নর্থ সাউথ ট্রাস্টিবোর্ড ভেঙে দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন
নিজস্ব
প্রতিবেদক [Bangladesh Pratidin] Ref: http://goo.gl/jNxk8a
নর্থ
সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে দিতে
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন ট্রাস্টি
বোর্ডের দুজন সদস্য।
এদিকে অতীতের অনিয়ম, দুর্নীতিকে
জায়েজ করতে জরুরি বৈঠক
ডেকেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়টির
ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান। উল্লেখ্য,
গত বৃহস্পতিবার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের
অনিয়ম, দুর্নীতি, শিক্ষিকার শ্লীলতাহানির অভিযোগ তদন্তে যায়
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চার সদস্যের একটি
দল। জানা
গেছে, দুর্নীতি ও শিক্ষিকার শ্লীলতাহানির
ঘটনাকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা চলছে
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে।
অর্থ লোপাট, সনদ বাণিজ্য
এবং শ্লীলতাহানির ন্যক্কারজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে
বিভক্ত হয়ে পড়েছে মালিকপক্ষ। বিরোধে
জড়িয়ে পড়েছেন চেয়ারম্যানসহ ট্রাস্টি
বোর্ডের সদস্যরা। ছুটিতে
চলে গেছেন উপাচার্য অধ্যাপক
হাফিজ জিএ সিদ্দিক।
কয়েকজন সদস্য বর্তমান ট্রাস্টি
বোর্ডকে অবৈধ ও বেআইনি
বলে অভিহিত করে তদন্তের
জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি (ইউজিসি) কমিশনে লিখিত আবেদন
জানিয়েছেন। তারা
বোর্ড অব গভর্নেন্সের আট
সদস্যকে অবৈধভাবে বাদ দিয়ে ইচ্ছেমতো
ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা
হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এর
আগে সম্প্রতি কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি আর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
এক শিক্ষিকা শ্লীলতাহানির চেষ্টার গুরুতর অভিযোগ আনেন। তোলপাড়
সৃষ্টি করা এ কেলেঙ্কারি
ঘটনা খতিয়ে দেখতে চার
সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন
করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
বিশ্ববিদ্যালয়
মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে
আজাদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষিকাকে
যৌন নিপীড়ন, উপাচার্যকে অপমান, অনিয়ম, দুর্নীতি
এবং কোম্পানি প্রথার মাধ্যমে ট্রাস্টি
বোর্ড পরিচালনা বরদাশত করা হবে
না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
ভালো পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে
এসবে বিরুদ্ধে মঞ্জুরি কমিশন কঠোর পদক্ষেপ
নেবে। এদিকে
বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে
অবৈধ আখ্যায়িত করে অবিলম্বে ট্রাস্টি
বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানকে পদত্যাগ
করতে লিখিতভাবে অনুরোধ করেছেন ট্রাস্টি
বোর্ডেরই সদস্য এমএ আউয়াল। তিনি
লিখিত অনুরোধপত্রের অনুলিপি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র
জানায়, আগামী ৮ মার্চ
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি
বোর্ডের সদস্যদের বৈঠকে উপস্থিত হতে
চিঠি দিয়েছেন ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান।
তিনি চিঠিতে ৬টি এজেন্ডা
লিখে সে সবের ওপর
আলোচনা করা হবে বলে
চিঠিতে উল্লেখ করেন।
ট্রাস্টি
বোর্ডে সভার চিঠি পাওয়ার
পর নাম প্রকাশ না
করা শর্তে ট্রাস্টি বোর্ডের
একজন সদস্য জানান, চেয়ারম্যান
মোহাম্মদ শাহজাহান তার অনিয়মগুলোকে জায়েজ
করে নিতেই মূলত এই
সভা ডেকেছেন। ট্রাস্টি
বোর্ডের ওই সদস্য জানান,
শাহজাহান চলতি শিক্ষাবর্ষে নর্থ
সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই অনৈতিক
সুবিধা নিয়ে বিবিএ কোর্সে
৩১৩ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি
করিয়েছেন। প্রতিজন
শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তিনি
দুই থেকে আড়াই লাখ
টাকা করে অনৈতিক সুবিধা
নিয়েছেন। জানা
যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে বার্ষিক অনুষ্ঠান, এবং সমাবর্তন নিয়ে
প্রতিবছর একটি বাজেট তৈরি
করে জমা দেওয়ার মাধ্যমে
ট্রাস্টি বোর্ড তা পাস
করে। সেই
টাকা অনুষ্ঠানের জন্য খরচ করা
হয়। প্রতি
অনুষ্ঠানে ৫০ লাখ টাকার
মতো বাজেট এবং খরচ
করা হলেও এবার কারও
পরামর্শ ছাড়া খরচ করেছেন
এক কোটি টাকা।
বিনা টেন্ডারে নিজের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে
বেশি টাকা দিয়ে ডায়রি
ও ক্যালেন্ডার ছাপতে দিয়েছেন।
সম্প্রতি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কোনো কারণ ছাড়া
একজন বোর্ড সদস্যকে নিয়ে
চীন সফর করতে যান। তিনি
সফরে কত খরচ করেছেন,
কেন, কী কারণে গিয়েছেন
কমিটিকে তার কোনো হিসাব
দেননি। কারও
সঙ্গে আলোচনা ছাড়া ২০০
জন শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং স্টাফদের ব্লেজার
তৈরি করে দিয়ে ২০
লাখ টাকা খরচ করেছেন।
এদিকে
দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির
অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিক্ষিকার শ্লীলতাহানির
ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে
তদন্ত কমিটির কাছে তথ্য
প্রদান করতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী,
অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষের উদ্যোগে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কমিশন।
গতকাল
কমিশন তার বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে,
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন অনিয়ম,
দুর্নীতি ও অভিযোগ সম্পর্কিত
বিষয়ে তদন্ত করে মতামত
বা সুপারিশ প্রদানের লক্ষ্যে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই
চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি
গঠন করেছে। তদন্ত
কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।
এই অবস্থায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির
বিষয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক কোনো
ব্যক্তি তদন্ত কমিটির কাছে
বক্তব্য প্রদানে ইচ্ছুক হলে তাদের
অফিস চলাকালীন সময়ে বেলা ২টা
থেকে ৪টা পর্যন্ত তদন্ত
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আতফুল হাই
শিবলী এবং সদস্যদের অফিসকক্ষে
(৫ম তলা, ইউজিসি ভবন,
আগারগাঁও, ঢাকা) উপস্থিত হয়ে
ব্যক্তিগত শুনানি প্রদানের জন্য
অনুরোধ করা হলো।
ইউজিসি শুনানির বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা
করবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ
করা হয়েছে।
No comments
Post a Comment