বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় : একটা প্রস্তাবনা
প্রকাশ
: ১২ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০:০০
আলোকিত বাংলাদেশ [সূত্র: http://www.alokitobangladesh.com/editorial/2014/10/12/100967]
বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অলাভজনক (নট ফর প্রোফিট)
প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ আয়-ব্যয়ের
পর যদি কোনো মুনাফা
অর্জিত হয় তা কোনো
ব্যক্তি অর্থাৎ মালিক ভোগ
করতে পারবে না।
আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো মালিক বা
শেয়ারহোল্ডার থাকবে না বরং
থাকবে ট্রাস্টিজ, যারা অনেকটা আমানতদারির
মতো। এ
আমানতদারিরা কোটি কোটি টাকা
খরচ করে প্রতিষ্ঠান গড়বেন। পরিচালনা
করবেন কিন্তু কোনো আর্থিক
সুবিধা ভোগ করতে পারবেন
না। অর্থাৎ
শতভাগ সেবাদানের মানসিকতা নিয়ে প্রতিষ্ঠান গড়তে
হবে এবং তা যথার্থভাবে
পরিচালনা করতে হবে।
এখানে বলে রাখা ভালো,
একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অন্য যে কোনো
লাভজনক বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের
মতো আর্থিক মুনাফা অর্জন
করতে পারবে। শুধু
পার্থক্য হলো_ সেই মুনাফা
ভোগকারী কোনো ব্যক্তি হবে
না বরং প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নেই
তা ব্যয় করতে হবে।
প্রশ্ন
হলো, বাস্তবেই কী আমাদের বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চারিত্রিকভাবে অলাভজনক আচরণ করছে? দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদ
দিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর উত্তর হলো_
না। সম্প্রতি
প্রকাশিত টিআইবির প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঘিরে দুর্নীতির যে
চিত্র বের হয়েছে, তাতে
আর যাই হোক এ
খাতকে সেবা বা অলাভজনক
খাত হিসেবে আখ্যা দেয়া
যায় না। আরেক
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডুয়ার্স
ফাউন্ডেশন কর্তৃক দেশের উচ্চশিক্ষা
নিয়ে এক গবেষণায় দেখা
গেছে, বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ই কোনো ব্যক্তি বা
পরিবারকেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। বেশিরভাগেরই
কার্যকর বোর্ড অব ট্রাস্টিজ
সিন্ডিকেট বা একাডেমিক কাউন্সিলসহ
সুব্যবস্থাপনার জন্য যা দরকার,
তার কিছুই নেই।
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েরই ভিসি আর ট্রেজারারের
পদ শূন্য রয়েছে বছরের
পর বছর। এসব
অনিয়ম উদ্যোক্তাদের উদাসীনতা বা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের
পকেট প্রতিষ্ঠানের মতো পরিচালনা করার
উদ্দেশ্যেই হচ্ছে। কিন্তু
সত্য হলো, সেবার মানসিকতার
সঙ্গে এসব অনিয়ম বা
দুর্নীতি একেবারেই যায় না।
একজন ব্যক্তি যদি সেবা করার
মহান ব্রত নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠা করেন, তিনি অবশ্যই
চাইবেন আর যাই হোক
সেবাটি যেন ভালোভাবে, নির্বিঘ্নে
দেয়া যায়। কিন্তু
দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর
বাস্তবতা এ সত্য থেকে
অনেক দূরে।
বিশ্ববিদ্যালয়
মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে
বেশ কয়েকটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত
হয়েছে, যেখানে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের
মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে
বলে জানানো হয়েছে।
এছাড়াও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকায়
বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের অবসানের
কথা জনসাধারণকে অবহিত করেছে।
আমরা আইন করেছি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর
কোনো মালিক থাকবে না। অথচ
