Breaking News

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত ক্যাম্পাস - ব্যবস্থা নিতে ইউজিসি চিঠি দিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে

আমানুর রহমান, দৈনিক নয়াদিগন্ত
১১ আগস্ট ২০১৪, সোমবার, ১০:৫১

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈধ ও অননুমোদিত ক্যাম্পাসের তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে উচ্চ শিক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ ছাড়া যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ ও অননুমোদিত ক্যাম্পাস রয়েছে, সেখানে ভর্তি বা যোগাযোগ না করার জন্য শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অনুরোধ জানানো হচ্ছে। ইউজিসি আজ-কালের মধ্যে এ ব্যাপারে জাতীয় দৈনিকগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করবে। বেসরকারি বিশ্বদ্যিালয়ের বৈধ ক্যাম্পাসের পাশাপাশি অবৈধ ক্যাম্পাস বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিজ্ঞাপনে সতর্ক করা হবে বলে জানিয়েছেন ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউজসির অন্য একটি সূত্র জানায়, অবৈধ ক্যাম্পাসগুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউজিসির বিজ্ঞাপন প্রকাশের পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর আগেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরূপ চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু অবৈধ ও অননুমোদিত ক্যাম্পাসের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই। সূত্র বলছেন, অজ্ঞাত কারণেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এ কারণেই মূলত অবৈধ ও অননুমোদিত ক্যাম্পাস বন্ধ না করে বেপরোয়া সনদ বাণিজ্য চালাচ্ছেন ভার্সিটিগুলোর উদ্যোক্তারা। ইউজিসি সূত্র জানায়, অননুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কেউ কেউ অবৈধ ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে ইউজিসি নিষেধাজ্ঞা দিলেও উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে তারা শিক্ষা ও সনদবাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান নিশ্চিত নয় এবং সার্টিফিকেট বিক্রি করাই তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর তৎপরতাকে অনৈতিক ও গর্হিত কার্যক্রম উল্লেখ্য করে ইউজিসি বলছে, এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করা শুধু ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় ভূমিকাই যথেষ্ট নয়। এই নীতিবিবর্জিত কার্যক্রম বন্ধকরণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগ ও ওইসব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবার যথাযথ পদক্ষেপ প্রয়োজন। ইউজিসি বিজ্ঞাপনে তার কার্যক্রম সম্পর্কে একটি ব্যাখ্যা দেবে বলে জানা গেছে। তাতে উল্লেখ করা হবে, ১৯৭৩ সালে ছয়টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রতিষ্ঠিত ইউজিসি বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ৩৭টি সরকারি ও ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিগত চার দশকে ১০ লাখ শিক্ষার্থী যা বর্তমানে ৩০ লাখে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক নির্বাহী প্রধান হলেন ভাইস চ্যান্সেলর। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ক্ষমতার অপব্যবহার ও ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি বা পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কারণে ভাইস চ্যান্সেলর তার দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। এতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় নানা রকম অব্যবস্থাপনা দেখা দিচ্ছে। এ দিকে ইউজিসি যে ৭৯টি বৈধ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে তাতে, এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সংযুক্ত হয়েছে, যেটি অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি ইউজিসির সাথে কোনোরূপ যোগাযোগ করেনি বলে ইউজিসি জানিয়েছে। সেটি হচ্ছে গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর এটির অনুমোদন দেয়া হয় শর্তসাপেক্ষে। জানা গেছে, রাজশাহীতে প্রস্তাবিত হলেও ঝালকাঠিতে স্থাপনের শর্তে অনুমোদন পায় গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি। এর উদ্যোক্তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের সহধর্মিণী সৈয়দা আঞ্জুমান আরা বানু। ইউজিসির এই তৎপরতার কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতে লাগামহীন দুর্নীতি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের সনদ অর্জন পর্যন্ত পদে পদে অবৈধ অর্থ লেনদেন এবং অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত একাংশ জড়িত। এরপরই মূলত ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বর্তমান দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছে। টিআইবির ওই প্রতিবেদনকে অসম্পূর্ণ উল্লেখ করে ইউজিসি বলছে, গণমাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা নিয়ে ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক ও অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। এর ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।

No comments