শিক্ষার গুণগত মান নয় চলছে মেধাহীন জাতি বানানোর রেসিপি-এহছানুল হক মিলন
উচ্চমাধ্যমিকে পাসের
হার ও জিপিএ-৫ বেশি পাওয়ার পরও শিক্ষার গুণগত মান বাড়েনি বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন। তিনি বলেন, যেভাবে ১৯৭২ সালে নকলকে জন্ম দিয়ে জাতিকে শিক্ষা
ক্যান্সারে আক্রান্ত করা হয়েছিল ঠিক তেমনিভাবে মেধাহীন জাতি গঠনের নব্য রেসিপি হিসেবে
সংযোজন হয়েছে পাসের হার বাড়ানো। একইভাবে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা।
শিক্ষার গুণগত মানের দিকে নজর না দিয়ে শুধু পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বৃদ্ধি জাতিকে
ক্ষণিকের জন্য আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর গেলা। এতে দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষাকে নিয়ে অপরাজনীতি চলবে।
এর পরিণাম হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশকে ধ্বংস করার বীজ বপন করারই নামান্তর।
গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সাবেক
এই শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছরে ভর্তিযুদ্ধের পরিসংখ্যান তথ্য
তুলে ধরেন। বিএনপির এই আন্তর্জাতিক সম্পাদক বলেন, বিগত তিন বছরে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে পরাজিতদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে। ২০১০ সালে জিপিএ-৫
প্রাপ্ত ২৮,৬৭১ জনের মধ্যে ৫১
শতাংশ, ২০১১ সালে জিপিএ-৫
প্রাপ্ত ৩৯,৭৬৯ জনের মধ্যে ৫২
শতাংশ, ২০১২ সালে জিপিএ-৫
প্রাপ্ত ৬১,১৬২ জনের মধ্যে ৫৫
শতাংশ, ২০১৩ সালে জিপিএ-৫
প্রাপ্ত ৫৮,১৯৭ জনের মধ্যে ৭০
শতাংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
তিনি বলেন,
২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের অধীনে খ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের
৯০ ভাগই অকৃতকার্য হয়েছে। এর মধ্যে ইংরেজি ও বাংলায় ৩০ নম্বরের মধ্যে পাস নম্বর ছিল
৮। এই দুই বিষয়ে ফেল করা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় শতাধিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
ভর্তি পরীক্ষায় ১২০ নম্বরের মধ্যে পাস নম্বর হলো ৪৮। এহছানুল হক মিলন বলেন,
প্রতি বছরই মূল্যস্ফীতির কারণে
পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে পণ্যের গুণগত মান বাড়ে না। ঠিক
তেমনিভাবে পাসের হার কিংবা জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বাড়লেই শিক্ষার মানের কোন গুণগত পরিবর্তন
হয়েছে তা নিশ্চিত নয়। পাসের হার বাড়ানো বা ফেল না করানোয় বিষয়টি বিগত বেশ কয়েক বছর
ধরে সুধী সমাজের দৃষ্টিতে ধরা পড়েছে। এমনকি বেশ কিছু পত্রিকায় এ ব্যাপারে প্রতিবেদন
প্রকাশ হয়েছে। প্রাথমিক ও জুনিয়র সমাপনী পরীক্ষায় ফেল না করানোর নির্দেশ কিংবা মাধ্যমিক
ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার অঘোষিত প্রবণতা প্রকারন্তে শিক্ষাব্যবস্থাকে
ধ্বংস করারই শামিল। সাবেক এই শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, নকল প্রতিরোধ অভিযান শুরু হওয়ার পর পাসের হার যখন
৩০ শতাংশের কোঠায় নেমে এসেছিল তখন গণমাধ্যমে এসেছিল-লেখাপড়ায় ধ্বস নামিয়েছি আমি এবং
আমার সরকার। উত্তরে বলেছিলাম, ক্রমান্বয়ে পাসের
হার বাড়তে থাকবে, লেখাপড়ার মান উন্নত
হতে থাকবে। অকৃতকার্যের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসবে। শতভাগ অকৃতকার্য প্রতিষ্ঠানের
সংখ্যাও শূন্যের কোঠায় আসবে।
No comments
Post a Comment