Breaking News

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের হিড়িক

সরকারের শেষ বছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের হিড়িক পড়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অরাজকতার মধ্যেই মঙ্গলবার আরও দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের সেঞ্চুরি করল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আরও অন্তত এক ডজন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের রুটিন দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন)  মো. মহিউদ্দীন খান আজকালের খবরকে বলেন,‘এসডিজি (টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা) অর্জনে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার একটি সূচক আছে। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীর তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় নেই। এই হিসাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘আসলে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনে সমস্যা না। সমস্যা হলো শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করা। তারা (উদ্যোক্তা) অনুমোদন নিয়ে মান রক্ষা করতে পারছেন না। স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গিয়ে ভাড় বাড়িতে শিক্ষা দেন। মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে না-এ ধরণের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আমরা চেষ্টা করছি।’ 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় দুটি হলো- ‘খুলনা খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়’ ও ‘আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’। বিশ্ববিদ্যালয় দুটির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে যথাক্রমে-১৪০ কেডিএ, খান বাহাদুর আহছানউল্লা সড়ক, ছোট বয়রা, সোনাডাঙ্গা, খুলনা এবং ২১৬/১ তালাইমারি, পো. কাজলা, রাজশাহী-৬২০৫। বিশ্ববিদ্যালয় দুটির প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা আহছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলম। এর আগে তিনি ‘আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র অনুমোদন নিয়ে পরিচালনা করছেন।

মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর ৩৬ ধারা অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার প্রতিশ্রæতিতে একই আইনের ৭ এর ১ ও ২ ধারা অনুযায়ী ২৩টি শর্তে সাময়িক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দুটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের নিজস্ব বা ভাড়া করা ভবন, কমপক্ষে তিনটি অনুষদ ও ছয়টি বিভাগ, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি, ছাত্রছাত্রীদের জন্য কমনরুম, সেমিনার কক্ষসহ পর্যাপ্ত অবকাঠামো থাকতে হবে। পূর্বানুমোদন ছাড়া বিভাগ খোলা যাবে না। বিভাগে শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্টসংখ্যক পূর্ণকালীন শিক্ষক থাকতে হবে। আচার্যের (রাষ্ট্রপতি) পূর্ব অনুমোদন ছাড়া বিদেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা যাবে না। আরোপিত শর্তগুলোর ওপর ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। 

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় দুটি স্থাপনের বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন। এরপর চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দিতে প্রধানমন্ত্রীর কর্যালয় থেকে গত ২৯ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। এর প্রেক্ষিতেই মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। ঢাকায় আর কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন না দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল। তা লঙ্ঘন করে গত ২৯ জানুয়ারি ‘জেড এন আর এফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়’র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গুলশানে এটি স্থাপন করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ড. এম. জুবায়দুর রহমান। 

ইউজিসির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারদলীয় মন্ত্রী-এমপি ও রাজনৈতিক নেতারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি আবেদন করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে আবেদনকারীদের নামে এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘সবুজ সংকেত’ আসায় ইতোমধ্যে ইউজিসি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে বিরোধী দলীয় নেতার নামে ‘রওশন এরশাদ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’ উদ্যোক্তা আবুল হোসেন নামে একজন শিক্ষা ব্যবসায়ী রয়েছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিলে সনদ ব্যাণিজ্যের আশঙ্কা থাকায় ইউজিসি নেতিবাচক পরিদর্শন প্রতিবেদন দিয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফের প্রতিবেদন পাঠাতে গত মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে।  



অনুমোদনের অপেক্ষায় যেসব বিশ্ববিদ্যালয়: ‘বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের আবেদন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদূর উসৈশিং এমপি।  শামসুল আলম নামে একজন সিঙ্গপুর প্রবাসী ‘শাহ মখদুম বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের আবেদন করেছেন। বিরোধীদলীয় নেতা নিজ নামে ‘রওশন এরশাদ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’ স্থাপনের আবেদন করেছেন। এটি ময়মনসিংহ জেলার ক্রিস্টাপুরে স্থাপিত হবে। সাবেক এমপি এবং হুইপ এইচ এম গোলাম রেজা রাজধানীর সেনপাড়ায় ‘সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’ স্থাপনের অনুমোদন চেয়েছেন। ‘অ্যাপোলো ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন করেছেন জাতীয় সংসদ সদস্য শামসুল আলম ভূঁইয়া। বিশ্ববিদ্যালয়টি চাঁদপুর জেলার বাবুরহাটে স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। পটুয়াখালীর লাউকাঠিতে ‘সাউথ রিজন ইউনিভার্সিটি’ স্থাপনের আবেদন করেছেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ.স.ম. ফিরোজ। ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি’ নামে রাজধানীর মহাখালীতে স্থাপনের জন্য আবেদন করেছেন ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম মোশাররফ হুসাইন। বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের প্রেসিডেন্ট এইচ এন ভেন সঙ্ঘনায়ক শ্রদ্ধানন্দ মহাথের ‘ইউনিভার্সিটি অব অতীশ দীপঙ্কর বাজরাগজনি’ স্থাপনের অনুমোদন চেয়েছেন। এটি মুন্সীগঞ্জে স্থাপন করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রলায়ের কর্মকর্তারা জানান, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গত বছর কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়নি সরকার। সর্বশেষ ২০১৬ সালে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল ‘আনোয়ার খান মর্ডান ইউনিভার্সিটি’র।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী-বর্তমানে ঢাকায় ৫৫টি, মানিকগঞ্জে একটি, ফরিদপুরে একটি, নারায়ণগঞ্জে তিনটি, কিশোরগঞ্জে একটি, জামালপুরে একটি, শরীতপুরে একটি, চট্টগ্রামে নয়টি, কক্সবাজারের একটি, কুমিল্লায় তিনটি, ফেনীতে একটি, রাজশাহীতে দুটি, বগুড়ায় একটি, সিরাজগঞ্জে একটি, নাটোরে দুটি, খুলনায় দুটি, চুয়াডাঙ্গায় একটি, কুষ্টিয়ায় একটি, সিলেটে চারটি, বরিশালে দুটি, রংপুরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। নতুন অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সংখ্যা দাঁড়াল ৯৯। এছাড়া আরও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। সেটি হচ্ছে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। সনদ বাণিজ্য, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে আদলত এটি বন্ধ করে দিয়েছি। 

প্রসঙ্গত, আইন লঙ্ঘনকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি। নিরুপায় হয়ে তারা আচার্যের দ্বারস্থ হন। রাষ্ট্রপতি গত ৬ ফেব্রæয়ারি সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে সভা করেন। এরপরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট ও ভর্তি বাণিজ্য, অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায়, স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া, শিক্ষক নিয়োগে নীতিমালা, নিয়মিত অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়াসহ ১৬ দফা নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠাতে গত মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনকে পাঠানো হয়েছে। 

Ref: http://www.ajkalerkhobor.com/details.php?id=51186

1 comment

MyBlog said...

আমার মনে হয়, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তাই ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি নামে যে আবেদনটি আছে, সেটা বিবেচনা করা উচিৎ। আমরা আর্ন্তজাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় চাই, যেখানে গবেষণা থাকবে। দেশি-বিদেশী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করবে।