের
পরিসংখ্যানে। ২০০৬ থেকে ২০১০ সালে বছরে গড়ে যথাক্রমে ৩০০, ৫০৫, ৬৪১, ৫৭৭ ও ৬৫৯ জনকে ডিগ্রী প্রদানের বা উর্ত্তীনের হিসাব পাওয়া
যায়। এর গড় ৫৩৬ ধরে
যদি হিসাবটি কষা হয়, তাহলে: ১৯৯২ সালে ২ টি
বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ বছরে ডিগ্রী প্রদান করা হয়েছে মোট ১৯২৯৬ জন শিক্ষার্থীকে। ১৯৯৩ সালে ৩ টিতে
১৭ বছরে ২৭৩৩৬ জনকে। ১৯৯৪ সালে ১ টিতে ১৬ বছরে ৮৫৭৬ জনকে। ১৯৯৫ সালে ৩ টিতে
১৫ বছরে মোট ২৪১২০ জনকে। ১৯৯৬ সালে ৪ টিতে ১৪ বছরে মোট ৩০০১৬ জনকে। ২০০০ সালে ১ টিতে
১০ বছরে মোট ৫৩৬০ জনকে। ২০০১ সালে ৭ টিতে ৯ বছরে মোট ৩৩৭৬৮ জনকে। ২০০২ সালে ১১টিতে
৮ বছরে ৪৭১৬৮ জনকে। ২০০৩ সালে ১৫ টিতে ৭ বছরে মোট ৫৬২৮০ জনকে। ২০০৪ সালে ১ টিতে
৬ বছরে ৩২১৬ জনকে। ২০০৫ সালে ১ টিতে ৫ বছরে মোট ২৬৮০ জনকে। ২০০৬ সালে ২ টিতে
৪ বছরে ৪২৮৮ জনকে। এ হিসেবে ১৯৯২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ২৬২১০৪ জনকে (প্রতিবেদন অনুযায়ী)
ডিগ্রী প্রদান করা হয়েছে (অথচ সরকারি হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এযাবৎ মাত্র ২.১৫ লাখ
শিক্ষার্থীকে ডিগ্রী প্রদান করা হয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে)। এ প্রতিবেদনটি
কি সঠিক? এতো গেল প্রতিবেদনের গড় হিসাব। বাস্তব অবস্থাতো
আরও ভয়াবহ! প্রতিবেদনের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যালোচনা করে যে হিসেব পাওয়া গিয়েছে, তা অবিশ্বাস্য। কোন কোন ইউনিভার্সিটি এত কম সংখ্যক শিক্ষার্থী
দেখিয়েছে যে, এ স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী
দ্বারা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালানো কোন ক্রমেই সম্ভব নয়।
ইউজিসির এসব প্রতিবেদনের
সাথে বাস্তব অবস্থার কোন মিল নেই। প্রতিবেদনে প্রদত্ত সংখ্যার দ্বিগুন/তিনগুন শিক্ষার্থী তারা
ভর্তি এবং সনদ (অবৈধ) প্রদান করে থাকে বলে জানা যায়। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়
বছরে ৩-৪ হাজার, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়
৮-১০ হাজার, আবার কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়
কোন কোন বছরে ১৭-১৮ হাজার শিক্ষার্থীও ভর্তি করেছে বলে প্রমান পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে,
কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের প্রকৃত হিসাব (না ছাত্র-ছাত্রীর, না টাকা পয়সার) তুলে ধরে ইউজিসির জন্য প্রতিবেদন তৈরি করেনা। সরকারের চোখে
ধুলা দিয়ে, কাচা কলা দেখিয়ে তারা শত শত কিংবা হাজার হাজার সনদ বিক্রি করে এবং শত/হাজার
কোটি টাকা আত্মসাত করে থাকে। এ প্রতিবেদনের পরবর্তী পর্বে ইউজিসির প্রতিবেদনের তালিকার
ক্রমানুযায়ী এ রকম কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ২-৪ বছরের হিসাব পৃথক পৃথক প্রতিবেদন
আকারে প্রকাশ করা হবে ধারাবাহিকভাবে। তুলে ধরা হবে ইউজিসিতে পেশ করা তাদেরই প্রতিবেদনের আলোকে।
নর্থসাউথ, এশিয়ান, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল
ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি বছরে যেখানে ৩-১০-২০ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করে
থাকে, সেখানে বছরে ৫১টি বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ৫০ হাজার শিক্ষার্থী (গড় মাত্র ১০০০) ভর্তির বিষয়টি কতটা বিশ্বাসযোগ্য
বা নির্ভরযোগ্য তা ক্ষতিয়ে দেখার সময় কী এখনো হয়নি?