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষ সবাই মালিক শব্দটিই
ব্যবহার করছে; কিন্তু আমরা
জানি, ট্রাস্টিজ আর মালিক এক
কথা নয়। অর্থাৎ
এখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিষ্ঠাতারা বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ
সবাই ধরে নিয়েছেন, আইনে
যাই থাকুক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মালিক
রয়েছে এবং এগুলো লাভজনক
প্রতিষ্ঠানই। আমার
প্রস্তাবনা এখানেই। যেহেতু
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনোভাবেই অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের চরিত্র পাচ্ছে না,
তাই এগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবেই
স্বীকৃতি দেয়া হোক।
পৃথিবীর
অনেক দেশেই ফর প্রোফিট
(লাভজনক) বিশ্ববিদ্যালয় আছে এবং নতুন
নতুন আরও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। সম্প্রতি
প্যারিসে অনুষ্ঠিত উচ্চশিক্ষা নিয়ে এক বৈশ্বিক
কনফারেন্সে প্রকাশিত বই 'ট্রেন্ড ইন
গ্লোবাল হাইয়ার এডুকেশন : ট্র্যাকিং
এন একাডেমিক রেভুলেশন' অনুযায়ী দেখা যায়, বিশ্বে
লাভজনক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দ্রুত হারে
বাড়ছে। সরকারি
ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার মান বজায় রাখাটা
দুরূহ হয়ে পড়ছে।
আমাদের দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর
দিকে তাকালে এ কথার
সত্যতা প্রমাণিত হয়।
দেশের
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লাভজনক খাত হিসেবে
স্বীকৃতি দিলে কী কী
লাভ হবে_ সে বিষয়ে
একটু আলোকপাত করতে চাই।
*১.
সরকারের রাজস্ব আয় : লভজনক
খাত হলে সরকার এখান
থেকে টাকা আদায় করতে
পারত। পাশাপাশি
মালিকদের প্রাপ্ত লভ্যাংশ প্রদর্শিত আয় হিসেবে তারা
অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগ
করতে পারতেন।
*২.
মালিকানা দ্বন্দ্ব হ্রাস : বোর্ড অব ট্রাস্টিজের
সদস্যরা যেহেতু মালিক বা
শেয়ারহোল্ডার নন, তাদের মধ্যে
সামান্য মতপার্থক্য দেখা দিলেই হয়
একজন আরেকজনকে বহিষ্কার করেন অথবা পাল্টাপাল্টি
বোর্ড গঠন করে আদালতে
মামলা ঠুকে দেন।
কোম্পানি বা ব্যাংক আইনের
মতো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হলে এ সমস্যা
আর থাকবে না।
*৩.
প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি : ব্যবসায়িক খাত হিসেবে স্বীকৃতি
পেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাঝে প্রতিযোগিতার মনোভাব
বৃদ্ধি পাবে, ফলে শিক্ষার
মানোন্নয়ন হবে। বর্তমানে
যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সনদ বিক্রির অভিযোগ
রয়েছে, তাদের প্রায় প্রত্যেকটির
বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে
দ্বন্দ্ব রয়েছে। লাভজনক
খাত হলে সেখানে যেহেতু
বোর্ড নিয়ে দ্বন্দ্বের সুযোগ
থাকবে না, তাই বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষও সনদ বিক্রির ঝুঁকি
নেবে না।
উপর্যুক্ত
সুবিধাগুলো ছাড়া আরও অনেক
ভালো দিক রয়েছে, যা
লাভজনক বিশ্ববিদ্যালয় দিতে পারে।
লেখার কলেবর বৃদ্ধি পাবে
বলে সব আজ আলোচনায়
আনলাম না। তবে
হ্যাঁ লাভজনক খাত হলেও
আমাদের আইনটি করতে হবে
সতর্কতার সঙ্গে। একটি
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ জ্ঞান তৈরি
ও বিতরণ করা অর্থাৎ
গবেষণা এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ
অনুষঙ্গ। বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাতে পর্যাপ্ত গবেষণা
কার্যক্রম নিশ্চিত হয়_ এ বিষয়টিতে
অবশ্যই জোর দিতে হবে।
আবদুল্লাহ মো. তাহের
শিক্ষক,
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি
No comments
Post a Comment