Breaking News

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, অভিযোগের পাহাড়, অসহায় ইউজিসি


বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়। অবস্থায় অনেকটা অসহায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। তারা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের দ্বারস্থ হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে বসার উদ্যোগ নিয়েছেন। গত ১১ই ডিসেম্বর বঙ্গভবনে কমিশন নানা অভিযোগ সম্বলিত প্রতিবেদন প্রেসিডেন্টের কাছে দাখিল করেন। সংস্থাটি অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেছে, বারবার তাগাদা দেয়ার পরও ন্যূনতম শর্ত পূরণ না করে গায়ের জোরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছে কেউ কেউ।

তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শতভাগ নিয়ম-কানুন মেনে পরিচালনা করছেন। তাদের প্রশংসাও উঠে এসেছে সংস্থাটির প্রতিবেদনে।

ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান গত ১১ই ডিসেম্বর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ২০১৬ সালের ৪৩তম বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে এবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি আলাদাভাবে সংযোজন করেছেন। যা প্রেসিডেন্টের দৃষ্টি আকর্যণ করান চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা। তারপর সব ভিসি সঙ্গে বসার আগ্রহের কথা জানান প্রেসিডেন্ট। আগামী ১লা ৫ই ফেব্রুয়ারি সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে আলাদাভাবে বসার কথা রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান মানবজমিনকে বলেন, মহামান্য প্রেসিডেন্ট সব ভিসি সঙ্গে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যারয়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য তা বার্ষিক প্রতিবেদনে লিখিত আকারে বলেছি। সুপারিশের পরও অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে না পারায় বিষয়টি মহামান্য প্রসিডেন্টকে অবহিত করেছি।

অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিয়োগ করা ভিসি, প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষ না থাকা, আর্থিক কেলেঙ্কারি, নিয়মিত অডিট না দেয়া, কেউ কেউ অডিট রিপোর্ট দিলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৈরি করে দেয়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ফিন্যান্স রিপোর্ট (পিইউএফআর) অনুসরণ না করা, নির্ধারিত ২৩ বছর পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া, নিয়মিত সমাবর্তন না করা, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় এক টাকাও বরাদ্দ না রাখা, সনদ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ করা হয়েছে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৬ সালে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিয়োগ দেয়া ভিসি-প্রো-ভিসি এবং কোষাধ্যক্ষ তিনটি পদই পূরণ করেছে। এরমধ্যে ভিসি আছে মাত্র ৪৪টি, প্রো-ভিসি আছে ১৪টি এবং কোষাধ্যক্ষ আছে ৩৪টিতে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য এই তিনটি পদই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বারবার তাগাদা দেয়ার পরও টনক নড়ছে না এসব বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি ভারপ্রাপ্ত ভিসি স্বাক্ষরে সনদ দেয়া হচ্ছে। সমাবর্তন করার জন্য নিয়মিত ভিসি থাকার কথা থাকলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ম্যানেজ করে ভিসি ছাড়াই সমাবর্তন করে নিচ্ছেন। ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, ইসলামি ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে লিখিত আপত্তি দেয় ইউজিসি। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ম্যানেজ করে তারা সমাবর্তন করেছে। 
 
আর্থিক অসঙ্গতির বিষয়টি জোরালোভাবে আপত্তি তুলে ইউজিসি প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আর্থিক অডিট রিপোর্ট জমা দিয়েছে মাত্র ২৫টি। এই ২৫টির একটিও অডিট ফরম পিইউএফআর অনুসরণ করেনি। ২০১৭ সালের অডিট রিপোর্ট জমা দিয়েছে ২৯টি। তাদের কেউ পিইউএফআর ফরম অনুসরণ করেনি। ২০১৫ সালে অডিট রিপোর্ট দাখিলযোগ্য ৮০টির মাত্র ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আর্থিক প্রতিবেদন ইউজিসিতে জমা দেয়। এরমধ্যে মাত্র ৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসরণ করে। অডিট রিপোর্টে আর্থিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আসছে না বলে অভিযোগ ইউজিসির। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত সিএ ফার্মকে দিয়ে না করিয়ে নিজেদের পছন্দের ফার্মকে দিয়ে অডিট করানোর কারণে আর্থিক অনিয়মগুলো ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। ইউজিসি বলছে, যারা অডিট রিপোর্ট দিবে না তাদের বিরুদ্ধে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী, ৪৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অর্থ কমিটির নিয়মিত কোনো সভা না হওয়া, কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ না করা, কোষাধ্যক্ষ থাকলেও মালিকপক্ষের আজ্ঞাবহ করে রেখে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ করছে বিওটি সদস্যরা। অভিযোগ রয়েছে, আইনের তোয়াক্কা না করে বিওটি সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ভুয়া কাগজপত্র স্বাক্ষর জাল করে সংরক্ষিত তহবিলের (ফান্ড) বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আট ক্যাটিগরিতে মোট ১২ জন সিন্ডিকেট সদস্য মিটিংয় নামে সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত সম্মানী নিচ্ছেন। প্রমোদ ভ্রমণের জন্য অনেক সময় বিদেশেও সিন্ডিকেট মিটিং করে। বিভিন্ন বৈঠকের নামে বিওটি সদস্যরা বছরে সম্মানীর নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। কেনাকাটায়ও চলছে অনিয়ম, দুর্নীতি। নানা কৌশলে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের চিত্র ইউজিসি তদন্ত রিপোর্টেও উঠে এসেছে।

No comments