ধরা যাক, একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে ১৯৯২ সালে। তাহলে ২০১০ সাল
শেষে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৮ বছর অতিক্রম করেছে এবং এ ১৮ বছরে ৫৪টি সেমিস্টার (বছরে ৩টি
সেমিস্টার হিসাবে) পার করেছে এবং ৫৪ টি ব্যাচে (প্রতিটি সেমিস্টারকে একটি করে ব্যাচ
হিসাব করা হয়) শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি গড়ে ২০ টি কোর্স (অনার্স, মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, ইত্যাদি) পরিচালিত
হয় (কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫-৩০টি কোর্সও আছে) এবং প্রতি কোর্সে বা প্রতি ব্যাচে
বা সেমিস্টারে যদি ১০০ করে শিক্ষার্থীও ভর্তি করে থাকে, তাহলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে ৬ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করে
থাকে। এভাবে ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে
বছরে ৩ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করা সম্ভব। যেহেতু সব বিশ্ববিদ্যালয়ে
কোর্স সংখ্যা সমান নয়, তাই এ হিসাব কম-বেশি
হতেই পারে। তবে এভাবে: ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ২ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ বছরে
৫৪টি সেমিস্টারে ভর্তি হবার কথা কমপক্ষে ২১৬০০০ শিক্ষার্থী। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত
হওয়া ৩ বিশ্ববিদ্যালয় ১৭ বছর বা ৫১টি সেমিস্টার পার করেছে এবং এ সময়ে ভর্তি করেছে ৩০৬০০০
জন শিক্ষার্থী। ১৯৯৪ সালে ১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে ১৬ বছরে ৯৬০০০ জন। ১৯৯৫ সালে ৩ টি
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে ১৫ বছরে ২৭০০০০। ১৯৯৬ সালে ৪ টি তে ভর্তি করা হয়েছে ১৪ বছরে ৩৩৬০০০। ২০০০ সালে ১ টি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছরে ভর্তি করেছে ৬০০০০ জন। ২০০১ সালে ৭ টি
তে ৯ বছরে ভর্তি করেছে ৩৭৮০০০ জন। ২০০২ সালে ১১ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ বছরে ভর্তি করেছে ৫২৮০০০
জন । ২০০৩ সালে ১৫
টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ বছরে ভর্তি করেছে ৬৩০০০০ জন। ২০০৪ সালে ১টি
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে ৬ বছরে ৩৬০০০ জন। ২০০৫ সালে ১টিতে ভর্তি হয়েছে ৫ বছরে ৩০০০০
জন এবং ২০০৬ সালে ২ টিতে ভর্তি হয়েছে ৪ বছরে
৪৮০০০ জন শিক্ষার্থী।
একুনে ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে
ভর্তিকৃত সম্ভাব্য সর্বমোট শিক্ষার্থী দাড়ায় ২৯ লক্ষ ৩৪ হাজার। অর্থ্যাৎ গড়ে বছরে ১ লক্ষ
৬৩ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। অথচ প্রতিবেদন দাখিল করে মাত্র ৩০-৪০-৫০ হাজারের মত! যেহেতু
বর্তমানে বছরে ৬ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে থাকে, তাই এ হিসাবটি গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এ হিসেবে বছরে
প্রায় এক লক্ষ সনদ বিক্রি করা হচ্ছে এবং এর টাকা তাদের পকেটস্থ হচ্ছে। হিসাবটি একটু পরিস্কার করে দেয়া হলো। যেমন: পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা ৩২ হাজার, বাকীদের মধ্য থেকে ৩ লক্ষ ৩৩ হাজার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি-বেসরকারি
কলেজে এবং বাকী ১ লক্ষ ৬৩ হাজার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে থাকে প্রতি বছরে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়
