Breaking News

উচ্চশিক্ষার সামগ্রিক মান - বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মানগত সমস্যার সমাধান অবশ্যই দরকার

দৈনিক জনকন্ঠ, মঙ্গলবার, ১২ আগষ্ট ২০১৪, ২৮ শ্রাবণ ১৪২১

দেশে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা প্রদান করছে। খুব কম সময়ে এখানে অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে; তবে গুণগতমানের দিক দিয়ে কোন কোনটির বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। সার্টিফিকেট বাণিজ্য, স্থায়ী ক্যাম্পাসের অভাব, লেখাপড়ার উচ্চ খরচ, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্থান সংকট এমনকি বাথরুম সঙ্কট এসব ভার্সিটির অন্যতম সমস্যা। মূলত ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে স্থাপিত হওয়ায় এ ধরনের বেশিরভাগ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন অধ্যাপকের সংখ্যা কম। অপরদিকে খ-কালীন অধ্যাপকের সংখ্যা বেশি। তাই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস চালানোর জন্য তুলনামূলকভাবে অনভিজ্ঞ পূর্ণকালীন প্রভাষকের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সাধারণত বিত্তবান ও সচ্ছল পরিবারের সন্তানরা অনেক বেশি অর্থ খরচ করে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে; কিন্তু সেই অনুযায়ী মানসম্পন্ন শিক্ষা তাদের জন্য নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রাইভেট ভার্সিটিগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খ্যাতিমান, প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ অধ্যাপক নিয়োগ করতে চান না কেবলমাত্র অর্থের কথা চিন্তা করেই। এর ফলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সামগ্রিক মান কমে যাচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে বর্তমানে প্রায় ৭৮টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ ধরনের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা নেই। তবু কেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একের পর এক এ ধরনের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছেন? এত বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পূর্ণকালীন অভিজ্ঞ অধ্যাপক পাওয়া কঠিন ব্যাপার। অপরদিকে দীর্ঘদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ওপর নির্ভর করায় পাবলিক এবং প্রাইভেট এ দু’ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ এক অধ্যাপকের পক্ষে সুষ্ঠুভাবে ও যথাযথ গুরুত্বসহকারে দু’বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান করা সম্ভব নয়। 

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মানগত সমস্যার সমাধান অবশ্যই দরকার। কেউ কেউ দক্ষ শিক্ষক সমস্যার সমাধানের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার পরামর্শ দিয়েছেন। আর তা হলো, দেশে উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন বিভাগে প্রয়োজনে যোগ্য ও অভিজ্ঞ বিদেশী শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। পাবলিক ও প্রাইভেট সব বিশ্ববিদ্যালয়েই উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে যোগ্য ও দক্ষ বিদেশী শিক্ষকদের নিয়োগ দিলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন।

দেশে সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সামগ্রিক মান অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। দেশের মেধা ও মনন সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে শিক্ষা বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার মানগত উৎকর্ষের ওপর। সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার চর্চা, প্রসার ও গবেষণার ক্ষেত্রে যেসব প্রতিকূলতা ও অনিয়ম আছে অবিলম্বে তা দূর করা জরুরী। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ অবশ্য মধ্যবিত্ত ও সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সাধ্যের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার সামগ্রিক মান নিশ্চিত হোক- এটাই সবার আন্তরিক প্রত্যাশা।

No comments