Breaking News

ভুয়া সনদ তৈরি করতে গিয়ে শ্রীঘরে এক ভার্সিটির ভিসি

দৈনিক জনকন্ঠ (প্রথম পাতা)
রবিবার, ১৩ জুলাই ২০১৪, ২৯ আষাঢ় ১৪২১
(http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2014-07-13&ni=178788)

বিভাষ বাড়ৈ সনদ বিক্রিসহ দুর্নীতির বিষয়ে টিআইবির রিপোর্ট নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টির মধ্যেই এবার কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছে আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি নামে এক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় টিআইবির বিপোর্টের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রীসহ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি, ভিসিরা নিজেদের স্বচ্ছ বলে দাবি করলেও তাদের প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছেন এক উপ-উপাচার্য ভুয়া সনদ বানাতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য মুহাম্মাদ মাসউদুর রহমান ধানম-ি থানা পুলিশের হতে ধরা পড়ে তিনিসহ তিনজন এখন জেলে টিআইবির রিপোর্ট সামাল দিতে গিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউজিসির কথিত তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে কমিশনে দাপটের সঙ্গে থাকা বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের একটি চক্র নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে টার্গেট করে দায়ে চাপাচ্ছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তিন কর্মকর্তার ওপর

সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় দায়িত্বরত এক প্রভাবশালী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের লিখিত অভিযোগ আসলেও নিজের পিঠ বাঁচাতে ওই কর্মকর্তাই মদদ দিচ্ছেন জামায়াতীদের অপরাধ ঢাকতে বিভিন্ন স্থানে টাকা ঢালছে চক্র এর আগে ৩০ জুন টিআইবি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি মালিকদের ত্রিমুখী আঁতাতে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্তরে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে টিআইবি দাবি করে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান অনুমোদন থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট প্রদান পর্যন্ত চলা অনিয়ম দুর্নীতিতে অনিয়মে মন্ত্রণালয়, তদারকি সংশ্লিষ্ট ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অংশ জড়িয়ে পড়েছে ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকায় মিলছে ভুয়া সার্টিফিকেট বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদনের জন্য এক থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত অবৈধ লেনদেন হয় পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে এ্যাসাইনমেন্ট, অডিট, ভুয়া সনদ, পাঠ্যক্রম, বিভাগ অনুষদ অনুমোদন, ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার নিয়োগ, অভিযোগের নিষ্পত্তি পর্যন্ত ৫০০ থেকে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত অবৈধ লেনদেন হয় তবে অগ্রসরমান বেসরকারী উচ্চশিক্ষা খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে টিআইবি দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলে অভিযোগ এনেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ট্রাস্টিদের সঙ্গে বৈঠক করে গত সপ্তাহেই মন্ত্রী প্রতিবেদনকেভিত্তিহীন অনুমাননির্ভরআখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছেন বলেছেন, টিআইবিকে দুর্নীতির বিষয়ে প্রমাণ দিতে হবে প্রমাণ না দিতে পারলে প্রতিবেদন প্রত্যাহার করে তাদের দুঃখ প্রকাশ করতে হবে ট্রাস্টিরাও বৈঠকে একযোগে টিআইবির প্রতিবেদনকে অসত্য, অপরিপক্ব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন কোন কোন ট্রাস্টি টিআইবির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি তুলেছেন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করায় কেউ কেউ সাংবাদিকদেরও সমালোচনা করেছেন অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের একাংশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ যথাযথভাবে খতিয়ে দেখার জন্য ইউজিসি চেয়ারম্যান . কে আজাদ চৌধুরী তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছেন কমিটির আহ্বায়ক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর . কে এম নূর উন নবী দুই সদস্য হলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর . মোঃ শহীদ উল্লাহ তালুকদার এবং খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর . মুহাম্মদ আলমগীর কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করছেন ইউজিসি সচিব . মোঃ খালেদ মন্ত্রী, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি উপাচার্যরা দাবি করেছেন তাদের অবস্থান শতভাগ স্বচ্ছ টিআইবির রিপোর্ট মিথ্যা, কাল্পনিক

এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে ফার্ম গেটে অবস্থিত আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য মুহাম্মাদ মাসউদুর রহমান জন্ম দিয়েছেন নতুন এক কেলেঙ্কারির ফার্ম গেটের আনন্দ সিনেমা হলের ঠিক বিপরতীতে অবস্থিত কথিত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে সনদ বিক্রির অভিযোগ ছিল সব সময়েই নিজেদের সাইন বোর্ডেসরকার ইউজিসি অনুমোদিতবলে দাবি করলেও দেশের বহু স্থানে অবৈধ শাখা খুলে সনদ বিক্রির অভিযোগ আছে তবে এবার ধানমণ্ডিতে দুই ছাত্র মোঃ সাকিল মেহেদী হাসানকে নিয়ে ভুয়া সনদ বানাতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, ওই উপ-উপাচার্যকে আটক করা হয়েছে আমাদের মনে হয় ওই উপ-উপাচার্যের নিজের সনদও ভুয়া আমরা আরও অপরাধীতে খুঁজছি ওসি বলেন, এই লোককে দললেই মনে হবে দালাল ওনাকে উপ-উপাচার্য মনেই হবে না ফার্মগেটে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে অনেক ছাত্র ভর্তির জন্য এসেছেন বিদেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সনদ পাওয়ার ব্যবস্থাও নাকি পাওয়া যাবে এখানে পড়লে নানা লোভনীয় অফার দিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কথা বলতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর কেউ রাজি হলেন না কর্মকর্তারা এর পর পাশের ভবনে খোঁজ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির একটি মোবাইল নম্বর পাওয়া গেল ওই নম্বরে কল করা হলে সাইফুল নামে একজন রিসিভ করেন সাংবাদিক পরিচয় দিয়েই বললাম মাসউদুর রহমান কি আপনাদের উপ-উপাচার্য? স্যারকে পাওয়া যাবে? এমন প্রশ্ন করতে তিনি বলেন, হ্যাঁ তবে স্যার এখন বাইরে আপনার নম্বরটা দেন স্যারকে জানাব কিন্তু সে তো পুলিশের হাতে আটক হয়েছে তাহলে? এবার তিনি বললেন, আমরা তো জানি না গণসংযোগ শাখায় স্বপন ভাই আছেন উনি আপনার সঙ্গে কথা বলবেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন সাইফুল নামের ওই ব্যক্তি