বছরের প্রথমে, কোনটি বছরের মাঝখানে আবার
কোনটি বছরের শেষভাগে অনুমোদন পেয়েছে। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে ২টি আবার কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে
বছরে ৩টি সেমিস্টার রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর প্রথম দিকে শিক্ষার্থী কম থাকে, আবার কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স সংখ্যা বেশী-কম হতে পারে, যেমন-নর্থ সাউথে ২৬টি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ২৯ টি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে ২৩টি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক-এ ১৭টি, আবার কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০-২০ টি কোর্স চালু আছে। এসব বিবেচনায়
রাখা হলেও ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ১৮ বছরে কমপক্ষে ২০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী
ভর্তি হয়েছে। অথচ, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের
মন্ত্রী মহোদয়, ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান
(প্রফেসর নজরুল ইসলাম) বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
আইন ১৯৯২ পাশ হবার পর থেকে এ যাবৎ (২০১০ সাল পর্যন্ত) ২ লাখ ১৫ হাজার শিক্ষার্থী
৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। এতে প্রমাণিত হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সরকারকে প্রদত্ত সকল প্রতিবেদনই সমপূর্ণ
মিথ্যা, ভূয়া এবং জালিয়াতি করে তৈরি করা।
কালের কন্ঠ লিখেছে, দেশের অন্যতম বৃহৎ অনলাইন জবসাইট
বিডিজবস.কম-এর হিসাবে চাকরিপ্রার্থীরা প্রতিদিন গড়ে তাদের সাইটে ১৫ লাখ বার ভিজিট করেন
এবং প্রতি মাসে এই সাইটে ঢুকে চাকরি খোঁজে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। ওয়েব সাইটটিতে
২ লাখেরও বেশি বায়োডাটা জমা পড়েছে। প্রসঙ্গত, ইন্টারনেট-সংযোগসহ কমিপউটার ব্যবহারের সুযোগধারী শিক্ষিতরাই কেবল অনলাইনে চাকরি
খুঁজতে পারেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, অনেক বিজ্ঞাপনেই
লেখা থাকে-অভিজ্ঞদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলযোগ্য, কিন্তু উচ্চ শিক্ষিতদের
জন্য অভিজ্ঞতার শর্ত শিথিল করা হচ্ছে না। এভাবে শিক্ষিত এবং উচ্চশিক্ষিত যুবকরাই বেকার হয়ে
দেশ ও জাতির জন্য মহা অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বলা যায়, দেশের শিক্ষিত চাকুরীপ্রার্থীদের মধ্যে কতজনের ইন্টারনেট-সংযোগসহ
কমিপউটার ব্যবহারের সুযোগ আছে? এক চতুর্থাংশের
বেশি নয় নিশ্চয়। কারন বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট অতটা সমৃদ্ধ নয় যে, সকলের ঘরে ইন্টারনেট সংযোগসহ কমিপউটার থাকবে। অনলাইনে যদি ২
লাখের বেশি বায়োডাটা জমা পড়ে, তাহলে প্রকৃত
শিক্ষিত বেকার কতজন? তাছাড়া সব উচ্চশিক্ষিত চাকুরী
প্রার্থীর অনলাইনে চাকুরী খোজার সুযোগ নেই। তাই দীর্ঘ ১৮ বছরে ৫৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে মাত্র ২ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা লাভ করেছে-এ তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃত সংখ্যা
১০ গুনের কম নয়। কারন, প্রতি বছরে গড়ে ২ লাখ শিক্ষার্থীও
যদি এইচএসসি পাশ করে থাকে তাহলে এই ১৮ বছরে কম করে হলেও ৩৬ লাখ শিক্ষার্থী এইচএসসি
পাশ করেছে। এর মধ্য থেকে ১৮ বছরে মাত্র ২.০-২.৫ লাখ শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে শিক্ষালাভ করেছে, তা গ্রহণযোগ্য হতেই পারেনা।
