Breaking News

অনিয়মের শীর্ষে নর্থ সাউথ - ৫০ কোটির জমি ক্রয় ৫০০ কোটি টাকায়, ছাত্র ভর্তির ২৫০ কোটি লুট, দ্বিধাবিভক্ত বোর্ড

প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০:০০, আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০২:৩১:৩০
নিজস্ব প্রতিবেদক [বাংলাদেশ প্রতিদিন] সূত্র: http://www.bd-pratidin.com/2014/09/28/33439


নজিরবিহীন জালিয়াতি আর লুটপাটের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) স্বাক্ষর জাল করে ৫০ কোটি টাকা মূল্যের জমি ৫০০ কোটি টাকায় ক্রয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে লুটপাটের মহা আয়োজন সম্পন্ন করেছে ইতিমধ্যে লুটে নেওয়া হয়েছে ছাত্র ভর্তি তহবিলের আড়াই কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গুটিকয় ব্যক্তির ইচ্ছায় চলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি আর এসব নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়া ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা জড়িয়ে পড়ছেন সংঘাতে দুর্নীতি আর অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নানাভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন বেশ কয়েকজন বোর্ড সদস্যসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলোকিত মানুষ গড়ার জন্য যে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছে, তা এখন দুর্নীতি, অনিয়ম আর লুটপাটের শীর্ষে অসংখ্য অভিযোগে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির ভবিষ্যৎ নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠেছে এনএসইউর ট্রাস্টি বোর্ডের কিছু সদস্যের দুর্নীতি, অনিয়ম আর লুটপাটের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষাসচিবের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে তবে এখন পর্যন্ত বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সূত্র জানায়, এনএসইউর অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে ভার্সিটির বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ড বিভক্ত হয়ে পড়েছে জড়িয়ে পড়েছে তারা নানা সংঘাতে এক পক্ষ এতটাই শক্তিশালী যে তারা নানা কৌশলে আরেক পক্ষকে বোর্ডসভায় আসতেই দেয় না আর এই শক্তিশালী গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য রেমন্ড গ্রপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেনজির আহমেদ বোর্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তারা ট্রাস্টের তহবিল থেকে অর্থ লুটসহ জমি কেনার সব কাজ সম্পন্ন করে যাচ্ছেন এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে বোর্ড থেকে প্রতিবাদী সদস্যদের বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় কারণে বোর্ডের বেশ কয়েকজন সদস্য অনেক দিন ধরে সভায় যান না আর সুযোগে বেনজির আহমেদের গ্রুপ নানামুখী অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছে তবে বোর্ডের অভিযুক্ত সদস্যরা বলছেন, সব নিয়ম মেনেই জমি কেনার জন্য বায়নাপত্র করা হয়েছে জানা যায়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আবাসিক ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার নামে রাজধানী ঢাকার পাশে পূর্বাচলে আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের কাছ থেকে জমি কেনার প্রক্রিয়া চলছে কিন্তু জমি কেনার জন্য ট্রাস্টি বোর্ড কোনো দরপত্র আহ্বান করেনি মাত্র এক দিনের নোটিসে জরুরি সভা ডেকে জমি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এক দিনের নোটিসে সভা আহ্বান করায় বোর্ডের সব সদস্য উপস্থিত থাকতে পারেননি সুযোগে তড়িঘড়ি করে তারা জমি কেনার বায়নাপত্রও করে ফেলেন কোথায় কোন জমির জন্য বায়না করা হয়েছে তাও দেখেননি বোর্ডের অনেক সদস্য অথচ বোর্ডের ওই সব সদস্যের স্বাক্ষর জাল করে জমি কেনার প্রক্রিয়াটি তারা সম্পন্ন করেন সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আইন অনুসারে, প্রতিষ্ঠানের নামে জমি কেনার মতো পদক্ষেপ নিতে গেলে উন্মুুত দরপত্র আহ্বান করতে হবে সে ক্ষেত্রে এনএসইউ মঞ্জুরি কমিশনের কোনো আইনের ধারই ধারেনি৫০ কোটি টাকার জমি ৫০০ কোটি টাকায় : বায়না করা জমির যে মূল্য দেখানো হয়েছে তা প্রচলিত বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি আশালয় হাউজিং যে জায়গা এনএসইউর কাছে বিক্রি করছে, এর সরকারি মূল্য প্রতি বিঘা থেকে ৩৫ লাখ টাকা পাশের জমিও অন্য ক্রেতার কাছে আবাসন প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করেছে গড়ে ১৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা দরে এনএসইউর কাছে বিক্রি করা জমির মূল্য গড়ে প্রতি বিঘা সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা সে হিসাবে ২৫০ বিঘা জমির মূল্য দাঁড়ায় ৫০ কোটি টাকা সেখানে এনএসইউ প্রতি বিঘা জমি কিনছে দুই কোটি টাকা দরে সে হিসাবে ৫০ কোটি টাকা মূল্যের জমি কেনা হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকায় এর মধ্য দিয়ে তারা সাড়ে চার কোটি টাকা লুটপাটের মহা আয়োজন সম্পন্ন করেছেন বিভক্ত ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্য জানান, জমি কেনার জন্য ২৩ জুলাই বিকালে জরুরি বোর্ডসভা ডাকা হলেও ওই দিন সকালেই ২৮টি ব্যাংক এবং এগুলোর শাখা থেকে ৩৬টি চেকের মাধ্যমে ২৪৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা তোলা হয় এবং এক কোটি ১৬ লাখ টাকার নগদ চেক দেওয়া হয় আশালয় হাউজিং ডেভেলপমেন্টের নামেবোর্ডের এক সদস্য বলেন, সরকারি বিধান অনুসারে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান ছাড়া ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের জন্য জায়গা কিনতে পারে না জন্য জমি ক্রয়-সংক্রান্ত বোর্ডসভায় এর বিরোধিতা করে নোট অব ডিসেন্টও দিয়েছিলেন বোর্ডের আরেক সদস্য . রওশন আলম কিন্তু তাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি ওই সদস্য বলেন, আশালয়ের বিক্রি করা জমির মধ্যে ৮৮ শতাংশ জায়গা রয়েছে আর্মি হাউজিং স্কিমের নামে ওই জায়গা নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে ছাড়া একাধিক ট্রাস্টি সদস্যের স্বাক্ষর জাল করে অত্যন্ত চড়া দামে ৫০০ কোটি টাকায় ২৫০ বিঘা জমি কেনার বায়নাপত্র করা হয়েছে বলে জানান ওই সদস্যএনএসইউর আজীবন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান এম আউয়াল গত আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী সচিবের কাছে এক লিখিত চিঠিতে অভিযোগ করেন, ‘নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির তহবিলের ওপর বোর্ড সদস্যদের কোনো আর্থিক সহযোগিতা নেই তহবিল শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি থেকে সংগৃহীত এখন বিশাল তহবিল লুটপাটের জন্যই বড় ধরনের কেলেঙ্কারির মাধ্যমে বোর্ডসভার ভুয়া অনুমোদন দেখিয়ে অত্যন্ত চড়া দামে জমি কেনা হচ্ছে অভিযোগপত্রের অনুলিপি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানকেও দেওয়া হয়েছেযোগাযোগ করা হলে এনএসইউর আজীবন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এম আউয়াল বলেন, ‘জমি কেনার বিরুদ্ধে আমি আদালতে মামলা করেছি আদালত জমি কেনার বিষয়ে স্থিতাবস্থা জারি করেছেন যেহেতু আদালতে বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে, তাই এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে নাতবে তিনি বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে গোপনে জমি কেনার অভিযোগ আনা হয়েছে

No comments