এই ঘটনা যাতে প্রকাশ না হয় তার জন্য মন্ত্রণালয়ের কেউ কেউ তৎপর বলেও অভিযোগ উঠেছে কারণ হিসেবে জানা গেছে, সনদ বিক্রির বিষয়ে টিআইবির রিপোর্ট আরও সত্য হয়ে যাওয়ার ভয় এমন অবস্থায় টিআইবির রিপোর্ট সামাল দিতে গিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কথিত তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে কমিশনে দাপটের সঙ্গে থাকা বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের একটি চক্র নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে টার্গেট করে দায়ে চাপাচ্ছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তিন কর্মকর্তার ওপর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তিন কর্মকর্তাকে ফাঁসিয়ে নিজেরা রক্ষা পেতে তৎপর তারাহিন্দুসম্প্রদায়ের তিন কর্মকর্তারা অর্থ খেয়েছেন এমন লিখে গণমাধ্যমের কারও কারও কাছে সরবরাহও করলেও সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রভাবশালী একজন ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করে দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা খেয়েছেন বলে লিখিত অভিযোগ তুলেছে সেই অভিযোগের কপি আছে মন্ত্রণালয়ে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় দায়িত্বরত প্রভাবশালী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যায়ের লিখিত অভিযোগ আসলেও নিজের পিঠ বাঁচাতে ওই কর্মকর্তাই মদদ দিচ্ছেন জামায়াতীদের সব ঘটনায় অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে কমিশনে জামায়াতীদের গ্রুপের একজন সম্পর্কে জানা গেছে, মাত্র বছর মাসের মাথায় সেকশন অফিসার পদে এবং সহকারী সচিব পদে চাকরি করে উপ-সচিব পদে প্রমোশন পেয়েছেন ইউজিসির এক কর্মকর্তা তিনি ২০০৫ এর শেষের দিকে সেকশন অফিসার হিসেবে এডহক ভিত্তিতে কমিশনে যোগদান করেন তার বাড়ি বগুড়ায় হওয়ার সুবাদে হাওয়া ভবনের সুপারিশে তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক . আসাদুজ্জমান বয়স ৩৭ বছর হওয়া সত্ত্বেও ওই কর্মকর্তাকে এডহকে নিয়োগ দিতে বাধ্য হন তবে এক বছর যেতে না যেতেই তাকে সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগের জন্য তদবির শুরু হয় তার মা ছিলেন মহিলা জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য তাই এক দিকে হওয়া ভবনের প্রভাব অন্যদিকে চেয়ারম্যানের ছাত্রী হওয়ার সুবাদে তৎকালীন প্রশাসন তাকে প্রমোশন দেয়ার জন্য কমিশন তথা সরকারী সকল নিয়োগ বিধি উপেক্ষা করে কমিশন তথা সরকারী নিয়ম অনুযায়ী সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ পেতে হলে সরকারী, আধা-সরকারী স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে অর্থাৎ নবম গ্রেডে বা তদুর্ধ কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথচ এডহক ভিত্তিতে সেকশন অফিসার হিসেবে মাত্র এক বছর চাকরি করে জোট সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করে ষষ্ঠ গ্রেডে প্রমোশন পান জোট আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং এডহকে নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রমোশন দেয়ার জন্য যে এমপিকিউ প্রণয়ন করা হয় তা সব সময়ে আওয়ামী সমর্থক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধদের হতাশ করছে যদিও বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা . কে আজাদ চৌধুরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে স্টেট মিনিস্টারের মর্যাদায় কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করেছেন প্রগতিশীলরা আক্ষেপ করে বলছেন, আজাদ চৌধুরী স্যারের সময়েও কমিশনে আওয়ামী সমর্থকদের এই কোণঠাসা অবস্থার পরিবর্তন হয়নি কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা খেয়েছেন যে কর্মকর্তা তিনি এখন যে কোন মূল্যে অন্যদের সায়েস্তা করতে চাচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের সহায়তায় অপরাধের দায়ে চাপাদে চাচ্ছেন অন্যদের ঘাড়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের মাধ্যমে তিনি তাই টার্গেট করেছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কর্মকর্তাদের সব ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে কমিশনের সংখ্যালঘুসহ প্রগতিশীল কর্মকর্তাদের মাঝে

No comments