সরকারের আয়ত্তে নেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ প্রতিদিন
প্রকাশ : ২৬ জুলাই, ২০১৩
নিবারণ বড়ুয়
শত হুমকি-ধমকি, আলটিমেটাম, রেড অ্যালার্ট এমনকি আইন করেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়ত্তে আনতে পারেনি সরকার। বন্ধ হয়নি ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা আউটার ক্যাম্পাস আর সনদ-বাণিজ্য। থামেনি আউটার ক্যাম্পাসভিত্তিক
অবৈধ উপাচার্যের ছড়াছড়ি। অবৈধ ক্যাম্পাসগুলোতে প্রায় সময়ই মারামারির ঘটনা ঘটছে। প্রতিটি ক্যাম্পাসের মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়
মঞ্জুরি কমিশন আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাই দফায় দফায় বৈঠক করেও মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তহীনতায় বৈধ আর অবৈধতার মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
মেধাবী শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ জীবন। ইউজিসির মতে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
মালিকদের কাছে যেমন অসহায় ইউজিসি, তেমনি অসহায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও
মন্ত্রী। রাজনীতির বিশেষ ক্ষমতা দেখিয়ে রাতারাতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে মহাজোট সরকারের আমলে। উচ্চশিক্ষা নিয়ে এমন ছেলেখেলার কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে দুই ডজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের
শিক্ষাজীবন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন এমবিএর শিক্ষার্থী জানান, সরকারের সদিচ্ছা না থাকায় হয়নি উচ্চশিক্ষা কমিশন। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
বেপরোয়া আচরণ আর সনদ-বাণিজ্য রোধ করতে পারছে না।
জানা গেছে, মন্ত্রণালয় থেকে বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও শর্তপূরণে কোনো উদ্যোগ নেই ১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের।
বেঁধে দেওয়া সময়ের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এসব বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া বাড়িতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাসহ সনদ-বাণিজ্যের সঙ্গে লিপ্ত রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর হয়ে গেলেও ৩৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো আইনানুযায়ী নিজস্ব ক্যাম্পাসে যায়নি। এর বাইরে বর্তমান সরকারের আমলে অনুমোদন পাওয়া ১৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
মধ্যে দুটি শুরু থেকেই নিজস্ব ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করেছে। বর্তমানে সারা দেশে ৭১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
রয়েছে। তার মধ্যে ৪২টি রাজধানীতেই অবস্থিত। এগুলোর মধ্যে আট থেকে ১০টিই আছে শুধু বনানী এলাকায়। আর ধানমন্ডিতে ভাড়া বাড়িতেই সড়কের দুই পাশে বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান।
বিশ্ববিদ্যালয়
মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.
এ কে আজাদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের আইন অমান্য করার সুযোগ নেই। আমরা শিক্ষামন্ত্রী
এবং সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের চাপ দিয়েছি।
এ দিকে মালিকানা দ্বন্দ্ব নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সময় বেঁধে দিলেও মালিক পক্ষ সমঝোতায় পৌছাতে পারেনি। তবে একেক জন একেকটি আউটার ক্যাম্পাস, মূল ক্যাম্পাস বানানোর জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। শেষ মুহূর্তে আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছেন। বিরোধপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর
রয়েছে একেকটি শাখা ক্যাম্পাসে একেকজন উপাচার্য। এদের কে বৈধ, কে অবৈধ কেউ জানে না। জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
ভালো চলুক। এসব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়
মালিক পক্ষ আমাদের সঙ্গে দেখাও করেছেন। আমরা তাদের আর সময় দেব না। আইনি বিষয়টি পরিষ্কার হলেই তাদের ধরা হবে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ বিষয়ে বলেন, আমরা কিছু বিশ্ববিদ্যালয়কে রেড অ্যালার্ট জারি করেছিলাম। কিছুদিন আগে সে বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান ও সচিবসহ সভাও করেছি। সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকে শর্ত পূরণ করেছে। নিজস্ব ক্যাম্পাসে গিয়েছে। যেগুলো নূ্যনতম শর্তও পূরণ করছে না, তাদের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
No comments
Post a Comment