প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের দেশে শিক্ষার্থী যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে হারে শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। তাই তারা আসন সংখ্যার অতিরিক্ত হয়েই বিশবিদ্যালয়সমূহে পড়াশোনা
করে থাকে। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেতো আসন সংখ্যার কোন বালাইই নেই। যে যত পারছে ভর্তি
করছে। শিক্ষার্থী ভর্তি
করছে আর বিল্ডিং ভাড়া নিচ্ছে। তাতেও স্থান সংকুলান না হলে ভাড়া বিল্ডিং, তাও না পেয়ে গ্যারেজ
ব্যবহার করছে, হোটেল ব্যবহার করছে, নয়তো স্কুল ভাড়া করছে, নয়তো ডেকোরেটর থেকে চেয়ার-টেবিল এনে গ্যারেজে আসন সংকুলান করছে। এ ধরনের
বিশ্ববিদ্যালয়কে কি কোন উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান বলা যায়?
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজারেরও বেশী
ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করে থাকে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু বছরে ভর্তি দেখায় মাত্র ৩ থেকে ৪ হাজার জন। আবার কোন কোন
বিশ্ববিদ্যালয় ৪-৫ শত কোন কোনটিতে আবার ৭-৮ শত! এভাবে বছরের পর বছর ধরে তারা মিথ্যা
তথ্য দিয়ে সরকার এবং জাতিকে বিভ্রান্ত করছে এবং শত-হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে।
এসব টাকা কার? এদেশেরই খেটে খাওয়া মানুষের। কয়েকজন বিত্তবান
ছাড়া বাকী সব টাকাই গরীব মানুষের, যারা মাথার ঘাম
পায়ে ফেলে অথবা জমিজমা বিক্রি করে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি পরিশোধ করে তাদের
সন্তানদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে থাকে। কিন্তু বিনিময়ে পায় সনদ কেনার অপবাদ। এসব মানুষের টাকা
সনদ ব্যবসায়ীরা লুট করে নিয়ে নিজেরা আলীশান বাড়ীতে থাকে। না দেয় কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষকদেরকে পর্যাপ্ত বেতন-ভাতা, না দেয় যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ। আজকাল ৮-১০-১২-১৪
হাজার টাকায় কোন যোগ্য শিক্ষক পাওয়া যায়? ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ে
নিম্ন বেতন প্রদানকারী এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা থাকা সত্বেও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। ২০১১ সালে এসে
কোন কর্মচারীর বেতন স্কেল ১৪০০ টাকা থাকা সম্ভব? যেখানে সরকারি একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সর্বনিম্ন বেতন স্কেল ৪১০০ টাকা? এসব প্রতিষ্ঠানের
আউটার ক্যামপাসগুলোতে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে সরকার কর্তৃক ভর্তি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা
আরোপ করলেও একেকটি আউটার ক্যামপাসে ৫ থেকে ৭ হাজার করে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করেছে বলে
খবর পাওয়া গিয়েছে। এসব অবৈধ ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের সনদের বৈধতা কে দেবে? আর তাদের টিউশন ফি এর টাকার হিসাব কে নেবে?
চলতেও পারে
... ... ... ... ...
এর পরের পর্ব ইউজিসি-কে
নিয়ে। তার পরেই এক এক করে আসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে রিপোর্ট। অপেক্ষা করুন।
ব্লগে মন্তব্য করুন অথবা মেইল করুন: sangsaptaka@rocketmail.com
ব্লগে মন্তব্য করুন অথবা মেইল করুন: sangsaptaka@rocketmail.com
No comments
Post a Comment